স্রষ্টাকে পেতে হলে আত্মাকে পরিশুদ্ধ করা অপরিহার্য। -ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা

স্রষ্টাকে পেতে হলে আত্মাকে পরিশুদ্ধ করা অপরিহার্য। -ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা

বিশেষ সংবাদদাতা: আত্মশুদ্ধি হচ্ছে নিজের আত্মাকে পরিশুদ্ধ করা। আল্লাহর বন্ধু শাহ দেওয়ানবাগী আমাদেরকে ৪টি শিক্ষা দিয়েছেন যথা-আত্মশুদ্ধি, দিলজিন্দা, নামাজে হুজুরি ও আশেকে রাসুল হওয়া। প্রথম শিক্ষা হচ্ছে আত্মশুদ্ধি তথা আত্মাকে পরিশুদ্ধ করা। পৃথিবীতে শুধু সূফী সম্রাট হযরত শাহ দেওয়ানবাগী হুজুর কেবলাজান (রহ.) এই শিক্ষা দেননি; ইমাম সৈয়দ আবুল ফজল সুলতান আহমদ চন্দ্রপুরী (রহ.), খাজা এনায়েতপুরী (রহ.), বড় পির আব্দুল কাদের জিলানি (রহ.), হযরত বাহাউদ্দিন নকশবন্দ (রহ.), হযরত মোহাম্মদ মুস্তফা আহমদ মোজতবা (সা.), হযরত ইব্রাহিম (আ.), হযরত মুসা (আ.), হযরত ঈসা (আ.)- আপনি যদি তাদের প্রত্যেকের ইতিহাস তালাশ করেন দেখবেন তাদের একটি কমন শিক্ষা ছিল-আত্মশুদ্ধি। আল্লাহর বন্ধু শাহ দেওয়ানবাগী (রহ.) এই ৩টি শিক্ষার সাথে একটি শিক্ষা যোগ করছেন- আশেকে রাসুল হওয়া। এই শিক্ষাগুলো যথা- আত্মশুদ্ধি, দিলজিন্দা ও নামাজে হুজুরীর। তাহলে এটি নতুন কোনো উদ্ভাবন নয়; এটি তখন থেকে শুরু হয়েছে এখনো চলছে। তাই স্রষ্টাকে পেতে হলে আত্মাকে পরিশুদ্ধ করা অপরিহার্য।

গত ১৯ আগস্ট, শুক্রবার সাপ্তাহিক আশেকে রাসুল (সা.) মাহফিলে অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে মোহাম্মদী ইসলামের নেতৃত্বপ্রদানকারী মহামানব ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুর বক্তব্য প্রদানকালে এ কথা বলেন।

মোহাম্মদী ইসলামের নেতৃত্বপ্রদানকারী মহামানব ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুর বলেন, আত্মশুদ্ধি মানে হচ্ছে নিজেকে পরিশুদ্ধ করার নাম। যার মিথ্যা কথা বলার অভ্যাস আছে তাকে মিথ্যা ছাড়তে হবে, যার খারাপ কাজ করার অভ্যাস আছে, নারী বা পুরুষের সাথে যার অন্যায় করার অভ্যাস আছে তাকে সেটা ত্যাগ করতে হবে, এর নাম সেল্ফ পিউরিফিকেশন বা আত্মশুদ্ধি; যার জুলুম করার অভ্যাস আছে তাকে জুলুম ত্যাগ করতে হবে, যার হিংসা করার অভ্যাস আছে তাকে হিংসা ত্যাগ করতে হবে, যার ক্রোধ বেশি, নিজের ক্রোধ যার কন্ট্রোলে নেই তিনি কন্ট্রোল হয়ে অন্যায়, অপরাধ মুক্ত হন, তার জন্যে এর নাম আত্মশুদ্ধি; যিনি পাপ কাজে লিপ্ত আছেন, তার পাপমুক্ত হওয়ার নাম হচ্ছে আত্মশুদ্ধি। তাহলে আত্মশুদ্ধি হচ্ছে নিজেকে পরিশুদ্ধিত করা। অর্থাৎ নিজেকে চরিত্রবান বানানো। মানুষের মধ্যে যেই রিপুগুলো আছে-কাম, ক্রোধ, লোভ, মদ, মোহ, মাৎসর্য; এই যে ৬টি রিপু, এই ৬টি রিপুকে দমন করা। এই ৬টি রিপুর প্রভাবেই পৃথিবীতে যত পাপ কাজ হয়, যত অন্যায় হয়, যত অবিচার হয়। মূলত এই অন্যায়গুলো থেকে নিজেকে বের করা এবং নিজেকে চরিত্রবান বানানোর নাম হচ্ছে আত্মশুদ্ধি।

ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুর বলেন, যদি একজন আশেকে রাসুল তার আত্মাকে পরিশুদ্ধ করতে না পারে, তাহলে তিনি যতই বলুক আমি আশেকে রাসুল, আসলে তিনি আশেকে রাসুল হতে পারবে না। তেমনিভাবে আপনি যখন নিজের খারাপ কাজগুলোকে দূরীভূত না করবেন, নিজের অন্যায়কে দূরীভূত না করবেন আপনি যতই নামাজ পড়ুন, যতই রোজা রাখুন, যতই ইবাদত করুন আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন হবে না। দেখা গেলো ৫ বছর নামাজ, রোজা, মোরাকাবা করলেন আর এমন একটি কাজ করলেন ৫ বছর পরেও মালিকের সাথে নাফরমানি করলেন, ৫ বছরের ইবাদত গেল শূন্যে, আপনি গেলেন জাহান্নামে। অলী-আল্লাহগণ এসে মানুষকে শুধুমাত্র বলেনি মোরাকাবা করো, বলেনি ইবাদত করো; বলেছেন চরিত্রবান হও। চরিত্রবান হওয়ার জন্যে নামাজ পড়তে হয়, মোরাকাবা করতে হয়, সাধনা-আরাধনা করতে হয়। তবে মূল লক্ষ্য হচ্ছে চরিত্রবান হয়ে নিজের মাঝে মালিককে খুঁজে বের করা। যিনি নিজের মাঝে মালিককে খুঁজে বের করতে পারবেন মূলত তিনিই আল্লাহওয়ালা। তাহলে এই সকল শিক্ষার মৌলিক শিক্ষা হচ্ছে আত্মশুদ্ধি।

তিনি বলেন, আত্মা ২ প্রকার, যথা-জীবাত্মা এবং পরমাত্মা। পরমাত্মা হলো আল্লাহময় জগত আর জীবাত্মা হলো পশুর দ্বারা চালিত। জীবাত্মাকে পরিশুদ্ধিত করা, নিজের ভিতরে পরমাত্মার রাজত্ব কায়েম করা। পরমাত্মা যখন শক্তিশালী হয় জীবাত্মা দুর্বল হয়ে আসে। পরমাত্মা যখন আরও বেশি শক্তিশালী হয়, জীবাত্মা একেবারে নিচু হয়ে যায়। আল্লাহর বন্ধু শাহ্ দেওয়ানবাগী তার বক্তব্যে একেই বলেছিলেন যে, জীবাত্মাকে মুসলমান বানাতে হয়। আর মানুষের পাপের প্রভাবে, অন্যায়ের প্রভাবে পরমাত্মা আস্তে আস্তে সংকোচিত হয়ে যায়, জীবাত্মা অনেক শক্তিশালী হয়ে যায়। তখন আপনি আউট অফ কন্ট্রোল হয়ে যান। এই জীবাত্মার প্রভাবের কারণে আজকে সমাজে দেখুন পুলিশ আছে, উকিল আছে; ঢাকা বারেইতো প্রায় ২০/২২ হাজার লইয়ার আছে তারপরেও মামলার সিরিয়াল পাওয়া যায় না, এতো মামলা। কি কারণে এতো মামলা? এতো মামলা হয়েছে কেন কারণ আমরা জীবাত্মার প্রভাবে সমাজকে এতোবেশি ধ্বংস করে ফেলেছি, যার জন্য আমরা আমাদের বিশ্বাস করতে পারি না। এখন তৃতীয়পক্ষকে ধরে আনতে হয় আমাদের কাছে, “তুমি রায় দিয়ে দাও; তোমার রায় মানা ছাড়া আমার রাস্তা নেই।” আমাদের অবস্থা বর্তমানে এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে। আপনাকে পরিশুদ্ধিত করা এবং আপনার মাঝে আল্লাহর অনুসন্ধান করে আল্লাহকে খুঁজে বের করে দেওয়া হলো আমার কাজ। আমি যদি সেটা করে দেই আমার সার্থকতা। আর আমি যদি সেটা না পারি তাহলে আমার দূর্ভাগ্য আপনাকে আমি মুরিদ হিসেবে তরিকায় নিয়েছি। কুলাঙ্গার কিছু ছাত্র আমার তরিকায় ঢুকেছে। সেজন্য আমি প্রত্যেক আশেকে রাসুল ভাই ও বোনের কাছে উদাত্ত আহ্বান জানাই, চলুন না আমরা নিজেদেরকে চরিত্রবান হওয়ার শিক্ষা নেই; নিজেদের আল্লাহ্ ও রাসূলের পথে ধাবিত করি; আত্মাকে পরিশুদ্ধিত করে পাপ-পঙ্কিলতা থেকে মুক্ত হয়ে নিজেকে চরিত্রবান বানাই। তাহলে তো আমরা আল্লাহকে পাবো। এটিই শাহ দেওয়ানবাগীর স্বপ্ন। এটি কি শুধু শাহ দেওয়ানবাগীর স্বপ্ন? আদম (আ.) থেকে যত নবী-রাসুল এসেছেন, পরবর্তীতে যত অলী-আল্লাহ্ এসেছেন সবাইতো এই স্বপ্ন নিয়েই এসেছিলেন। মানুষকে চরিত্রবান বানানো; মানুষকে আল্লাহর আনুগত্য করার ও মানুষের মাঝে আল্লাহকে খুঁজে বের করা, এর নামইতো ধর্ম।

