উচ্চশিক্ষায় মান বৃদ্ধির পদক্ষেপ জরুরি

উচ্চশিক্ষায় মান বৃদ্ধির পদক্ষেপ জরুরি

আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় উচ্চশিক্ষা ও উচ্চতর গবেষণায় বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। এক্ষেত্রে আমাদের দেশের অবস্থা যে ভালো নয়, তা বৈশ্বিক জ্ঞানসূচকের ফল থেকেই স্পষ্ট। আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত বৈশ্বিক জ্ঞানসূচকে শীর্ষ পর্যায়ে থাকা। কিন্তু দেশের উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে যে পরিবেশ বিরাজমান, তাতে শীর্ষ পর্যায়ে থাকা সম্ভব নয়। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে গবেষণা হচ্ছে কম, পাঠদানেও রয়েছে ঘাটতি। মোটকথা, খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে এসব প্রতিষ্ঠান। দেশের বহু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকটের পাশাপাশি আছে অবকাঠামোগত সমস্যাও। উন্নত দেশের তুলনায় আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কম অর্থে পরিচালনা করতে হচ্ছে। কাজেই বরাদ্দকৃত অর্থের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার করা হবে, এটি প্রত্যাশিত হলেও বাস্তব পরিস্থিতি ভিন্ন। কোনো কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা উপায়ে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার প্রতিযোগিতাও চলছে। বেতন-ভাতা থেকে শুরু করে বিভিন্ন কাজের সম্মানির ক্ষেত্রে এসব ঘটছে। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের বিধিকে ঢাল হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

সম্প্রতি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক অনিয়মের ওপর একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে ইউজিসি। এতে দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বেশকিছু খাতে বিধিবহির্ভূত আর্থিক সুবিধা নেওয়া হয়েছে। জানা গেছে, অন্তত কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ড্রাইভারদের ‘টেকনিক্যাল অফিসার’ দেখিয়ে উপসচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তার সমান বেতন-ভাতা দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের কেউ বিশেষ ভাতা, কেউবা দায়িত্ব ভাতার নামে বেতনের অতিরিক্ত অর্থ নিচ্ছেন। কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ উঠলে কর্তৃপক্ষ ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অনুযায়ী সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেবে, এটাই কাম্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে যদি আত্মসম্মানবোধের অভাব থাকে, এর চেয়ে দুঃখজনক আর কী হতে পারে?

এসব ক্ষেত্রে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থা আরও করুণ। নিজস্ব ক্যাম্পাসের পাশাপাশি প্রয়োজনীয়সংখ্যক শিক্ষক, পাঠাগার ও গবেষণাগারসহ সমন্বিত পাঠদানের জন্য আনুষঙ্গিক সবকিছুই একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকা প্রয়োজন। অথচ বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, বিপণি বিতান, বাসস্ট্যান্ড, আবাসিক এলাকার ভবনে গড়ে ওঠা অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের না আছে বিষয়ভিত্তিক প্রয়োজনীয় শিক্ষক, না আছে জ্ঞানচর্চার মুক্ত পরিবেশ। এসব কারণে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষা ও গবেষণায় কাঙ্ক্ষিত ভূমিকা রাখতে পারছে না। এসবের ফলে উন্নত হচ্ছে না শিক্ষার মান। কোনো কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নানা কৌশলের আড়ালে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ‘গলাকাটা’ ফি আদায় করলেও মানসম্মত শিক্ষা প্রদানের জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছে না। যারা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত থাকেন, তারা উন্নত নীতি-নৈতিকতার পরিচয় দেবেন, এটি প্রত্যাশিত হলেও বাস্তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে এর ব্যত্যয় ঘটছে। উদ্বেগজনক হলো, কোনো কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নানা ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতিতেও জড়িত। বর্তমানে ৩৯টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নেই; উপউপাচার্য নেই ৭২টিতে আর কোষাধ্যক্ষ নেই ৪৩টিতে।

এসব তথ্য থেকেই বোঝা যায়, উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাপকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। দুঃখজনক হলো, এসব ক্ষেত্রে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির ভূমিকাও সন্তোষজনক নয়। বিরাজমান অনিয়ম, দুর্নীতি ও বিশৃঙ্খলা দূর করে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা ও গবেষণার পরিবেশ নিশ্চিত করতে কর্তৃপক্ষ দৃঢ় মনোভাবের পরিচয় দেবে, এটাই প্রত্যাশা।

editor

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *