আমিন আল আসাদ: মহররম তরবারির ওপর রক্তের বিজয়ের মাস। দশই মুহররম কারবালার মরুপ্রান্তরে সংঘটিত বিয়োগান্ত ঘটনা বিশ্বের ইতিহাসে এক ট্র্যাজেডি। এ এক হৃদয়বিদারক ও শোকাবহ ঘটনা। কেবল শোকাবহ ঘটনাই নয়, বরং এর শোক থেকে উত্থিত শক্তি ভস্মীভূত করে দেয় সকল প্রকার জালিমের লৌহ লকার। কারবালার বিয়োগান্ত ঘটনায় শোকাতুর হয় না এমন মুসলমান নেই বললেই চলে। দল-মত, দেশ-ভাষা, বর্ণ, গোত্র, মাজহাব, তরিকা নির্বিশেষে সকল ইমানদার মুসলমান- যাদের হৃদয়ে আল্লাহর রাসুল (সা.) ও তাঁর আহলে বাইতের প্রতি বিন্দুমাত্র ভালোবাসা রয়েছে, তারা কারবালা প্রান্তরে ঘৃণিত এজিদ বাহিনীর কাপুরুষোচিত হামলায় নবির নাতি, বেহেশতে যুবকদের সরদার ইমাম হোসাইন (রা.) এবং তাঁর ৭২ জন সঙ্গী-সাথিসহ নির্মমভাবে শাহাদতবরণের করুণ ঘটনায় বেদনাহত হয়। শুধু মুসলমানরাই নয়, জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে বিবেকবান অমুসলিম পণ্ডিতরাও লিখেছেন অমূল্য সব শোকবাণী। এদের মধ্যে রয়েছেন ভারতবর্ষের প্রখ্যাত নেতা মহাত্মা গান্ধী, ইংরেজ দার্শনিক ও লেখক টমাস কার্লাইল, ইংরেজ ওপন্যাসিক চার্লস ডিকেন্স, এডওয়ার্ড ব্রাউন, টমাস মাসরিক, ইতিহাসবিদ পি কে হিট্টি, ডব্লিউ ডব্লিউ হান্টার, ফ্রেডরিক জেমস, দার্শনিক নিকলসন, জার্মান প্রাচ্যবিদ মরবিন, জার্মানির বিখ্যাত কবি গ্যাটে, খ্রিষ্টান পুরোহিত অ্যান্টন বারা প্রমুখ।
কারবালার মর্মান্তিক ঘটনায় তাঁরা মর্মাহত হন। কেবল ইমাম হোসাইন (রা.)-এর কালজয়ী বিপ্লবের প্রতিপক্ষ তদানিন্তন ধিকৃত বর্বর এজিদ ইবনে মুয়াবিয়া, ইবনে যিয়াদ ও সীমার প্রমুখ মানবতাবিরোধী অপরাধী ও তাদের প্রতিষ্ঠিত রাজবংশীয় স্বৈরশাসকবর্গ এবং তাদের রাজনৈতিক মতাদর্শের বর্তমান প্রজন্মরা ব্যতীত। সেজন্যই কবি শোকগাথায় গেয়ে উঠেছেন- ‘অমর শহীদ ইমাম হোসেন জন্মেছিলেন মদীনায়/ তাঁর শোকে জগৎ কাঁদে, কাঁদে না জালিমেরাই।’ আশুরার চেতনা ও আন্দোলন মানবতার ইতিহাসে অতীব গুরুত্বপূর্ণ এক অধ্যায়।