প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুর বলেন, আল্লাহ্ দুশ্চরিত্র মানুষের কাছে আসবে না। সৎ চরিত্রবান মানুষই আল্লাহকে খুঁজে পাবে। শাহ্ দওয়ানবাগীর কথা, “ব্যক্তিশুদ্ধ হলে সমাজ শুদ্ধ হয়।” ব্যক্তিকে পরিশুদ্ধ না করে আপনি সমাজকে শুদ্ধ করতে পারবেন না। তাই নিজেকে পরিশুদ্ধ করি, আত্মাকে পরিশুদ্ধ করি। আজকে যারা তরিকায় থেকে সমালোচনা করছেন; দেওয়ানবাগীর মুরিদ হয়ে আমার সমালোচনা করছেন; আজকে যারা দেওয়ানবাগীর মুরিদ হয়ে একে অপরকে নিন্দার সাথে জড়াচ্ছেন, যারাই এই কাজের সাথে লিপ্ত আছেন আপনি তাকিয়ে দেখুন, তাদের আত্মা পরিশুদ্ধ নেই। তরিকায় সামিল হয়েছে অথচ নিজের ভিতরের পশুকে মানুষ বানাতে পারে নি। ঐ পশুর কারণেই কারো হিংসা, কারো ক্রোধ, লোভেই তারা আজ বিভিন্নভাবে নিজেরা বিপদে পড়েছেন এবং চেষ্টা করছেন আশেকে রাসূলদের ভুল পথে নিয়ে আল্লাহ্ ও রাসূলের পথ থেকে সরিয়ে নিতে। অনেকেই বলেন, আমরা তরিকাকে আগাচ্ছি! আসলে তরিকা কখনো আগাবে না। তরিকা তরিকার জায়গায়ই থাকে, আগায় আশেকে রাসূলগণ। দুশ্চরিত্র আশেকে রাসূল এগিয়ে আসলে সমাজ হবে দুশ্চরিত্রের আর সৎ চরিত্র আশেকে রাসূল যদি এগিয়ে আসে সমাজ হবে সৎ। তাই আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব নিজেকে চরিত্রবান বানানো।

ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুর বলেন, আমার দ্বিতীয় গ্রন্থ ‘মোহাম্মদী ইসলামের তালিম’ বইটি করার চেষ্টা করছি। অনেক বিস্তারিত লিখেছি, আমি আশা করছি এটি খুব শীঘ্রই আপনাদের হাতে পৌঁছবে। আমি দোয়া করি, আমার মালিক আপনাদের সবাইকে হেফাজত করুক; আমি আমার মালিকের কাছে আপনাদের জন্য সাহায্য চাই, আমার মালিক যাতে দয়া করে আপনাদের সবাইকে কবুল করে নেন এবং আপনাদের নূরে ইমান ভিক্ষা দেন। যে সকল দরবার শরীফ থেকে, যে সকল খানকাহ্ শরীফ থেকে, যে সকল জাকের মজলিস থেকে, যে সকল বাড়ি-বাড়ি থেকে আপনারা আজ আমাদের সাথে সংযুক্ত হয়েছেন, কি বলে ধন্যবাদ দিবো? এইটুকু বলতে চাই! আমার সার্থকতা সেই দিন, যেদিন আপনাকে আল্লাহকে পাওয়াতে পারি; আমার সার্থকতা সেই দিন, যেদিন আপনি নিজের ভিতরে আল্লাহকে দেখতে পারবেন; আমার সার্থকতা সেই দিন, আপনার কবর অন্ধকার হবে না, আপনার কবর হবে আলোকিত কবর। আমি আমার মালিকের কাছে সাহায্য চাই, তিনি যেন দয়া করে আমাদের সবাইকে তার ইচ্ছায় তার দয়ায় পরিচালিত হওয়ার সুযোগ করে দেন।

পরিশেষে মোহাম্মদী ইসলামের নেতৃত্বপ্রদানকারী মহামানব, ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুর তাঁর বাণী মোবারক প্রদান শেষে আখেরি মোনাজাত প্রদান করেন।

editor

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *