আবু তাশফিন: পবিত্র কুরআনে বর্ণিত ঐতিহাসিক একটি জাতি ইহুদি জাতি। মহান আল্লাহ তাদেরকে তাদের সময়ে শ্রেষ্ঠ জাতি করেছিলেন, তবে তাদের অপরাধপ্রবণতা, ঔদ্ধত্য আচরণ ও অহমিকার কারণে তারা বিরাগভাজন হয় এবং পৃথিবীর সবচেয়ে নিপীড়িত জাতিতে পরিণত হয়। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে বনি ইসরাঈল, আমার অনুগ্রহগুলো স্মরণ কোরো, যা আমি তোমাদের দিয়েছিলাম এবং আমি তোমাদের সারা বিশ্বে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছিলাম।’ (সূরা বাকারা ২: আয়াত ৪৭)
কিন্তু ষড়যন্ত্র, বেইমানি, গাদ্দারি, মিথ্যা ছড়ানো, আসমানি কিতাবে বিকৃতি, অহংকার, কপটতা, অর্থলোভ ও নবীদের শানে চরম বেয়াদবি তাদের অভিশপ্ত জাতিতে পরিণত করেছে।
তারা এমনই দুর্ভাগা জাতি, যাদের হাত বহু নবির রক্তে রঞ্জিত হয়েছে। আল্লাহর পথে আহ্বানকারী বহু নেককার মানুষ তাদের ষড়যন্ত্র ও জুলুমের শিকার হয়েছে। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা আল্লাহর নিদর্শনাবলি অস্বীকার করে, অন্যায়ভাবে নবিদের হত্যা করে এবং যারা ওই সব মানুষকে হত্যা করে, যারা ন্যায়বিচারের নির্দেশ দেয়, আপনি তাদের কঠিন শাস্তির সুসংবাদ দিন।’ (সুরা আলে ইমরান ৩: আয়াত ২১)
অন্য আয়াতে মহান আল্লাহ ইহুদি জাতিকে উদ্দেশ করে তাদের বর্বরতার ব্যাপারে বলেন, ‘আমি মুসাকে কিতাব দিয়েছি এবং তারপরে ক্রমান্বয়ে রাসুলদের প্রেরণ করেছি, মরিয়মপুত্র ঈসাকে সুস্পষ্ট প্রমাণ দিয়েছি এবং জিবরাঈলের মাধ্যমে তাকে শক্তিশালী করেছি। যখনই কোনো রাসুল এমন কিছু এনেছে যা তোমাদের পছন্দ নয়, তখনই তোমরা অহংকার করেছ এবং একদল নবীকে তোমরা অস্বীকার করেছ, একদল নবীকে হত্যা করেছ।’ (সুরা বাকারা ২: আয়াত ৮৭)
যেমন, হযরত মুহাম্মাদ (সা.) ও হযরত ঈসা (আ.)-কে মিথ্যাবাদী বলেছে এবং হযরত জাকারিয়া ও ইয়াহইয়াহ (আ.)-কে হত্যা করেছে। আমাদের নবীজি এবং ঈসা (আ.)-কেও যে তারা হত্যা করার চেষ্টা করেনি, বিষয়টা তা নয়, তারা ঈসা (আ.)-কে হত্যা করার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু মহান আল্লাহ তাদের সেই চেষ্টা বৃথা করে দেন। যদিও তারা মনে করে যে তারা সফলভাবে তাঁকে হত্যা করেছে।
পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে-এবং তাদের এ কথার কারণে যে ‘আমরা আল্লাহর রাসুল মরিয়মপুত্র ঈসা মাসিহকে হত্যা করেছি।’ অথচ তারা তাকে হত্যা করেনি এবং তাকে শূলেও চড়ায়নি। বরং তাদেরকে ধাঁধায় ফেলা হয়েছিল। আর নিশ্চয় যারা তাতে মতবিরোধ করেছিল, অবশ্যই তারা তার ব্যাপারে সন্দেহের মধ্যে ছিল। ধারণার অনুসরণ ছাড়া এ ব্যাপারে তাদের কোনো জ্ঞান নেই। আর এটা নিশ্চিত যে তারা তাকে হত্যা করেনি। (সুরা নিসা ৪: আয়াত ১৫৭)
আমাদের প্রিয় নবীজি (সা.)-কেও তারা খাবারে বিষ মিশিয়ে হত্যা করার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু মহান আল্লাহর দয়ায় তারা সফল হয়নি। (বুখারি, হাদিস: ৩১৬৯)
কোনো কোনো বর্ণনা মতে, অভিশপ্ত বনি ইসরাঈলের হাতে নিহত নবীর সংখ্যা শতাধিক ছিল। এ বিষয়ে বিখ্যাত সাহাবি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত সূত্রে জানা যায়, বনি ইসরাঈলের ৩০০ আল্লাহর নবীকে হত্যা করেছে। (তাফসিরে ইবনে আবি হাতেম: ১/১২৬, তাফসিরে বয়ানুল কোরআন: ২/৩৬৭-৩৬৮)
তাদের এসব অভ্যাস তাদেরকে কিয়ামত পর্যন্ত অভিশপ্ত করে তুলেছে। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর যখন তোমার রব ঘোষণা দিলেন, অবশ্যই তিনি তাদের ওপর কিয়ামতের দিন পর্যন্ত এমন লোকদের পাঠাবেন, যারা তাদেরকে আস্বাদন করাবে নিকৃষ্ট আজাব। নিশ্চয় তোমার রব আজাব প্রদানে খুব দ্রুত এবং নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা আরাফ ৭: আয়াত ১৬৭)
যার নজির বিশ্ববাসী বহুবার দেখেছে, এই জাতি তাদের ভ্রষ্টতার দরুন বহু শক্তিশালী বাহিনীর হাতে চরমভাবে নিপীড়িত হয়েছে এবং বর্তমান যুগেও তারা যতই শক্তি সঞ্চয় করছে, ততই তাদের বিপদ তাদের দিকে ধেয়ে আসছে। নবীজি (সা.) বলে গেছেন, কিয়ামতের আগে ইহুদিদের এত শোচনীয় অবস্থা হবে যে তারা পাথরের পেছনে লুকিয়ে আশ্রয় নিলেও সেই পাথর তাদের শত্রুপক্ষকে তাদের সন্ধান জানিয়ে দেবে। (মুসলিম, হাদিস: ৭২২৭)