দেওয়ানবাগ ডেস্ক: মায়ের ভাষার মর্যাদার জন্য বায়ান্নতে বুকের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত করেছিল বাংলার দামাল ছেলেরা। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা চেয়েছিলেন তারা। দাবি ছিল বাংলাকে সরকারি দপ্তরে চালু করার। কিন্তু এ ভাষায় যদি পাঠদান না হয় তাহলে রাষ্ট্রীয় পরিমণ্ডলে তা বাস্তবায়নের উপায় কী? তাই সবার আগে চলে আসে শিশুর পাঠদানের মাধ্যম। এজন্যই দেশে দেশে শিশুর প্রথম পাঠদান তার মাতৃভাষায় হওয়ার ব্যাপারে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়ে থাকে।
ভাষাতত্ত¡বিদরা মনে করেন, শিশুদের মন কাদামাটির মতো কোমল। যেভাবে গড়তে চাওয়া যায় সেভাবেই সম্ভব। অন্যদিকে জন্মের পর শিশু প্রথম বুলি শেখে তার মায়ের কাছে। সেটাই মাতৃভাষা। তাই মাতৃভাষা যদি শিশুপাঠের মাধ্যম হয় তাহলে তাকে ইচ্ছামতো গড়া যত সহজ হবে, অন্য ভাষায় পাঠদান করলে তত সহজ হবে না।
মায়ের ভাষায় শিশুকে যা শেখানো হবে, তাই সে অনায়াসে আয়ত্ত করবে। শাস্ত্রও বলে শিশুর প্রথম পাঠ হওয়া উচিত তার মাতৃভাষায়। মাতৃভাষায় প্রথম পাঠের মধ্য দিয়ে সেই ইতিহাস, ঐতিহ্য একটি শিশুর মধ্যে প্রোথিত হয়। তাই বাঙালি শিশুর প্রথম পাঠ হতে হবে বাংলায়। ঠিক এমনিভাবে চাকমা বা মারমা শিশুর প্রথম পাঠ হওয়া উচিত তার নিজস্ব ভাষায়।
বাংলাদেশের ভাষাতাত্তি¡কদের মতে, দেশে বর্তমানে ৪১টি ভাষা আছে এবং সবগুলোই জীবিত। এমন ভাষা বৈচিত্র্যের দেশে প্রত্যেকেই মাতৃভাষায় শিখতে পারবে-এমন প্রত্যাশা সবার। আর এ প্রত্যাশা থেকেই সরকার ইতোমধ্যে ৫টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মাতৃভাষায় পাঠ্যবই দেওয়া শুরু করেছে।
কিন্তু নির্মম সত্য, আমাদের অনেক অভিভাবকের একটি ভ্রান্ত ধারণা আছে। সেটি হচ্ছে, ইংরেজিটা শিখতেই হবে। তাই শিশুর প্রথম পাঠ তারা ইংরেজিতে করান। তা না করে তারা বাংলা ভাষায় প্রথম পাঠের মধ্য দিয়ে শিশুকে তার মাতৃভাষার ইতিহাস-ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সঙ্গে একাত্ম করতে পারেন। সেটি আয়ত্ত করার পর বা পাশাপাশি ওই শিশুটি ইংরেজির পাঠও নিতে পারে। এটাই হওয়া উচিত।
শিক্ষাবিদ ও লেখক সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের মতে, যে কোনো শিশু মাতৃভাষার পরিমণ্ডলে জন্মগ্রহণ করে। তাই তার প্রথম পাঠ হওয়া উচিত তার মাতৃভাষায়। কারণ মাতৃভাষায় প্রথম পাঠের মধ্য দিয়ে তার মধ্যে নিজস্ব যে সংস্কৃতি রয়েছে সেটি প্রবেশ করে।
ভাষা তো শুধু ভাষা নয়, এর মধ্যে শব্দ, দ্যোতনা, নানা বিষয় থাকে। সেগুলোর মধ্য দিয়ে একজন মানুষ নিজেকে আত্মপ্রকাশ করে। তার মধ্যে আত্মবিশ্বাসের জন্ম নেয়। কারও মাতৃভাষা যদি ইংরেজি হয় তাহলে সে ইংরেজিতেই প্রথম পাঠ নেবে। অর্থাৎ মাতৃভাষাতেই প্রথম পাঠ নেওয়া উচিত।