প্রফেসর ড. কে এম সাইফুল ইসলাম খান
জালালুদ্দিন রুমির জন্ম হয়েছিলো ১২০৭ খ্রিষ্টাব্দে প্রাচীন পারস্য সাম্রাজ্যের অন্তর্গত বর্তমান আফগানিস্তানের বাল্খ অঞ্চলে, আর শেক্সপিয়ারের জন্ম ও বেড়ে ওঠা ইংল্যান্ডের সামন্তবাদ শাসিত অঞ্চল স্ট্যাটফোর্ড অন অ্যাভনে ১৫৬৪ খ্রিষ্টাব্দে। প্রায় ৩৫৭ বছরের ব্যবধানে এই পৃথিবীর বিশাল দূরত্বে বেড়ে ওঠা দুই কবি, নাট্যকার, সাহিত্যিক ও দার্শনিকের আলোচনা ও তথ্য উপস্থাপন একদিকে যেমন বিশ্ব সাহিত্যের তুলনামূলক আলোচনার এক গভীরতর অংশ, অন্যদিকে প্রাচ্যপ্রতীচ্যের এই দুই মনীষীর চিন্তা ও ভাবনার জগত অভিন্ন সরলরেখায় ধাবিত কি-না তাও আমাদের বিচার-বিশ্লেষণ করার বিষয়। মানবসমাজে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর পরস্পর অবস্থান ও স্বাচ্ছন্দময় জীবনের যে প্রত্যাশা; কালে কালে এ ধরনের মানব প্রতিভার আবির্ভাব সে প্রত্যাশার সারথী হয়ে সমাজ-সভ্যতায় তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রাখে। ধর্ম, বর্ণ ও গোষ্ঠীগত অসহিষ্ণুতা প্রশমনে এসব মানুষের চিন্তা ও দর্শন ঘনিষ্ঠভাবে প্রভাব বিস্তার করে থাকে।
জালালুদ্দিন রুমি তার ছাব্বিশ হাজার দ্বিপদী কবিতায় (মসনভি) চারশত বিয়াল্লিশটি গল্প অন্তর্ভুক্তির মাধমে মানবসত্ত্বার হাজারো রূপ-বৈচিত্র্য উদ্ভাবনে যেমন এক মহাসত্যের প্রেমোল্লাস করেছেন, শেক্সপিয়ার তাঁর কালজয়ী নাট্যমালায় এক হাজার তিনশত চরিত চিত্রায়ন ও প্রতিটি চরিত্রের মুখে যে ডায়ালগ তুলে দিয়েছেন, তা সত্যিই বিস্ময়কর। তার এক নাট্যচরিত্রে প্রকারান্তরে মানুষের বহুধা চরিত্রের প্রকাশ ঘটিয়ে প্রেমের কাছে আত্মবিসর্জন দিয়েছেন।
আলোচনা ও গবেষণার এই ধারায় বর্তমান দুনিয়ায় জাতিতে জাতিতে ও মানুষে মানুষে বৈষম্যের যে ঝড়ো হাওয়া বইছে, প্রতিবাদ প্রতিরোধ ও যুদ্ধের যে হুংকার পৃথিবীবাসীকে আতঙ্কিত করে তুলছে, অত্র গবেষণায় এই দুই মহান কবি যাঁরা প্রেম ও ভালোবাসার জয়গান গেয়েছেন, তার যৌথ উপস্থাপনা হয়তো সচেতন পাঠক সমাজকে স্বস্তি দেবে, অনুসন্ধিৎসু গবেষকদেরও হয়তো গবেষণার নবধারাকে ও ব্যতিক্রম দৃষ্টিভঙ্গিকে উৎসাহিত করবে। অত্র প্রবন্ধে অনুসন্ধান করা হবে মানুষের জন্য ভৌগোলিক দূরত্ব নয়, বরং মানুষের মন ও মানসিকতার দূরত্বই অতি বিড়ম্বনা, অতি অপ্রত্যাশিত।