বাণিজ্য শর্তে উন্নতি বাংলাদেশের

বাণিজ্য শর্তে উন্নতি বাংলাদেশের

বাণিজ্য শর্তে উন্নতি বাংলাদেশের
দেওয়ানবাগ ডেস্ক: বাংলাদেশের রপ্তানিকৃত তৈরি পোশাকের দাম বেড়েছে ইউরোপ-আমেরিকায়। আগে গার্মেন্ট পণ্য রপ্তানি করে পশ্চিমা বিশ্বে যে মূল্য পাওয়া যেত এখন তার চেয়ে ২৩ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বেশি পাওয়া যাচ্ছে। পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ইউরোপের বাজারে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে বাংলাদেশি তৈরি পোশাকের দাম, যা চীন ও তুরস্ককে ছাড়িয়ে গেছে। বেসরকারি সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) হিসাব করে দেখিয়েছে, চলতি বছর বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের দাম ইউরোপের বাজারে ২৪ দশমিক ৮ শতাংশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ২৩ দশমিক ৩ শতাংশ বেড়েছে। সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেছেন, ইউনিটপ্রতি রপ্তানি মূল্য বাড়ার বিষয়টি ভালো খবর। এর ফলে টার্মস অব ট্রেড বা বাণিজ্য শর্তের উন্নতি হয়েছে বাংলাদেশের। আগে ১০০ কেজি পোশাক রপ্তানি করে যে পরিমাণ পণ্য আমদানি করা যেত এখন তার চেয়ে বেশি আনা যাচ্ছে। সম্প্রতি ‘স্টেট অব দ্য বাংলাদেশ ইকোনমি’ পর্যালোচনা করে তিনি এ বিষয়টি তুলে ধরেন।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, বাংলাদেশি তৈরি পোশাকের দাম বাড়ার বিষয়টি ইতিবাচক। বিজিএমইএর পক্ষ থেকে আগেই বিষয়টি আমাদের জানানো হয়েছে। এতে বোঝা যায়, বাণিজ্য শর্তে উন্নতি হয়েছে বাংলাদেশের। ইউনিটপ্রতি রপ্তানি মূল্য বাড়ায় আমরা বেশি পণ্য আমদানি করতে পারছি। সংশ্লিষ্টরা জানান, সাধারণত ‘বাণিজ্য শর্ত’ বলতে কোনো দেশের আমদানি পণ্যের সাপেক্ষে রপ্তানি পণ্যের আপেক্ষিক দাম বোঝানো হয়। যদি রপ্তানি পণ্যের দাম আমদানি পণ্যের তুলনায় বৃদ্ধি পায় তখন সেটিকে বাণিজ্য শর্তের উন্নতি বলে; আবার আমদানি পণ্যের তুলনায় রপ্তানি পণ্যের দাম কমে গেলে সেটিকে বাণিজ্য শর্তের অবনতি বলে। বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্য শর্ত ক্রমাগত নিম্নমুখী হওয়ায় দেশ থেকে মূলধন বাইরে চলে গেছে। তবে এখন পরিস্থিতি বদলে গেছে। দেশের গার্মেন্ট শিল্পে পরিবেশবান্ধব সবুজ কারখানা বাড়ছে। শ্রম পরিবেশ, অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থাসহ কমপ¬ায়েন্স ইস্যুতে ব্যাপক অগ্রগতি হয়েছে। উপরন্তু কটনভিত্তিক পোশাক থেকে অনেক উদ্যোক্তা হাইভ্যালুড বা উচ্চমূল্যের পোশাক রপ্তানির দিকে ঝুঁকছেন। এসব কারণে গত বছরের তুলনায় পণ্য কম রপ্তানি করেও বেশি ডলার পাওয়া যাচ্ছে। দেশের বাণিজ্য শর্তের উন্নতি হওয়ায় আবার আমদানিতে মূলধন অর্থাৎ ডলার সাশ্রয় হচ্ছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কমিশনের (ইউএসআইটিসি) তথ্য বিশ্লেষণ করে সিপিডি দেখিয়েছে, গত বছর বাংলাদেশ ১ ডজন পোশাক রপ্তানি করে ১৫ কেজি তুলা আমদানি করতে পারলেও চলতি বছর যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২১ কেজি তুলা আমদানির সুবিধা মিলছে। অন্যদিকে ইউরোপিয়ান পরিসংখ্যান সংস্থা ইউরোস্ট্যাটের তথ্য অনুযায়ী ইউরোপের বাজারে ২০২২ সালে ১০০ কেজি পোশাক রপ্তানি করে বাংলাদেশ ৬০২ কেজি তুলা আমদানি করলেও চলতি বছর একই পরিমাণ পণ্য রপ্তানি করে ৭৪৫ কেজি তুলা আমদানি করতে পারছে। অর্থাৎ গত বছর বাংলাদেশি উদ্যোক্তারা ১০০ কেজি পোশাক রপ্তানি করে ৬০২ কেজি তুলার দাম পেলেও চলতি বছর পাচ্ছে ৭৪৫ কেজি তুলার সমপরিমাণ দাম। এতে করে সমপরিমাণ গার্মেন্ট রপ্তানি করে আগে যে পরিমাণ পণ্য আমদানি করা যেত এখন তার চেয়ে বেশি মিলছে। পণ্যের রপ্তানি মূল্য বাড়ায় বাংলাদেশের পক্ষে বাণিজ্য শর্তের উন্নতি হয়েছে। এর ফলে তুলা ছাড়াও ইউরোপ ও আমেরিকার বাজার থেকে আগের তুলনায় চাল, গম, সয়াবিন, পামঅয়েল এবং ক্রুড অয়েল বেশি আমদানি করতে পারছে বাংলাদেশ। তৈরি পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমই থেকে গত জানুয়ারিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, ২০২২ সালের জানুয়ারি-অক্টোবর প্রান্তিকে ইউরোপের বাজারে তৈরি পোশাকের দাম বেড়েছে ইউনিটপ্রতি গড়ে ২ দশমিক ২৯ শতাংশ। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে বাংলাদেশি তৈরি পোশাকের দাম। বিজিএমইএ জানায়, ইউরোপের বাজারে ওই সময় চীনের তৈরি পোশাকের দাম ইউনিটপ্রতি ৪ দশমিক ৩৫ শতাংশ, তুরস্কের ১ দশমিক ৫৬ শতাংশ বাড়লেও বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের দাম বেড়েছে ১১ দশমিক ৫৯ শতাংশ পয়েন্ট। প্রতিবেদনে বিজিএমই সভাপতি ফারুক হাসান উল্লেখ করেন, বিশ্বব্যাপী অস্থিরতার মধ্যেও বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের দাম বৃদ্ধির বিষয়টি অত্যন্ত ইতিবাচক। পরিবেশবান্ধব সবুজ কারখানায় বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং পোশাক শিল্পে টেকসই উন্নয়নের ফলে তারা পশ্চিমের বাজারে পোশাকের দাম পাচ্ছেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন।

editor

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *