দেওয়ানবাগ ডেস্ক: জ্বালানি সংকটে হঠাৎ করেই ধস নেমেছে বিদ্যুৎ উৎপাদনে। ভয়াবহ লোডশেডিংয়ের কবলে পড়েছে দেশ। ভোগান্তির পাশাপাশি ধাক্কা লেগেছে শিল্পোৎপাদনেও। একদিকে গ্যাস সংকটে বন্ধ হয়ে গেছে ছোট-বড় ২৫টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র, অন্যদিকে ডলার সংকটে এলসি খুলে কয়লা আমদানি করতে না পারায় উৎপাদন কমেছে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর। বন্ধ রয়েছে রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি। উৎপাদন কমেছে বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের। কয়লার মজুদ শেষ হয়ে আসায় ৮-৯ দিনের মধ্যে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিও বন্ধের আশঙ্কা রয়েছে। এতে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি সামনে আরও নাজুক হতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
তবে জ্বালানি সংকটে যখন বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো একে একে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, তখন দেশের বিভিন্ন মোকামে পড়ে রয়েছে প্রায় ৮ লাখ মেট্রিক টন কয়লা। মোকামে ঢোকার অপেক্ষায় আছে আরও প্রায় ২ লাখ মেট্রিক টন। ইটভাটাসহ স্থানীয় বিভিন্ন চাহিদা মেটাতে এসব কয়লা আমদানি করা হলেও আমদানিকারকরা বলছেন, সংকটের এই মুহূর্তে সরকার চাইলে এই কয়লা বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজে ব্যবহার করতে পারে। স্থানীয় মুদ্রার বিনিময়ে এসব কয়লা সরকারকে দিতে পারবেন তারা। ফলে ডলার নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। আর এই কয়লা দিয়ে পায়রার মতো বৃহৎ বিদ্যুৎ কেন্দ্র আড়াই মাসের বেশি চালিয়ে রাখা সম্ভব। বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্যানুযায়ী, ১ হাজার ১৬০ মেগাওয়াট আমদানিসহ বর্তমানে দেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২৩ হাজার মেগাওয়াটের বেশি। বর্তমানে ১৩-১৪ হাজার মেগাওয়াট চাহিদা থাকলেও জ্বালানি সংকটে উৎপাদন হচ্ছে ১০ হাজার মেগাওয়াটের মতো। ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে মহেশখালীর দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল হতে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হওয়ায় হঠাৎ করেই গ্যাসভিত্তিক অনেক কেন্দ্রের উৎপাদন থেমে গেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র ঠিকভাবে চালাতে পারলে সংকট মোকাবিলা সম্ভব হতো। অথচ কয়লার অভাবে দীর্ঘদিন ধরে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৬১৭ মেগাওয়াট উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ১ ও ৩ নম্বর ইউনিটে উৎপাদন কমেছে কয়লার অভাবে। পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বর্তমানে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ পাওয়া গেলেও শিগগিরই বন্ধ হয়ে যেতে পারে কেন্দ্রটি। এতে বড় রকমের ধাক্কা খাবে বিদ্যুৎ খাত। জানা গেছে, পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কয়লা আমদানি করা হয় ইন্দোনেশিয়া থেকে। দেশের বৃহত্তম এ কেন্দ্রটি পুরোদমে চালাতে প্রতিদিন ১১ থেকে ১২ হাজার টনের মতো কয়লা প্রয়োজন হয়। ডলার সংকটে কয়লা আমদানির আগের বিল পরিশোধ করতে না পারায় নতুন কয়লা নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়েছে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি। বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের (বিসিপিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এম খোরশেদুল আলম গতকাল বলেন, আর আট-নয় দিনের কয়লা আছে। এরপর কি হবে বলা যাচ্ছে না। সরকার চেষ্টা করছে। এদিকে কোল ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে চট্টগ্রাম, নোয়াপাড়া, দাউদকান্দি, কালিগঞ্জ, নগরবাড়ী, কাঞ্চন, গাবতলী, ধর্মগঞ্জ ও পাগলা ডিপোতে ইন্দোনেশিয়া ও দক্ষিণ আফিকা থেকে আনা বিভিন্ন আমদানিকারকের ৮ লাখ মেট্রিক টনের বেশি কয়লা মজুদ আছে। এ ছাড়া ২ লাখ মেট্রিক টন কয়লা ডিপোতে ঢোকার অপেক্ষায় আছে। এর মধ্যে বসুন্ধরা মাল্টি ট্রেডিং লিমিটেডের রয়েছে ১ লাখ ৪৮ হাজার ১৭০ মেটিক টন কয়লা। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা মির্জা মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, বিদ্যুতের অভাবে শিল্পোৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কয়লা আমদানি করতে এলসি করা যাচ্ছে না ডলার সংকটে। এ ছাড়া আজ যদি এলসি করা হয়, কয়লা পৌঁছাতে ৩৫ থেকে ৪৫ দিন সময় লাগবে। কিন্তু বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেলে দেশ আরও সংকটে পড়বে। তাই সরকার চাইলে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য আমাদের আমদানিকৃত কয়লা বাংলাদেশি টাকাতেই সরকারকে দিতে পারি। অন্যান্য আমদানিকারকদের সঙ্গেও এ নিয়ে সমঝোতার ব্যবস্থা করে দিতে চেষ্টা করব।