এসএম আব্দুল হালিম
জামালপুর জেলার মেলান্দহ উপজেলার দুরমুঠ এলাকায় হযরত শাহ কামাল (রহ.)-এর মাজার শরীফ। যুগ যুগ ধরে এখানে প্রতি বছর ১লা বৈশাখ থেকে শুরু হয়ে শেষদিন পর্যন্ত এক মাসব্যাপী ওরস শরীফ হয়। ওরস চলাকালে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বহু ভক্তের রেল ও সড়ক পথে আগমন ঘটে। মনের কামনা-বাসনা পূরণের জন্য তারা মানত করা শিরনি, ফিন্নি, পায়েস, খিচুড়ি, বিরিয়ানি ফকির মিসকিন, মুসাফির ও ভক্তবৃন্দের মাঝে বিতরণ করে থাকেন। সেই সময় তাদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো জামালপুর।
‘গণ ইতিবৃত্ত’ গ্রন্থে আলহাজ গোলাম মোহাম্মদ লিখেছেন, হযরত শাহ কামাল (রহ.) মেলান্দহের দুরমুঠ অবস্থানকালের পূর্বেই তিনি ইস্পানদিয়ার খান গাজী এবং রাজা মহেন্দ্র নারায়ণ কর্তৃক জায়গীর প্রাপ্ত হন। তৎকালীন ভারতের রাজা মহেন্দ্র নারায়ণের পুত্র ভগদেব কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। রাজা মহেন্দ্র নারায়ণ পুত্রের বহু চিকিৎসার পর ব্যর্থ হয়ে প্রখ্যাত এ অলীর শরণাপন্ন হন। হযরত শাহ্ কামাল (রহ.) রাজপুত্র ভগদেবের সুস্থতার জন্য দোয়া করলে তাৎক্ষণিক সে সুস্থ হয়ে ওঠে। তার এই কারামতি দেখে রাজা মহেন্দ্র নারায়ণ তার প্রতি মুগ্ধ হয়ে জমিদারির কিয়দাংশ এ প্রখ্যাত অলীর নামে লিখে দিয়ে জায়গীরদারী দান করেন। এমনকি রাজা মহেন্দ্র অশ্রম্নসিক্ত ও আবেগাপ্লুত হয়ে হযরত শাহ কামাল (রহ.)-এর হাত ধরে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন।
জানা যায় ইসলাম ধর্ম প্রচারের জন্য তিনি মেলান্দহ উপজেলার দুরমুঠ ইউনিয়নে তিনি খানকাহ গড়ে সেখানে ধ্যানে মগ্ন ছিলেন। জনশ্রম্নতি আছে, হযরত শাহ কামাল (রহ.)-এর চার জন স্ত্রী ছিলেন। কিন্তু শুধুমাত্র ছোট স্ত্রী বারই রানি ছাড়া অন্য তিনজনের কোনো নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
অনেকের মতে, প্রথম স্ত্রীর মাজারটি তার মূল মাজারের সাথে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্ত্রীর মাজার মিয়াবাড়ি সংলগ্ন বৌ-রানি জোড় মাজার নামে খ্যাত। সর্বশেষ স্ত্রী বারই রানির মাজারটি দুরমুঠের সরুলিয়া গ্রামে অবস্থিত। হযরত শাহ কামাল (রহ.) বারই রানির বিয়ের বিষয়ে অলৌকিক ঘটনা আজও শোনা যায়। হঠাৎ একদিন ইসলামপুর উপেজলার পার্থশী ইউনিয়নের মোজাহাটা বারই পাড়া এলাকায় হযরত শাহ কামাল (রহ.) উপস্থিত হন। সেখানে পূজার উপাসনা চলছিল। পূজা অর্চনায় পূজারিরা দেবতাদের সামনে ভোগ দিচ্ছিলেন। তখন হযরত শাহ্ কামাল (রহ.) পূজারীকে প্রশ্ন করলেন- ‘তুমি ভোগ দিচ্ছ, কিন্তু দেবতারা তো তোমার ভোগ খাচ্ছে না। এমন প্রশ্নের জবাবে পূজারিরা পাল্টা প্রশ্ন করেন, ‘তাহলে তুমি খাওয়াও’। কথিত আছে, সেদিন তার নির্দেশে দেবতারা ভোগ খেয়েছিল। মা বারই রানি তার এ কারামতি দেখে পাগল হয়ে তার পিছু ছুটেন। পরে তাকেই তিনি সর্বশেষ স্ত্রীর মর্যাদা দিয়েছিলেন।
একাধিক সূত্রে জানা যায়, হযরত শাহ্ কামাল (রহ.) ছিলেন অপুত্রক, কাগজপত্র পর্যালোচনায় তার তিন কন্যার পরিচয় পাওয়া যায়। তারা হলেন নছিমুনন্নেছা, কছিমুুন্নেছা ও আক্তারুন্নেছা।