দেওয়ানবাগ ডেস্ক: দেশের মধ্যবিত্তদের জন্যও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি প্রয়োজন বলে মনে করেন সানেমের চেয়ারম্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক বজলুল হক খন্দকার। তিনি বলেন, মালয়েশিয়ার মতো দেশে দেখা গেছে, কোভিডের অভিঘাতে সে দেশের দরিদ্রদের তুলনায় মধ্যবিত্তরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমাদের দেশেও মধ্যবিত্তরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বৃহস্পতিবার ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে অনুষ্ঠিত ‘সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী: বাংলাদেশ কোথায় দাঁড়িয়ে’ শীর্ষক ওয়েবিনারে এসব কথা বলেন বজলুল হক খন্দকার।
বজলুল হক খন্দকার বলেন, দেশের প্রায় ২৫ শতাংশ মানুষ অরক্ষিত। তারা যেকোনো ধাক্কায় হঠাৎ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যেতে পারে, কোভিডের সময় যা দেখা গেল। মধ্যবিত্তের আয় সীমিত। দুর্যোগ বা উচ্চ মূল্যস্ফীতির সময় এই মানুষেরা সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, দুর্যোগের সময় তারা কারও কাছে হাত পাততে পারে না, আবার লাইনে দাঁড়িয়ে স্বল্পমূল্যের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতেও তাদের আত্মসম্মানে লাগে। ফলে তাদের কষ্ট কারও চোখে পড়ে না।
এই পরিপ্রেক্ষিতে বজলুল হকের পরামর্শ, সরকার দুটি কাজ করতে পারে। প্রথমত, সামাজিক নিরাপত্তা খাতের আওতা বৃদ্ধি করে দেশের অন্তত ৫৫-৬০ শতাংশ মানুষকে এর আওতায় নিয়ে আসা। তবে সরকারের সীমাবদ্ধতা আছে, তার পক্ষে এটা করা সম্ভব না-ও হতে পারে। দ্বিতীয়ত, মানুষের যখন অবস্থা ভালো থাকে, তখন পেনশন, বেকারত্ব বিমা বা স্বাস্থ্যবিমার মতো সুরক্ষা মানুষ নিতে পারে। দুর্যোগের সময় মানুষ যেন সেখান থেকে ঋণ নিতে পারে, সে রকম ব্যবস্থা থাকতে হবে। এই দুটি মাধ্যমে দেশে সামাজিক নিরাপত্তাব্যবস্থা দাঁড়িয়ে যেতে পারে বলে মত দেন তিনি।
উল্লেখ্য, সরকার ইতিমধ্যে সর্বজনীন পেনশন চালু করার বিষয়ে অনেক দূর এগিয়েছে।
অনুষ্ঠানে উপস্থাপনা দেন বজলুল হক খন্দকার। তিনি বলেন, সরকার সামাজিক নিরাপত্তা খাতে জিডিপির ২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ৩ শতাংশ বরাদ্দ দিয়েছে। তবে সরকারি কর্মচারীদের পেনশন বাদ দিলে তা ১ দশমিক ৫ থেকে ১ দশমিক ৭ শতাংশে নেমে আসে। আবার সুবিধাভোগী নির্বাচনেও নানা ধরনের সমস্যা আছে। যত মানুষ সরকারের সামাজিক সুরক্ষার আওতায় আছেন, তাঁদের মধ্যে ৭১ শতাংশ ভুল মানুষকে দেওয়া হয়। আবার ৪৬ দশমিক ৫ শতাংশ আছেন, প্রয়োজন না থাকলেও যাঁরা ভাতা পাচ্ছেন।
অন্য দিকে দেশের শহরাঞ্চলে দরিদ্রের সংখ্যা ১৮ দশমিক ৯ শতাংশ হলেও সুরক্ষা পাচ্ছেন ১০ দশমিক ৯ শতাংশ দরিদ্র মানুষ। কিন্তু গ্রামাঞ্চলে দরিদ্রের সংখ্যা ২৬ দশমিক ৪ শতাংশ হলেও সুরক্ষা পাচ্ছেন ৩৫ দশমিক ৭ শতাংশ মানুষ। এ ধরনের সমস্যার কারণে বিদ্যমান সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির সফলতা কম।
এ বাস্তবতায় সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিকে চারটি স্তম্ভে ভাগ করার পরামর্শ দেন বজলুল হক খন্দকার। যেমন সামাজিক সহায়তা, সামাজিক বিমা, শ্রমবাজার-বিষয়ক কর্মসূচি ও সামাজিক সেবা। তিনি অনানুষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদেরও সামাজিক সুরক্ষা খাতের আওতায় নিয়ে আসার পরামর্শ দেন।
কিন্তু বাংলাদেশের রাজস্ব-জিডিপির অনুপাত পৃথিবীতে সবচেয়ে কমের কাতারে-১০ শতাংশের নিচে। এ বাস্তবতায় সরকার কীভাবে অর্থায়ন করবে, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে বজলুল হক বলেন, ‘যেভাবে কর্মসূচি সাজানো হয়েছে, তাতে আমার হিসাবে, জিডিপির আরও ৩ শতাংশ বরাদ্দ লাগবে। বিভিন্ন দেশ নানা মাধ্যম থেকে এটা জোগাড় করছে। বেসরকারি খাতের ভূমিকা পালনের সুযোগ আছে। সেবা, শ্রমবাবাজার ও বিমায় সরকারের ব্যয় করার বিশেষ দরকার নেই। সরকার যেটা করতে পারে, তা হলো, শক্তিশালী নিয়ন্ত্রণকাঠামো তৈরি করা। এমন প্রতিষ্ঠান তৈরি করা, যারা বড় বড় তহবিল ব্যবস্থাপনা করতে পারবে। সব মিলিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত ব্যয় হতে পারে জিডিপির ১ থেকে ১ দশমিক ৫ শতাংশ, বাকিটা বেসরকারি খাত করতে পারবে। অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন উন্নয়ন, গবেষণা সংস্থার কর্মকর্তা ও সাংবাদিকেরা অংশ নেন।