উত্তপ্ত শুনানিতে ক্ষমা চাইলেন জাকারবার্গ

উত্তপ্ত শুনানিতে ক্ষমা চাইলেন জাকারবার্গ

অনলাইন ডেস্ক: সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কারণে সন্তানরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এমন অভিযোগ তোলা পরিবারগুলোর কাছে ক্ষমা চেয়েছেন মেটার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মার্ক জাকারবার্গ। যুক্তরাষ্ট্রের সেনেটের এক উত্তপ্ত জেরায় অংশ নিয়ে ক্ষমা চান তিনি। খবর বিবিসির।
ইনস্টাগ্রাম ও ফেসবুকের মালিক জাকারবার্গ সেনেটে উপস্থিত অভিভাবকদের দিকে তাকিয়ে বলেছেন ‘এমন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে কারো যাওয়া উচিৎ না’। তিনিসহ টিকটক, স্ন্যাপ, এক্স ও ডিসকর্ডের প্রধান কর্মকর্তাদেরকে প্রায় চার ঘণ্টা ধরে উভয় পার্টির সেনেটররা জিজ্ঞাসাবাদ করেন। আইনপ্রণেতারা তাদের কাছে জানতে চেয়েছিলেন যে অনলাইনে শিশুদের সুরক্ষার জন্য তারা কী করছেন। প্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট হর্তাকর্তাদের প্রশ্ন করার এটি একটি বিরল সুযোগ ছিল মার্কিন সেনেটরদের জন্য।
জাকারবার্গ এবং টিকটকের সিইও শাও জি চিউ স্বেচ্ছায় সাক্ষ্য দিতে রাজি হলেও স্ন্যাপ, এক্স (আগের টুইটার) এবং ডিসকর্ডের প্রধানরা প্রাথমিকভাবে তা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। এরপর তাদের প্রতি হাজিরার নির্দেশ জারি করে সরকার। এই পাঁচজন প্রযুক্তি প্রধানের পেছনে বসে ছিল সেসব পরিবারগুলো, যারা বলে যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কন্টেন্টের কারণে তাদের সন্তানরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, বা আত্মহত্যা করেছে।
প্রযুক্তি কর্তারা যখন সেনেট কক্ষে প্রবেশ করছিলেন, তখন পরিবারগুলোকে রাগাণ্বিত দেখাচ্ছিল। সেইসাথে, আইনপ্রণেতারা যখন তাদেরকে কঠিন কঠিন প্রশ্ন করছিল, তখন হাততালি দিচ্ছিল। এই শুনানির প্রধান বিষয়বস্তু ছিল, অনলাইনে যৌন হয়রানি থেকে শিশুদেরকে কীভাবে রক্ষা করা যায়। কিন্তু এর বাইরেও পাঁচ ক্ষমতাশালী প্রযুক্তি কর্তাকে নানা ধরনের প্রশ্ন করা হয়, কারণ সিনেটররা তাদের এভাবে পাওয়ার সুযোগটাকে হাতছাড়া করতে চাননি।
বাইটডান্স নামক একটি চীনা কোম্পানির মালিকানাধীন টিকটক-এর সিইও শাও জি চিউকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে তার প্রতিষ্ঠান অ্যামেরিকান ব্যবহারকারীদের তথ্য চীন সরকারকে দেয় কিনা। উত্তরে তিনি তথ্য পাচারের বিষয়টি ‘অস্বীকার’ করেন। চিউ সিঙ্গাপুরের কিন্তু তারপরও ইউএস সেনেটর টম কটন চিউকে জিজ্ঞেস করেন যে তিনি চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সাথে কখনও যুক্ত ছিলেন কিনা। উত্তরে চিউ বলেন, “সেনেটর, আনি সিঙ্গাপুরিয়ান।” কটন তাকে আবারও জিজ্ঞেস করেন, “আপনি কি কখনও চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সাথে যুক্ত হয়েছেন?” উত্তরে চিউ বলেন, “না, সেনেটর। আমি আবার বলছি, আমি সিঙ্গাপুরিয়ান।”
তিনি বলেন, “তিনটি ছোট সন্তানের বাবা হিসেবে আমি বুঝতে পারছি যে আমরা আজ যে বিষয়টি নিয়ে এখানে আলোচনা করছি, তা ভয়ংকর এবং অনেক বাবা-মায়ের জন্য দুঃস্বপ্ন।” এসময় তিনি এও স্বীকার করেছেন যে তার নিজের সন্তানরা টিকটক ব্যবহার করে না। কারণ হিসেবে তিনি সিঙ্গাপুরের নিয়মকে দায়ী করেন। সেখানকার নিয়ম অনুযায়ী, ১৩ বছরের কম বয়সী কেউ অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবে না। মেটা প্রধান জাকারবার্গকে সবচেয়ে বেশি জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। এই নিয়ে তিনি আটবার কংগ্রেসে সাক্ষ্য দিয়েছেন। একপর্যায়ে, রিপাবলিকান সেনেটর টেড ক্রুজ মেটাপ্রধানকে একটা ইন্সটাগ্রাম প্রম্পট দেখিয়ে জিজ্ঞেস করেন, ” জাকারবার্গ, আপনি কী ভাবছিলেন?”
মূলত এই প্রম্পটির কাজ হলো শিশু যৌন নিপীড়নের দৃশ্য বিষয়ে ব্যবহারকারীদের সতর্ক করা এবং জানতে চাওয়া তারা এটি দেখতে চান কিনা। যদিও জাকারবার্গ এর পেছনে বিজ্ঞানসম্মত কারণ হিসেবে বলেন, তাদের একেবারে ব্লক করে দেওয়ার বদলে এমন কিছুর দিকে ধাবিত করা, যা তাদের জন্য সহায়ক হতে পারে। তারপরও বিষয়টিকে ‘ব্যক্তিগতভাবে দেখার প্রতিশ্রুতি’ দিয়েছেন তিনি।
রিপাবলিকান সেনেটর জোশ হলে’র সাথে আরেকটি মতবিনিময়ের সময় জাকারবার্গকে তার পিছনে বসে থাকা পরিবারগুলোর কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল।
তখন তিনি উঠে দাঁড়ান এবং শ্রোতাদের দিকে ফিরে বলেন, “আপনারা যা কিছুর মাঝ দিয়ে যাচ্ছেন, তার জন্য আমি দুঃখিত। এটি ভয়ানক।” “আপনাদের পরিবার যে যন্ত্রণার মাঝ দিয়ে গেছেন, তা আর কোনও পরিবারের ভোগ করা উচিত নয়।”

editor

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *