বাড়ছে অপ্রয়োজনীয় সিজার

বাড়ছে অপ্রয়োজনীয় সিজার

দেওয়ানবাগ ডেস্ক: দেশে অপ্রয়োজনীয় সিজারিয়ান (সি-সেকশন) শিশুর জন্ম বাড়ছে। মানুষের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি ও আধুনিক চিকিৎসাব্যবস্থার কারণে এটি হচ্ছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক আব্দুর রাজ্জাক সরকার। বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ‘ম্যাসিভ বুম অব সিজারিয়ান ডেলিভারি ইন বাংলাদেশ (২০০৪-২০১৮)’ শীর্ষক জরিপ প্রতিবেদনের বিশ্লেষণে তিনি এই মন্তব্য করেন।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ১৪ বছরে সিজারিয়ান ডেলিভারির বেড়েছে ২৮.২৩ শতাংশ। ২০১৭-১৮ সালের হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে এই হার ৩২.২২ শতাংশ। ২০০৩-০৪ সালের দিকে এটি ছিল ৩.৯৯ শতাংশ।
তবে সেভ দ্য চিলড্রেনের ২০১৯ সালের প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে সিজারিয়ান ডেলিভারির হার ৪৪ শতাংশ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশে সিজারিয়ান ডেলিভারির যে হার উল্লেখ রয়েছে, তার চেয়ে বাংলাদেশে ২৯ শতাংশ বেশি সিজারিয়ান ডেলিভারি হচ্ছে। জরিপে উঠে এসেছে, গত পাঁচ বছরে সিজারিয়ান ডেলিভারির হার ৩৩ শতাংশ বেড়েছে এবং নরমাল ডেলিভারি ৩১ শতাংশ কমেছে, যা সত্যিই উদ্বেগের। সেভ দ্য চিলড্রেনের তথ্য বলছে, ২০১৮ সালে এক বছরে বাংলাদেশে অপ্রয়োজনীয় সিজার হয়েছে আট লাখ ৬০ হাজার।
গত ২৯ আগস্ট স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জাতীয় সংসদে বলেছেন, বর্তমানে দেশে সন্তান প্রসবের ক্ষেত্রে নরমাল ডেলিভারির হার ৬৯ শতাংশ এবং সিজারিয়ান ৩১ শতাংশ।

বিআইডিএসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০৩-০৪ সালে গ্রামাঞ্চলে সিজার করে বাচ্চা হওয়ার হার ছিল ১.৯৭ শতাংশ, শহরে ১১.৭২ শতাংশ। ২০১৭-১৮ সালে এই হার বেড়ে গ্রামে ২৯.১৮ শতাংশ এবং শহরে ৪৪.২৪ শতাংশ হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে বছরে যেখানে ৩২.২২ শতাংশ ডেলিভারি হয় সিজারে, সেখান একই সময়ে ভারতে ২২ শতাংশ, পাকিস্তানে ২২ শতাংশ, নেপালে ১৬ শতাংশ ও মিয়ানমারে ১৭ শতাংশ। এ প্রতিবেদন তৈরিতে বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড হেলথ সার্ভে-বিডিএইচএস ২০০৪ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে সিজার করা নারীদের থেকে তথ্য নেওয়া হয়েছে। ২৭ হাজার ৩২৮ জন নারীর মধ্যে এ জরিপ চালানো হয়। তাদের বয়স ১৫ থেকে ৪৯ বছরের মধ্যে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সিজারের মাধ্যমে সন্তান জন্ম দিতে বিভাগীয় পর্যায়ে সিলেটে সরকারি হাসপাতালে ব্যয় হয় ১৭ হাজার ৮৩৭ টাকা, বেসরকারিতে ৩০ হাজার ৫৫৭ টাকা এবং এনজিওর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ২১ হাজার ৪৭৬ টাকা। ঢাকায় সরকারি হাসপাতালে ১৩ হাজার ৩৮৩ টাকা, বেসরকারিতে ২৩ হাজার ১৬৯ টাকা এবং এনজিওতে খরচ ২০ হাজার ৪৯৮ টাকা। চট্টগ্রামে সরকারি হাসপাতালে ১৫ হাজার ৮৩১ টাকা, বেসরকারিতে ২৫ হাজার ৫০৭ টাকা এবং এনজিওতে ১৫ হাজার ২৫৯ টাকা।

আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘বাংলাদেশে সরকারি হাসপাতালে রোগীদের নিজেদের পকেট থেকে খরচ হয় ৬৫ শতাংশ অর্থ। বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিকে শতভাগই তাদের পকেট থেকে যায়। সরকারি চিকিৎসকরাই বেসরকারি হাসপাতালে চাকরি করছেন, তাঁরাই বেসরকারিভাবে সিজার করছেন। ডেলিভারিতে ধনী-গরিব সবার সমান অর্থ ব্যয় হয়। ’
এ সময় বিআইডিএসের মহাপরিচালক বিনায়ক সেন বলেন, ‘বাড়িতে ডেলিভারি এখন আর তেমন হয় না। আমরা প্রাতিষ্ঠানিক হচ্ছি। কিন্তু কোথায় যাওয়া হচ্ছে? দেখা যায়, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিকে নেওয়া হচ্ছে। আর এসব কারণেই বাড়ছে সিজার হওয়া শিশুর সংখ্যা। এ ক্ষেত্রে অর্থনৈতিকভাবে মানুষ যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তেমনি শারীরিকভাবেও নানা অসংগতির শিকার হচ্ছে। মায়েদের কর্মক্ষমতা কমে যায়। এ বিষয়ে গবেষণা করা জরুরি। ’

editor

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *