আগ্রহ বেড়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায়

আগ্রহ বেড়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায়

দেওয়ানবাগ ডেস্ক: বাংলাদেশে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা এআই (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) নিয়ে সেবাগ্রহীতাদের মধ্যে দিন দিন আগ্রহ বাড়ছে। এক্ষেত্রে দেশের তরুণ উদ্যোক্তারা এগিয়ে এসেছেন। বেসরকারি খাতে এর ব্যবহার বেশি হলেও সরকারি খাতও পিছিয়ে নেই। দেশের টেলিযোগাযোগ, কৃষি, মোবাইল ফোন অপারেটর, ব্যাংক, স্বাস্থ্য ও অনলাইন খাতসহ অনেক খাতে এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার হচ্ছে। দেশের বাইরের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানও বাংলাদেশ থেকে এআই সেবা নিচ্ছে। ফলে ক্রমেই এর ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ছে। বর্তমানে ১৫টির বেশি বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান গ্রাহকদের এআই সেবা দিচ্ছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলো দেশের বাইরেও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মেশিন লার্নিং টুলস রপ্তানি করছে। বিশেষজ্ঞসহ এ খাতের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ১০ বছর পর দেশে এআই প্রযুক্তির ব্যবহার উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাবে এবং আসছে দিনে যারা এই প্রযুক্তি ব্যবহার করবে না তারা পিছিয়ে পড়বে। বাংলাদেশের মিডিয়া জগতে এরই মধ্যে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা এআইয়ের (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) ব্যবহার শুরু হয়েছে। প্রথমবারের মতো একটি টিভি চ্যানেলে এআই সংবাদ পাঠিকা ‘ধপরাজিতা’কে ব্যবহার করা হয়েছে। চলতি বছরের জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে সেই নিউজ সম্প্রচার করা হয়। কৃষিখাতেও এখন এআই-এর ব্যবহার হচ্ছে। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) এই প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। হিমাগারে এআই ব্যবহার হচ্ছে। এছাড়া দেশের বৃহৎ উৎপাদন ও রপ্তানি খাত এরই মধ্যে নিজেদের প্রয়োজনে এআই প্রযুক্তি সমর্থিত রোবট ব্যবহার শুরু করেছে। বিভিন্ন খাতের মধ্যে টেক্সটাইল, আরএমজি, ফার্মাসিউটিক্যালস, হেলথকেয়ার, লজিস্টিকস এবং ওয়্যারহাউজিং, অটোমটিভ এবং কিছু সেবা খাত এরই মধ্যে এই প্রযুক্তি ব্যবহার শুরু করেছে। এই খাতের সংশ্লিষ্টরা প্রতিযোগিতা সক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে এআই ব্যবহার করছে। এর বাইরে কিছু নন-ট্র্যাডিশনাল খাত যেমন ইলেকট্রিক্যাল, ইলেকট্রনিকস, কনস্ট্রাকশন, প্লাস্টিক এবং প্যাকেজিং, এফএমসিজি, সিকিউরিটি, ফার্নিচার শিল্প এরই মধ্যে এআই সহায়ক রোবট ব্যবহার করছে।


তরুণদের যারা এআই নিয়ে কাজ করছে তাদের অধিকাংশই বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস)-এর অধীনে কাজ করছে। তবে বেসিস ছাড়াও বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল, সরকারের এটুআই প্রকল্পসহ আরও কিছু প্রতিষ্ঠান এআই নিয়ে কাজ করতে উৎসাহিত করছে। মূলত এর সেবাগ্রহীতারা তাদের উৎপাদিত পণ্যের গুণমান বজায় রাখতে, নির্ভুলতা বজায় রাখতে এবং প্রতিযোগিতার সক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারে বাড়তি বিনিয়োগ করছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, বাংলাদেশে এখন ১৫টির বেশি প্রতিষ্ঠান গ্রাহকদের এআই সেবা দিচ্ছে। এর বাইরে বড় বড় বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান নিজস্ব পণ্য উৎপাদনের ব্যাপারে এই প্রযুক্তি কাজে লাগাচ্ছে। তবে এই প্রযুুক্তি ব্যবহারে মানুষের কর্মসংস্থান হারানোর ঝুঁকি রয়েছে। তারা আরও বলেন, এআই বলতে মূলত একটি রোবটের সিদ্ধান্ত নেওয়ার অংশকে বোঝানো হয়। অর্থাৎ একটি কাজ রোবট কীভাবে করবে সে বিষয়ে যে সিদ্ধান্ত নেবে সেটাই হচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। যেখানেই বুদ্ধির ব্যাপার সেটি যদি একটি যন্ত্রকে শেখানো হয় তখন এর সিদ্ধান্ত গ্রহণের যে ক্ষমতা সেটিই হবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। এআই সেবাদাতাদের মধ্যে বাংলাদেশের অন্যতম প্রতিষ্ঠান ইন্টেলিজেন্স মেশিনস লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও মো. অলি আহাদ বলেন, যে কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে মানুষ তার বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে যা করে তা যদি একটি যন্ত্রকে শেখানো হয় তখন এটিকে অনেক দক্ষভাবে গড়ে তোলা যায়। দেশের বড় বড় পোশাক কারখানাগুলোতে পোশাকের মান নিশ্চিতের জন্য শত শত লোক থাকার পরও সর্বোচ্চ ৬০ শতাংশ মান বজায় রাখা সম্ভব হয়। কিন্তু একই কাজ একটি যন্ত্র বা একাজে কৃত্রিম বৃদ্ধিমত্তা ব্যবহার করা হলে কম সময় ও ব্যয়ে আরও দক্ষভাবে কাজটি নিশ্চিত করা যাবে। ২০১৮ সালে যখন আমরা বিকাশের সঙ্গে কাজ শুরু করি তখন বিকাশ ১ লাখ ১৫ হাজার দোকানে পোস্টার, ব্যানার ইত্যাদি লাগাত। এই কাজ করতে তাদের ৮২৬ জন লোক লাগত। আর এখন এআই এর সহায়তায় কখন কোন দোকানে কীভাবে যাবে সে সিদ্ধান্ত নেওয়ায় এখন ৮ লাখ ২৫ হাজারেরও বেশি দোকানে মাত্র ১ হাজার ৪১০ জন দিয়ে সেই কাজ করা হচ্ছে। এতে সময় ও পরিশ্রম দুটোই সাশ্রয় হচ্ছে। এ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বিকাশের সাড়ে ৪ হাজারের মতো কর্মীর বেতন সাশ্রয় হয়েছে। এরই মধ্যে আমরা বিকাশ ছাড়াও ইউনিলিভার, আইডিএলসি, প্রাইম ব্যাংক, টেলিনরসহ কাতার, অস্ট্রেলিয়া, ইউএসএ, দুবাই, সিঙ্গাপুরসহ দেশ-বিদেশের বিখ্যাত ১৬টি বড় প্রতিষ্ঠানকে সেবা দিয়ে যাচ্ছি। দেশের বাজারে এখন পর্যন্ত টেলিকম, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও উৎপাদনশীলসহ বিভিন্ন খাত এ প্রযুক্তির সেবা নিচ্ছে। সরকারিভাবে এটুআই টিম আমাদের থেকে শিক্ষাবিষয়ক সেবা নিচ্ছে।

editor

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *