প্রফেসর ড. কামরুল হাসান
নজরুল ও হাফিজ বাংলাদেশ ও ইরানের বহুপ্রজ প্রতিভাধর দুই কাব্যযোদ্ধা। তারা দুজনই নিজদেশ ও দেশের বাইরে সমান জনপ্রিয়। কবিতা ছিলো তাদের আরাধনা। দেশপ্রেম ছিলো স্বপ্ন সাধনা। বরেণ্য এই কবিদ্বয়ের জীবন ইতিহাস কিংবা তাদের অবদানের কিয়দংশ উপস্থাপন করা এ আয়োজনে সম্ভব নয়। আমরা কেবলই তাদের ঐকতানের দ্যোতনার কিঞ্চিৎ মূ”র্ছনা বিতরণের প্রয়াস পাবো। তবে আজকের আয়োজনের এমন শিরোনাম আমাদেরকে আকুল ভাবনার অথৈ সমুদ্রে †ফলে দেয় না, বিস্ময়ের অতলেও নিক্ষেপ করে না।
কারণ কবিরা বিশেষ কোনো জাত বা পাতের নন। তারা কোনো বিশেষ গোত্র, অঞ্চল বা জনগোষ্ঠীর নন। বরং কবিরা হয়ে থাকেন সমগ্র জনতার, সমগ্র বিশ্বের, কুল কায়েনাতের, সমগ্র মানবতার। সব থেকে বড় কথা হলো- দুঃখ, হর্ষ, প্রেম কিংবা আনন্দের চরিত্র কিংবা প্রকাশ জামানা ও এলাকা ভেদে আলাদা হয় না।
প্রেমের আকুতি এবং দুঃখের আর্তির প্রকাশ সবদেশে সবকালে একই সুরে অনুরণিত ও গুঞ্জরিত। এই ঐক্য এবং ঐকতান যুগে যুগে কবিদের মাঝে প্রত্যক্ষ করা যায় সর্বতোভাবে।
তাই আমরা ইরাকের রুসাফি আর বাংলার জীবনানন্দ কিংবা,
মসনবীর রুমি আর বাংলার রবীন্দ্র কিংবা,
সিরাজের হাফিজ আর আমাদের নজরুল কিংবা,
ব্রিটেনের শেলি আর বাংলার সৈয়দ শামসুল
এর উচ্চারণের মাঝে মৌলিক পার্থক্য খুঁজে পাই না। যদিও তাদের দেশ, জাতি, ভাষা ও জামানার মধ্যে রয়েছে বিস্তর পার্থক্য। তাদের এই সাদৃশ্য এবং মিলের অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য হলো- তারা সবাই কল্যাণের বার্তাবাহী। সত্য ও সুন্দরের স্বপ্নদ্রষ্টা। তারা সবাই মানবতাবাদী। কবির চৈতন্য হয়ে থাকে সর্বদাই মুক্তচৈতন্যের উৎস। আরব নাকি আজম, পারস্য নাকি ইউরোপ, প্রাচ্য নাকি প্রতীচ্য, দেশি নাকি বিদেশী, এশিয়ান নাকি ওসিয়ান এই বিবেচনা কখনও কোনো কবিকে সঙ্কুচিত করে না। মানুষ, মানবতা, মানবিকতাই একজন কবির কাছে উত্তুঙ্গ সত্যরূপে ধরা দেয়। অহিংসা এবং অবৈরিতা হয় তার গন্তব্যের শেষ বিন্দু।
ইরান এবং বাংলার যোগাযোগ অত্যন্ত টেকসই, নিখাঁদ এবং প্রাকৃতিক। এই দুই দেশের বাণিজ্য, সাহিত্য ও সংস্কৃতির যোগাযোগ অত্যন্ত প্রাচীন। সাহিত্য ও সংস্কৃতির ইতিহাস বিবেচনা করলে পারস্য সভ্যতা ও সংস্কৃতি নানা ক্ষেত্রে আমাদের থেকে অগ্রগামী বা ঐতিহ্যে বয়েসী। তবে আমাদের স্বীকৃতিবোধ ও ঔদার্য অবশ্যই ঈর্ষণীয়।
একদিকে ইরানীদের ঐতিহ্য অন্যদিকে বাংলার উদার্য।
একদিকে শিরাজের অনবদ্যতা অন্যদিকে বাংলার সকৃতজ্ঞতা।
এ দুয়ের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে এক অনুপম মেলবন্ধন। ইরান-বাংলার একত্র সাহিত্যবাস। নজরুল-হাফিজের মিলন সুর। বাংলার বুলবুল কাজী নজরুল এবং বুলবুল-ই-সিরাজ হাফিজের পরিচিতি আমাদের প্রায় সকলের জ্ঞাত ও অধীত। বিশেষত আজকের এ বিশেষজ্ঞ অডিয়েন্স সবাই তাদেরকে চিনেন এবং জানেন বেশ ভালো করেই।
তবুও হাফিজ (১৩২৬ খ্রি.-১৩৮৯ খ্রি.) বুলবুল-ই-সিরাজ নামেই যার খ্যাতি সমধিক। বুলবুল-ই-সিরাজ এর অর্থ হলো- সিরাজের ময়না। হাফিজকে পারসিকরা ‘লিসান উল গায়েব’ বা প্রচ্ছন্নের অভিব্যক্তি, ‘তরজমানুল আসরার’ বা রহস্য ব্যাখ্যাতা ইত্যাদি নামে চিনে। শামসুদ্দিন মুহাম্মদ এর ছদ্মনাম হাফিজ। কাব্য তার নেশা ও পেশা। সঙ্গীত তার বেদনার্ত অন্তরের আন্তরিক বহিঃপ্রকাশ।
আর কাজী নজরুল একাধারে কবি, সাহিত্যিক, সুরকার, গীতিকার, প্রাবন্ধিক, গল্পকার, নাট্যকার, চিত্রকর, বংশীবাদক, অভিনেতা, উপন্যাসিক, সাহিত্য সমালোচক, বায়োনভেলিস্ট, ঐতিহাসিক, শিশু সাহিত্যিক, বাগ্মী, সংগঠন স্রষ্টা, যাত্রা প্রয়োজক, মসিযোদ্ধা প্রভৃতিসহ সাহিত্যের প্রায় সকল শাখায় ছিল তার সদম্ পদচারণা। বাংলা সাহিত্যের একক এবং অদ্বিতীয় প্রোজ্জ্বল সাহিত্য তারকা। এর বাইরেও তিনি ছিলেন একজন একনিষ্ঠ সমাজচিন্তক ও বস্তুনিষ্ঠ দার্শনিক।
পারস্য সাহিত্যের ইতিহাস প্রায় দুই সহস্রাব্দের পুরাতন ইতিহাস। পারস্যের সাথে বাংলার বাণিজ্য সম্পর্ক আরো প্রাচীন। সেই সুবাদেই পারস্য ভাষা ও সাহিত্যের সাথে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের লেনদেনের শেকড় এখানেই।
Humanitarian creative experience মানবিকতার সুশীল অভিব্যক্তি এর উপস্থিতি বুলবুল-ই-সিরাজ এবং বাংলার বুলবুল নজরুল সাহিত্যে অতি প্রবল। সেই কারণেই এই দুই ভাষার জনগণের কাছে তারা এত প্রিয়। জনদৃষ্টি আকর্ষণে তারা এত সফল।
Poet of Love এবং Poet of Revolation একদিকে প্রেমের কবিতা অন্যদিকে বিদ্রোহের কবিতা যাকে যে অভিধায় অভিষিক্ত করা হোকনা কেন তাতে ততটা তৃপ্ত হওয়া যায় না যতটা তৃপ্ত হওয়া যায় তাদেরকে মানবতাবাদি কবি আখ্যা দিতে পারায়।
তাদের মাঝে কাল বৈভিন্ন ছিল। কালের দূরত্বও ছিল। তবে তাদের কবিতা রচনায় ছিল মহৎ ঐক্য। জামানা বিবেচনায় হাফিজ পূর্ব জামানার হবার কারণেই অগ্রজ হাফিজের কবিতার অনুরক্ত পাঠক ছিলেন নজরুল। তার কবিতা পাঠের অনুরক্তি তাকে হাফিজের ভক্ত বানিয়ে ছাড়ে। হাফিজের কাব্যশক্তি নজরুলকে তার কবিতার অনুবাদে আকৃষ্ট করে। এমনকি নজরুল হাফিজের প্রায় পৌনে একশত কবিতার সার্থক বাংলা অনুবাদ করেন সরাসরি ফার্সি ভাষা হতেই। এ স্বাতন্ত্র কেবলই তার। নজরুলের কাব্যশক্তির নেপথ্য স্পৃহায় সিরাজের কবি হাফিজ খুব শক্ত প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছিল তা নির্দ্বিধায় বলা যায়। হাফিজ তথা ফারসির প্রভাব প্রত্যক্ষ করা যায়। নজরুলের পদ্য-গদ্য, গল্প-কবিতা, প্রবন্ধের সর্বত্র ফারসি শব্দের প্রভাবের দেখা মেলে। হাফিজের এই প্রভাবকে গুরুত্ববহ করে তুলেছে বাংলা একাডেমির সম্প্রতি প্রকাশিত নজরুল সাহিত্যে আরবি-উর্দু-ফারসি শব্দের অভিধান প্রণয়নের মাধ্যমে।
কবি কাজী নজরুল ইসলামের একটি বৃত্ত ও বলয় ছিল নিশ্চয়ই। যা ছিল একান্ত তারই। এ বৃত্ত-বলয়ে অন্যের প্রবেশাধিকার ছিল সংরক্ষিত। কোনো ব্যক্তি চরিত্র প্রভাবক হিসেবে গুরুত্ববহ না হলেও ভিন ভাষা, সভ্যতা ও সংস্কৃতির প্রতি নজরুল ছিলেন সতর্ক এবং উদার। ফারসি ভাষার সাহিত্য রসে তিনি ছিলেন উতলা। হাফিজের সাহিত্য রস অতিব উপাদেয় রূপে ধরা দেয় তার কাছে।
আরবি ও ফারসির অনুরক্ত পাঠক হিসাবে দেখা যায় কবি নজরুল সেই বাল্যবেলা থেকেই মক্তবের মৌলভী কাজী ফজলে আলীর কাছে আরবি-ফারসির প্রাথমিক পাঠ এবং পরবর্তীতে আপন উদ্যোগে নজরুল এই দুই ভাষায় দক্ষতা অর্জন করেন। ফলে দেখা যায় নজরুল আরবি ১৬টি ছন্দের প্রত্যেকটি দিয়ে কবিতা রচনার সক্ষমতা এবং ফারসি কবিতার যুতসই বাংলা অনুবাদের শক্তিমত্তা প্রদর্শন করেন।
এক্ষেত্রে অন্যতম প্রভাবকের কাজ করেছিলো সিরাজের বুলবুল কবি হাফিজ ও তার কবিতা। হাফিজের প্রভাবে নজরুল এতো বেশি আপ্লম্নত ছিলেন যে, তিনি হাফিজকে আমার বন্ধু, আমার প্রিয়তম ইরানী কবি বলে আখ্যা দিয়েছেন। তাই এটি অত্যুক্তি হবে না- ফারসি ও আরবি ভাষায় নজরুল-এর জ্ঞান ছিলো পান্ডিত্যর পর্যায়ে।
হাফিজের সাথে নজরুলের সখ্য এবং অগ্রজের প্রতি অনুজের দায়বোধ অনুমান করা যায়- বুলবুলের মৃত্যু শিয়রে বসে রুবাইয়াত-ই হাফিজের অনুবাদ শেষ করার দৃশ্য দেখলে- এ যে শিষ্যত্বের মহানত্ব, গুরুর প্রতি ভক্তের অকৃত্রিম শ্রদ্ধাঘর্। রুবাইয়াত-ই-হাফিজের অনূদিত বইয়ের উৎসর্গপত্র একই সাথে আবেগ, আর্তি ও আকুতির এক পবিত্র শ্বেতপত্র। নজরুল যেখানে লিখেছিলেন-
বাবা বুলবুল!
তোমার মৃত্যু শিয়রে বসে বুলবুল-ই সিরাজ
হাফিজের রুবাইয়াতের অনুবাদ আরম্ভ করি, যেদিন
অনুবাদ শেষ করে উঠলাম, সেদিন তুমি আমার
কাননের বুলবুলি উড়ে গেছ। যে দেশে গেছ তুমি,
সে কি বুলবুলিস্তান ইরানের চেয়েও সুন্দর?
জানি না তুমি কোথায়? যে লোকেই থাক, তোমার
শোক-সন্তপ্ত পিতার এই শেষ দান শেষ চুম্বন বলে গ্রহণ করো।
তোমার চার বছরের কচি গলায় যে সুর শিখে গেলে,
তা ইরানের বুলবুলিকেও বিস্ময়ান্বিত করে তুলবে।
সিরাজের বুলবুল কবি হাফিজের কথাতেই
তোমাকে স্মরণ করি,
‘সোনার তাবিজ, রূপার সেলেট
মানাত না বুকে রে যার
পাথর চাপা দিল বিধি
হায়, কবরের শিয়রে তার।
নজরুল এবং হাফিজ যেন একই ধারা হতে উৎসারিত দুইটি †শ্রাতিস্বনী। নজরুল †যন পথ চলেছেন হাফিজের পথ ধরেই। নজরুল চিত্রকল্পে হাফিজ প্রতিমূর্তি প্রায়শ। হাফিজের রঙিন চিত্রকল্পে আমরা দেখি
রক্ত-রাঙা হল হৃদয়
তোমার প্রেমের পাষাণ-ব্যথায়।
তোমার ওরূপ জ্ঞান-অগোচর
পৌঁছে না ক দৃষ্টি সেথায়।
জড়িয়ে গেল ভীরু হৃদয়
তোমার আকুল অলক-দামে,
সন্ধ্যা-কালো কেশে বাঁধা
দেখছি ওরে ছাড়ানো দায়।
আবার নজরুলের কালার্ড ইমেজ লক্ষ করুন-
নীল সিয়া আসমান লালে দুনিয়া
আম্মা লাল তেরি খুন কি খুনিয়া।।
অথবা
ললাটে তোমার ভাম্বর টীকা
বসরা গুলের বহ্নিতে লিখা।।
নজরুলের ইসলামি গজলে শোনা যায় হাফিজের গজলের অনুরণন। হাফিজের সুরে শোনা যায়-
আশ্বাসেরই বাণী তোমার
প্রতীক্ষার ঐ দূর সাহারায়
ফিরছে আজো আর কতদিন
ঢাকবে রবি মরুর ধুলায়।
আর নজরুলের কণ্ঠে
ত্রি ভুবনের প্রিয় মোহাম্মদ
এলো রে দুনিয়ায়।।
বস্তুত হাফিজ ও নজরুলের গজল ও শ্যামাসংগীতের মূল বিষয়বস্তুই ছিল সৃষ্টিকর্তা ও নিরেট ধর্ম। প্রেম ব্যতিত দ্রোহ যেন জমে উঠে না। হাফিজের প্রেমের সাথে বিদ্রোহী নজরুলের প্রেম যেন একই সূত্রে গাঁথা। তুর্কি বালিকার প্রেমে উন্মাদ হয়ে হাফিজ তার জন্য বোখারা, সমরকন্দ উৎসর্গ করেন এভাবে-
যদিই কান্তা সিরাজ-সজনী ফেরৎ দেয় মোর চোরাই দিল ফের
সমরকন্দ ও বোখারার দিই বদল তার লাল গালের তিলটের।।
আর নজরুলের রোমান্টিকতা শোনা যায় এভাবে
মোর প্রিয়া হবে এসো রাণী
দেবো খোপায় তাঁরার ফুল
কর্ণে দোলাবো তৃতীয়া তিথি
চৈতী চাঁদের দুল।।
সমাজ বিনির্মাণে হাফিজ ও নজরুল এক ও অভিন্ন আত্মা। মহাকবি হাফিজের কবিতার অন্যতম বিষয় ছিলো- কপট, ভন্ডতপন্বী, শাসকদের স্বৈরাচারীতার বিরুদ্ধে উচ্চকন্ঠ। আর বাংলার কবি নজরুলের আক্রমণ ছিলো ধর্মান্ধ, মনোবৈকল্য, দুঃশাসন ও পরাধীনতার বিরুদ্ধে। হাফিজের কণ্ঠে-
তোমার অাঁখি জানে যথা
বঞ্চনা আর ছলচাতুরি
চমকে বেড়ায় অসি যেন
রণাঙ্গণে ঘুরি ঘুরি।
তড়িত-জ্বলার ও-চোখ ত্বরিত
গোল বাধারে বধূর সাথে,
যে হিয়াতে শিলা ঝড়ে,
হায় গো তারি তরে ঘুরি।
আর নজরুল তো বিদ্রোহের মশাল হাতে তীব্র প্রতিবাদী-
যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দন রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না
অত্যাচারীর খড়গ কৃপান ভীম রণ-ভূমে রণিবে না
বিদ্রোহী রণক্লান্ত
আমি সেই দিন হবো শান্ত….
হাফিজ নজরুল একে অন্যের পরিপূরক। বাংলাদেশে আজ হাফিজ নজরুল সেমিনার হচ্ছে। ২০০৬ সালে ইরানের তেহরানে নজরুল হাফিজ অনুষ্ঠান সম্প্রচার হয়েছিলো।
নজরুল সাহিত্য সৃষ্টি ও হাফিজের কাব্যকর্ম উভয়ই আজ বিশ্ববাসীর এক মহামূল্যবান সম্পদে পরিণত।
ধর্ম ভাবনা ও মৃত্যু চেতনায় দুই কবির সাদৃশ্য- হাফিজের ধর্ম কী ছিলো তা নিয়ে সংশয়াবিষ্ট ছিলো তার ভক্তসমাজ। তাই তার মৃত্যুর পর সৎকার নিয়ে বাঁধে বিপাক। তার সমাধান কল্পে উন্মোচন করা হয় হাফিজের কাব্য খাজাঞ্চি। তাতে বেরিয়ে আসে-
কদমে দরিগ মদার আজ জানাযায়ে হাফিজ
কে গরচে গর কে গোনাহসত মি রওদ বেহেশত।
নজরুলের অনুবাদে এসেছে-
হাফিজের এই শব হতে গো তুলো নাকো চরণ প্রভু
যদিও সে মগ্ন পাপে বেহেশত সে যাবে তবু?
কবি নজরুলের ধর্ম, আকিদা নিয়ে তার জীবদ্দশায় অনেক কথা কিংবা দলাদলি থাকলেও কবির মৃত্যুর পর এমন সমস্যা হয়নি। কবির একটি গানই তার ধর্ম বিশ্বাস প্রকাশের জন্য যথেষ্ট ছিলো।
মসজিদেরই পাশে আমার কবর দিও ভাই
যেন গোর হতেও মুয়াজ্জিনের আযান শুনতে পাই।
বাংলার সুলতান গিয়াস উদ্দিন আজম শাহ হাফিজকে বাংলায় আমান্ত্রণ জানালে কবি তা সানন্দে গ্রহণ করেন। উচ্ছ্বসিত বার্তাও প্রেরণ করেন-
আজকে পাঠাই বাংলায় যে ইরানের এই ইক্ষু শাখা
এতেই হবে ভারতের সব তোতার চঞ্চু মিষ্টি মাখা
তবে তার বাংলায় আর আসা হয়নি। এক দৈব ঝড় তার পথে অন্তরায় হয়। খোদ কবি নজরুল ইসলামের মন্তব্য এখানে খুবই মূল্যবান। তিনি লিখেন-পারসিক কবি হাফিজের মধ্যে বাংলার সবুজ দুর্বা ও জুঁই ফুলের সুবাস প্রিয়ার চূর্ণ কুন্তলের যে মৃদু গন্ধের সন্ধান পেয়েছি সে সবই তো খাঁটি বাংলার কথা। বাঙালির জীবনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। আনন্দরসের পরিপূর্ণ সমারোহ।