শুরু হলো ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি । বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয় একুশের গান। আবৃত্তি হচ্ছে ভাষাশহিদদের স্মরণে লেখা অমর কবিতা। ভাষার প্রতি আরো বেশি যত্নশীল হওয়ার বোধ তৈরি হবে নতুন করে। ভাষার অধিকারের সমতার বার্তা ছড়িয়ে পড়বে। তাগিদ তৈরি হবে সব ভাষা টিকিয়ে রাখার। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন আমাদের সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে সৃষ্টি করেছিল অভ‚তপূর্ব অভিঘাতের। স্বাধীনতার উন্মেষ-চেতনার ভিত রচিত হয়েছিল ৭২ বছর আগের সেই আন্দোলনে। সেই জাগৃতি ও স্ফুরণের ধারাবাহিক অর্জন আজকের বাংলাদেশ। ভাষাশহিদরা প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ের গহিনে চিরজাগরূক। গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণীয় তাঁরা। ‘উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা’-৭২ বছর আগে পাকিস্তান সরকারের এমন ঘোষণায় তৎকালীন পূর্ব বাংলার বাংলাভাষী সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভের আগুন ছড়িয়ে পড়ে। পূর্ব বাংলার মানুষ এই অন্যায় সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেনি। তাই বাংলা ভাষার সমমর্যাদার দাবিতে পূর্ব বাংলায় আন্দোলন দ্রুত দানা বেঁধে ওঠে। সেদিন আন্দোলন দমনে পুলিশ ১৪৪ ধারা জারি করে ঢাকা শহরে মিছিল-সমাবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি এ আদেশ অমান্য করে ছাত্র ও প্রগতিশীল রাজনৈতিক কর্মীরা মিলে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন। মিছিলটি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের কাছাকাছি এলে পুলিশ ১৪৪ ধারা অবমাননার অজুহাতে আন্দোলনকারীদের ওপর নির্বিচার গুলিবর্ষণ করে। রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে শহীদ হন সালাম, রফিক, শফিক, জব্বার, বরকতসহ নাম না জানা আরো অনেকে। আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে দেশজুড়ে।
ফেব্রæয়ারির ২১ তারিখ আমাদের ভাষাশহীদ দিবস; একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। পৃথিবীর সব জাতিগোষ্ঠীর মানুষের মাতৃভাষার অধিকার ও মর্যাদার স্বীকৃতি স্মরণ করিয়ে দেওয়ার এই দিন বাঙালির জন্য বিশেষভাবে আবেগময়। মাতৃভাষার জন্য বুকের রক্ত দেওয়ার নজির পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। ভাষার জন্য বাংলার সন্তানদের এই বিরল আত্মত্যাগ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায় ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর। এদিন ইউনেসকো একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণা করে। এর মধ্য দিয়ে একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে এখন বিশ্বের দেশে দেশে পালন করা হয়। শুধু বাংলা নয়, বাংলাদেশ ও বহির্বিশ্বে আরো যেসব ভাষার মানুষ আছে, তাদেরও নিজ নিজ মাতৃভাষার বিকাশের উদ্যোগ বেগবান করার তাগিদ দেয় এই দিবস। ভাষা আন্দোলনের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মূল্য সীমাহীন। এ কারণে ফেব্রুয়ারি এলেই দেশজুড়ে শুরু হয় নানা রকম সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড। শহিদদের স্মরণে বাংলা একাডেমি মাসব্যাপী আয়োজন করে অমর একুশে বইমেলা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাকিম চত্বরে বসেছিল জাতীয় কবিতা উৎসব। শহীদ মিনারে থাকে নানা রকম সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড। থাকে ভাষাশহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের কর্মসূচি।