মোহাম্মদী ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা

মোহাম্মদী ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা

-ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা
বিশেষ সংবাদদাতা:
মোহাম্মদী ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। আমাদের মোর্শেদ সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.) পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা পালনের মাধ্যমে নিজেকে চরিত্রবান বানানোর শিক্ষা দিয়েছেন। প্রধানত ৪টি শিক্ষা তিনি আমাদের দিয়েছেন আত্মশুদ্ধি, দিল জিন্দা, নামাজে হুজুরি এবং আশেকে রাসূল হওয়ার। নিজের আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে নামাজে আল্লাহর সন্ধান লাভ করে নিজের দিলের মাঝে আল্লাহ্ নামের জ্বিকির প্রতিস্থাপন করে আশেকে রাসূল হওয়া। এগুলো হচ্ছে মৌলিক প্রধান ৪টি শিক্ষা। এছাড়াও তিনি শিক্ষা দিয়েছেন ইসলামের স্তম্ভগুলো। ইসলামে যে ৫টি স্তম্ভ আছে সেগুলো- কালিমা, নামাজ, রোজা, হজ, যাকাত ওনার শিক্ষার অন্তর্ভুক্ত ছিল। আমরা যদি ওয়াজিফা বই খুলি আমরা ওয়াজিফা বইয়ের মধ্যেও দেখতে পাবো যে, তিনি প্রত্যেক ওয়াক্তের নামাজের মধ্যে তিনি মোরাকাবার কথা বলেছেন এবং ওয়াক্তের নামাজের পরে মোরাকাবার কথা বলেছেন।


মোহাম্মদী ইসলামের নেতৃত্ব প্রদানকারী মহামানব ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুর গত ২৪ নভেম্বর বাবে রহমত দেওয়ানবাগ শরীফে সাপ্তাহিক আশেকে রাসুল (সা.) মাহ্ফিলে আশেকে রাসুলদের উদ্দেশে এ কথা বলেন।


ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুর বলেন, যদিও ইসলামের আদি পিতা হযরত ইব্রাহিম (আ.) কিন্তু তাঁর সংবিধান লিপিবদ্ধ হয়েছে হযরত রাসূল (সা.)-এর সময়ে। হযরত রাসূল (সা.) আমাদের একটি আদর্শ জীবন ব্যবস্থা দিয়েছেন, নামাজের মাধ্যমে দিনে ৫ বার আমরা যাতে আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করি, রোজার মাধ্যমে আমরা যাতে উপবাস থেকে গরিব-দুঃখীর উপবাস থাকার কষ্ট অনুধাবন করতে পারি। আমরা যে আল্লাহ্কে ভালোবাসি তার একটি উদাহরণ হচ্ছে সালাত। আমরা আল্লাহর আনুগত্য করি, তার উৎকৃষ্ট একটি উদাহরণ হচ্ছে সালাত বা নামাজ। ক্ষুধার জন্যে জগতের মানুষ মারামারি, কাটাকাটি, পিটাপিটি, কত কিছুই না করে। অথচ আমরা সূর্য উদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আমাদের সৃষ্টিকর্তা, লালনকর্তা, পালনকর্তা মহান রাব্বুল আলামিনের ভালোবাসায় এবং তাঁর আনুগত্য করায় আমরা কোনো খাবার ধরি না। যখন প্লেন ছিল না মানুষ কত কষ্ট করে পায়ে হেঁটে, জাহাজে চড়ে হজে গিয়েছে। এখন প্লেন আছে তারপরেও মানুষ নিজের বাড়ি-ঘর সবকিছু ছেড়ে ঘন্টার পর ঘন্টা, দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, আরবের সেই মরুভূমিতে থেকে আল্লাহর নির্দেশ তিনি ফরজ করেছেন এই নির্দেশ আমরা পালন করি। সাফা-মারওয়া দৌঁড়াই। এখন তো ইসমাইল (আ.)-এর সেই পানির কান্না নেই। আমরা এখনও দৌঁড়াই কারণ তাকে অনুসরণ করি। আল্লাহ্ আমাকে নির্দেশ করেছেন, কি কি করতে হবে। হজ্জের নিয়ম-কানুনগুলো দিয়েছেন সেগুলো আমরা পালন করি।


ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুর বলেন, একইভাবে যাকাত। যাকাতকে আমরা অনেক মানুষই সঠিক মূল্যায়ন করি না। যাকাত শব্দের অর্থ বৃদ্ধি করা, পবিত্র করা। যাকাত দেওয়ার অর্থ হচ্ছে আমাদের সম্পদকে পবিত্র করা। তো আসলে বিষয় হচ্ছে আপনি-আমি যে আল্লাহর আনুগত্য করি, সেই আনুগত্য করার একটি বড় প্রমাণ আমরা দিতে পারি আমাদের যাকাতের মাধ্যমে। আল্লাহ্ বলেছেন- “তুমি যাকাত আদায় কর।” যাদের উপরে যাকাত ফরজ হয়েছে আমরা যদি যাকাত দেই অর্থাৎ আমার অর্জিত সম্পত্তি থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পত্তির অংশ আমি যদি (আমার উপরে যদি যাকাত ফরজ হয়ে থাকে) আল্লাহর নির্দেশে দান করি মূলত তাই যাকাত। এখন এই যে আল্লাহর নির্দেশে আমি দিলাম; এই দেওয়ার উদ্দেশ্য হচ্ছে আমি যে তাঁর আনুগত্য করি, আমি যে তাকে ভালোবাসি এটার একটা বড় প্রমাণ। দ্বিতীয়ত হচ্ছে এই যে আমি যত টাকা-পয়সা, ধন-সম্পত্তি যাই রোজগার করি সবকিছুর মূলে তো আল্লাহ্। আজ যেই জমিন আমরা ব্যবহার করছি,এই জমিনের মালিককে বলুন? যে আসমান আমরা ব্যবহার করছি,এই আসমানের মালিক কে বলুন? যে গাছ আমাদের ছায়া দেয়,যেই গাছের আসবাবপত্রে আমরা এখন বসে আছি, এর মালিক কে বলুন? এই যে জমিন, জমিন থেকে মাটি নিয়ে ইট দিয়ে দালান বানিয়েছেন, বলুন এর মালিক কে? যে পশুর মাংস ভক্ষণ করছি গরু, ছাগল, মহিষ ইত্যাদি এদের মালিক কে? যে শস্য ভক্ষণ করছি মানে যে শস্য খাচ্ছি অর্থাৎ ধান, চাল, গম, ময়দা, আটা, সুজি এগুলোর মালিক কে বলুন? আল্লাহ্। তাহলে আমরা যদি হিসাব করে দেখি যে আমরা যত আয় করি, যত রোজগার করি এবং যত কিছুই করি না কেন আল্লাহর মালিকানার বাইরে তো যাওয়ার ক্ষমতা আমাদের নেই। তিনি সব কিছু আমাদের দিয়েছেন। আমরা ক্ষুধা নিবারণ করতে পারি। এই জমিকে তিনি বলে দিয়েছেন- “হে জমিন! তুমি উর্বর হয়ে যাও তোমার উপরে চাষ করে আমার মানুষ খেয়ে বেঁচে থাকতে পারে।” তিনি আসমানকে বলেছেন -“তুমি মেঘ সৃষ্টি কর, বৃষ্টি দাও পানি দাও। মিঠা পানি দাও, যাতে এই সুপেয় পানি পেয়ে আমার মানুষ বেঁচে থাকতে পারে।” তিনি সূর্যকে বলেছেন-“তুমি আলোর কিরণ-বিকিরণ কর যাতে তোমার আলোয় মানুষ দিনের আলোয় ফকফকে/ক্রিস্টাল ক্লিয়ার দেখতে পারে।” আল্লাহ্ নির্দিষ্ট কিছু শ্রেণীর পশু পাখিকে নির্দেশ করেছেন (আমরা যাদের গবাদি পশু বলি), “তুমি মানুষের কাছে থাকো, দিনশেষে মানুষ তোমাকে ভক্ষণ করবে। তোমাকে হত্যা করবে তবুও তুমি মানুষকে ছেড়ে যেও না। তুমি মানুষের কাছে থেকো। দেখেন গরু জানে, ছাগল জানে দিন শেষে আপনি তাকে জবাই করে খাবেন। তার সামনেই অন্য পশুকে জবাই করে খান, সে কান্না করে কিন্তু আপনাকে ছেড়ে যায় না। দিন শেষে আপনার উঠানেই ফিরে আসে। কারণ মালিকের নির্দেশ। তার জন্য নির্দেশ হয়েছে তার জন্ম হয়েছে কোরবানি হওয়ার জন্য। সে নিজেকে কতল করবেন আপনাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য। এই গবাদি পশুগুলোর দিকে যদি তাকান দেখবেন, তারা আল্লাহর জন্য কতটুকু আত্মত্যাগ করে? তারা মালিককে ভালোবেসে চাকুর নিচে গলা দিয়ে দিচ্ছে, আপনি-আমি যাতে খেতে পারি। তাহলে দেখুন আসমান, জমিনে আল্লাহ্ যা সৃষ্টি করেছেন সবকিছু মানুষকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি করেছেন। যাতে মানুষ খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকতে পারে, মানুষের স্বচ্ছলতা আসে, মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব আসে, মানুষ,যাতে তাকে ব্যবহার করতে পারে। আল্লাহর বেলায় এখানে যারা ইংলিশ সম্পর্কে অবগত আমরা একটি শব্দ ব্যবহার করি ‘ক্রিয়েটর’। আল্লাহর বেলায় ক্রিয়েটর আর মানুষের বেলায় আমরা শব্দ ব্যবহার করি ‘ইনভেন্টর’। মানুষকে আমরা কখনো ক্রিয়েটর বলতে পারি না। ক্রিয়েটর শব্দের অর্থ যিনি সৃষ্টি করেন। এই ‘ক্রিয়েটর’ এর বাংলা হচ্ছে ‘সৃষ্টিকর্তা’। আর ‘ইনভেন্টর’ এর বাংলা হচ্ছে ‘আবিষ্কারক’। আল্লাহ হচ্ছেন সৃষ্টিকর্তা, তিনি সৃষ্টি করেন। কিভাবে? কুন ফায়া কুন এর মাধ্যমে। হয়ে যাও, হয়ে যায়। তিনি সৃষ্টি করেন আর মানুষ তার সৃষ্টি থেকে কিছু কিছু জিনিস নিয়ে নতুন একটি জিনিস আবিষ্কার করে।


ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুর বলেন, তাহলে মানুষ হচ্ছে ইনভেন্টর অর্থাৎ আবিষ্কারক এবং আল্লাহ হচ্ছেন ক্রিয়েটর অর্থাৎ সৃষ্টিকারী। আল্লাহ্ সৃষ্টি করেন, মানুষ এই সৃষ্টি থেকে কিছু কিছু জিনিস একত্রিত করে। যেমন মাটির মধ্যই দেখা যাবে বা মাটির নিচে বিভিন্ন স্বর্ণ, রৌপ্যসহ বিভিন্ন সম্পদ আছে।ঐ মাটির নিচে স্বর্ণ মিশ্রিত অবস্থায় থাকে। এই স্বর্ণকে মাটির নিচ থেকে আহরণ করে বিভিন্নভাবে তা পরিষ্কার করে আমরা স্বর্ণের অর্নামেন্টস বানাই (কানের দুল, হাতের ব্রেসলেট, চুরি, নাকের ফুল)। এই স্বর্ণ আল্লাহ্ কিন্তু অলরেডি সৃষ্টি করেছেন। স্বর্ণ আমরা বানাতে পারবো না। এক জাররা পরিমাণ স্বর্ণ বানানোর ক্ষমতা আমাদের নেই। আমরা স্বর্ণকে খুঁজে বের করতে পারি। তারপরে সেটাকে পলিশ করে শাইন করতে পারি। তারপরে সেটিকে আমরা বিভিন্নভাবে ব্যবহার করতে পারি। অলঙ্কারে রূপ দিতে পারি। কেউ চাইলে বর্ণও বানাতে পারেন। কেউ চাইলে স্বর্ণের থালা বানাতে পারেন। সেটি মানুষ করতে পারে কিন্তু মানুষ তৈরি করতে পারে না। মানুষ আবিষ্কারক তৈরি করতে পারেন একমাত্র আল্লাহ্। তাহলে জমিন, আসমান সবকিছু আল্লাহ্ সৃষ্টি করেছেন কেন? আমাদের জন্য। তার মধ্যে মানুষ অর্থাৎ আমাদেরও আল্লাহ্ সৃষ্টি করেছেন। এখানে আজ আমাদের সাথে উপস্থিত একজন স্বাবলম্বী মানুষ আর একজন একেবারে হতদরিদ্র মানুষ উভয়ের হাত কাটুন, দেখুন লাল রঙের রক্ত বের হবে। উভয়ের দেহের হাড়গুলো গুনে দেখবেন একই সমান হাড় দেখা যাবে। উভয়কে ভালোবাসা দিয়ে বুকে জড়িয়ে ধরুন দেখবেন উভয়ই আপনার প্রতি ভালোবাসার বিনিময় করছে। তাহলে মানুষে মানুষে তো ভেদাভেদ নেই। ভেদাভেদ আল্লাহ্ তৈরি করেননি। আল্লাহ্ মানুষকে বানিয়েছেন আর মানুষ ভেদাভেদ বানিয়েছি। তুমি নিচু শ্রেণী, তুমি উঁচু শ্রেণী, তুমি গরীব, আমি ধনী, তুমি অশিক্ষিত, আমি শিক্ষিত/তুমি ছোটলোক, আমি বড়লোক/তুমি খারাপ, আমি ভালো এই জায়গাগুলো তৈরি করেছি আমরা। আল্লাহ্ তখন এই জায়গাগুলোর বৈষম্যতা যাতে না থাকে এজন্য তিনি বারংবার মনে করাচ্ছেন আমাদের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ্। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে আপনার-আমার সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ্। আমি এই আল্লাহর কাছ থেকে এসেছি এবং আমাকে পুনরায় সেই আল্লাহর কাছে ফেরত যেতে হবে। এই আসা এবং যাওয়ার মাঝে তিনি আমাদের কিছু নিয়মাবলি বলেছেন। দিনে ৫ বার তুমি আমার কাছে আত্মসমর্পণ করবে। অতঃপর তুমি না খেয়ে রোজা রাখবে যাতে ঐ ধনী-গরীবের বৈষম্যতা বজায় না থাকে। গরীবকে না খেয়ে কষ্টে দেখে তুমি নাক ছিটকে চলে যাও? আল্লাহ্ বিধান করলেন- “আমি এমন এক ব্যবস্থা করলাম, এই মাসকে আমি বললাম সাওম, সাওমের মাস। এই মাস বরকতের মাস, রহমতের মাস। “এই মাসে তুমি না খেয়ে থাকবে এবং সূর্য উদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত গরীবের কষ্ট ভোগ করবে আর তার প্রতিদান আমি নিজের হাতে তোমাকে দিবো। কারণ তুমি তো আমাকে মেনে ক্ষুধায় কষ্ট করেছো।” তারপরে গরীব যাতে আরও গরীব না হয়ে যায়, ধনীরা যাতে আরও ধনী না হয়ে যায়, উভয়ের মধ্যে যাতে বৈষম্য কমে আসে, তিনি সেই জন্য যাকাতের বিধান দিলেন। যে তুমি যতই সম্পদ অর্জন কর এইখানে আল্লাহর একটি হক আছে। এটি কার হক? আল্লাহর হক। এই হকে তিনি বিধান করে বলেছেন, তোমার এতো সম্পদ হলে, এই সম্পদের একটি অংশ তুমি গরীবকে দান করবে। কেন বললেন, গরীবকে দান করবে? কারণ আল্লাহর হক গরীবের হক। আমরা কি আল্লাহর কাছে টাকা পাঠাইতে পারবো, বলুন? দুনিয়াতে কি এমন কোনো মানি এক্সচেঞ্জ, ডিএইচএল, কুরিয়ার সার্ভিস আছে যেটা আল্লাহর কাছে যাবে? আল্লাহ্ বললেন, আমি তোমাকে এমন একটি বিধান দিয়ে দিলাম, যেটা তোমার আপন ভাই-বোনকে দিতে পারো, আত্মীয়-স্বজনকে দিতে পারো, তোমার আশপাশের গরীব মানুষজনকে দিতে পারো, পাড়া-প্রতিবেশিকে দিতে পারো। আমার হক তুমি আদায় কর। এটি তোমার সম্পত্তি নয়। আসমান-জমিনের সকল সম্পত্তির মালিক কে বলুন? আল্লাহ মালিক। আপনার-আমার সকল সম্পত্তির মালিক কে বলুন? আমরা ভোগ দখলকারী মাত্র কিন্তু এই সম্পত্তির মালিক তো আল্লাহ্। তিনি তাঁর এই সম্পদকে পবিত্র রাখার জন্য তিনি নির্দেশনা দিয়েছেন। কি? এই অংশ তুমি আদায় করবে। কার কাছে? যাদের এই অর্থ দরকার, যাদের এই অর্থের প্রয়োজন তাদের কাছে তুমি আদায় করবে। কি আদায় করবে? নিসাব পরিমাণ, একটি নির্দিষ্ট সংখ্যা। এই পরিমাণ সম্পদ হলে এই পরিমাণ তুমি আদায় করবে। কিন্তু আমরা কি করি জানেন? আমরা বোকা মানুষ। ঐ ২ পয়সা রোজকারের আশায়, ঐ ২ পয়সা লাভের আশায় ঐ যাকাত আদায় করতে চাই না। মনে কষ্ট পাই যাকাত আদায় করতে। আবার অনেক সময় দেখা যায় সেই যাকাত আদায় করতে গিয়ে আমরা অনেক প্রচার করে যাকাত আদায় করার চেষ্টা করি। অর্থাৎ মাইকিং করে যাকাতের কাপড় দেওয়া, যাকাতের কাপড় দেওয়া হবে। এইরকম করি। এইভাবে যাকাত আদায় না করা উত্তম। আশেকে রাসূলের জন্য নীরবে-নিভৃতে যাকাত আদায় করাই ভালো। আমাদের যার যার যাকাত আদায় করতে হবেই। কারণ সম্পদের মালিক তো আমি নই। আপনি-আমি সম্পদের মালিক বলুন? না-কি আল্লাহ্ মালিক? আল্লাহ তাঁর সম্পদের মালিকানায় বলেছেন, এই সম্পদ হলে এইটুকু আদায় করবে, তো সেটি তো আমার আদায় করতেই হবে। আমি তো তার থেকে বের হতে পারছি না। আর যদি আজ পালাই, কাল কি আল্লাহর কাছ থেকে পালাতে পারবো? আল্লাহ সত্য-মিথ্যা সব জানেন। তিনি সব দেখেন।


ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুর বলেন, তাহলে যাদের উপরে যাকাত আদায় করা ফরজ হয়েছে, আমি প্রত্যেক আশেকে রাসূল ভাইয়ের কাছে অনুরোধ করবো আপনারা দয়া করে যাকাত আদায় করবেন এবং আমার বই ‘মোহাম্মদী ইসলামের তালিম’-এ যাকাতের উপরে বিস্তারিত সব লেখা আছে। কতটুকু সম্পদ হলে কতটুকু আদায় করবেন? কাদের উপরে যাকাত আদায় করা প্রথম দায়িত্ব? সেখানে সব বিস্তারিত বর্ণনা করা আছে। আপনারা যদি চান “মোহাম্মদী ইসলামের তালিম”-এর বইটি খুললে আরও বিস্তারিত জানতে পারবেন, যাকাত সম্পর্কে যে, কিভাবে আমরা যাকাত আদায করতে পারি? মনে রাখবেন সম্পদ যত বেশি মুষ্টি করে ধরে রাখতে চাইবেন, এটা পানির মতো। আমার হাতের দিকে তাকান এটি পানির মতো। এটিকে যত মুষ্টি করতে চাবেন তত পড়ে যাবে। একে যত খুলে রাখবেন মালিকের উপরে ভরসা করে এটি তত বৃদ্ধি পাবে। একে যত চেপে ধরতে চাবেন এটি আপনার হাত থেকে ছুটে যাবে। তাহলে কিসের এতো লোভ? কিসের এতো সম্পদ ধরে রাখার লালসা? মুখে মুখে বলতে পারবো আমার লালসা নেই, চরিত্র বলবে আমার লালসা আছে। অতএব,আশেকে রাসূলেরা শিক্ষা গ্রহণ করেন আমি আমার না। অতএব আমার কোনো সম্পত্তি যদি থাকেও সেটি ভোগদখলকারী হিসেবে আছে, এটি নিজের না। অতএব,কোনো সম্পত্তি কে নিজের মনে না করে সম্পত্তিকে আল্লাহর মনে করি এবং আমরা শুধু ভোগদখলকারী হই, তাহলে দেখবেন যাকাত আদায় করা আমাদের জন্য অনেক সহজ হয়ে গিয়েছে। আর যদি সম্পত্তিকে মনে করেন আমার, আমার উপার্জিত অর্থ। অবশ্যই আপনার উপার্জিত অর্থ কিন্তু এই উপার্জনের পিছনেও আল্লাহ্ই আছে। আপনি উপার্জন করেন সত্য, সেখানে কি আল্লাহ নেই? আল্লাহ্ ছাড়া উপার্জন হয়েছে? তাহলে আল্লাহ্কে বাদ দিয়ে তো উপার্জন করার সুযোগ নেই। অতএব আমি ভোগদখলকারী। দুনিযায় আমি এসেছি একটি টেম্পরারি ভিসা নিয়ে। এর কোনো পারমানেন্ট ভিসা নেই। কারো ভিসার বযস ৩০ বছর, কারো ভিসার বয়স ৪০ বছর, কারো ভিসার বয়স ৫০, ৬০, ৭০ বছর। আবার কারো ভিসা মায়ের পেটেই শেষ হয়ে যায়। আবার কারো ভিসা ২/৩ মাসে শেষ হয়ে যায়। একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য আল্লাহ্ আমাদের নির্দিষ্ট কিছু কাজ দিয়ে পাঠিয়েছেন। দুনিয়ায় যাবে তুমি আমার সন্তুষ্টি অর্জন করবে। আমার ইবাদত করবে পাশাপাশি তোমার জীবন ধারণ এবং প্রতিবেশীদের প্রতি দায়িত্ব তুমি পালন করবে। আল্লাহ্র সন্তুষ্টি অর্জন হয়েছে কি-না, ঠিক ঐ ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে পরীক্ষা শুরু হবে? যেটি ইমানি পরীক্ষা। সেই পরীক্ষায় হিসাব-নিকাশ শুরু হবে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন হয়েছে কি হয়নি? আমরা যদি এই বিষয় খুব সহজভাবে বুঝি,দুনিয়া হচ্ছে একটি পরীক্ষাগার। যেখানে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে হয। আর পরীক্ষা দেওয়ার সময় আমরা ইমানি পরীক্ষা দিবো। দেখবেন, আমরা অনেক পাপ কাজ থেকে নিজেকে দূরীভূত করে ফেলেছি। আমরা আল্লাহ্কে ভয় করা শুরু করবো। আমরা আল্লাহ্কে ভালোবাসা শুরু করবো। আমরা আল্লাহর আনুগত্য করা শুরু করবো এবং তার প্রতি মহব্বত, তার প্রতি এশক আমাদের বৃদ্ধি পাবে। আল্লাহর কাছে কোনো কিছু গোপন আছে? তাহলে কিসের এতো ফাঁকিবাজি। আল্লাহ্ আমাকে স্বাধীনতা দিয়েছেন। তুমি তোমার সিদ্ধান্ত নেও তুমি তোমার সংসার কর, তুমি তোমার বাচ্চাকে আদর কর, তুমি সংসারী হও, তুমি সমাজের মানুষের প্রতি দয়াশীল হও। তুমি তোমার সব কাজ কর তবে অন্যায় থেকে দূরীভূত থাকো। সৎ কাজ কর, নিজেকে চরিত্রবান বানাও। মোহাম্মদী ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। যেই জীবন ব্যবস্থা আপনাকে আল্লাহর সন্তুষ্টির কথা বলবে বাট আপনাকে অশান্ত করবে না আপনাকে শান্ত রেখে আল্লাহর সন্তুষ্টির কথা বলবে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির কথা শিক্ষা দিবে। আমার মোর্শেদ শাহ দেওয়ানবাগী (রহ.) আমাদের এই মোহাম্মদী ইসলামের শিক্ষা দিয়েছেন, যে মোহাম্মদী ইসলামের আদর্শ অনুসরণ করে আমরা নিজেকে আলোকিত করতে পারি, আমরা নিজেকে চরিত্রবান বানাতে পারি, আমরা নিজেকে আল্লাহ্ ও হযরত রাসূল (সা.)-এর পথে ধাবিত করতে পারি।
পরিশেষে মোহাম্মদী ইসলামের নেতৃত্বপ্রদানকারী মহামানব ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুর তাঁর বাণী মোবারক প্রদান শেষে আখেরি মোনাজাত প্রদান করেন।

editor

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *