বাণিজ্য ডেস্ক: লেনদেন ভারসাম্যে (বিওপি) বাংলাদেশ মাঝারি ধরনের ঝুঁকিতে রয়েছে বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক ঋণমান যাচাইকারী বেসরকারি প্রতিষ্ঠান মুডিস ইনভেস্টর সার্ভিস। প্রতিষ্ঠানটির মতে, বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়ায় এই ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। তবে সার্বিক অবস্থা পর্যালোচনা করে বাংলাদেশের ‘বি১’ ঋণমান বহাল রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক এই ক্রেডিট রেটিং এজেন্সি। সম্প্রতি প্রকাশিত মুডিসের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। এর আগে গত মে মাসে বাংলাদেশের ঋণমান এক ধাপ নামিয়ে ‘বিএ৩’ থেকে ‘বি১’ দিয়েছিল মুডিস। তখন ঋণমান কমানোর কারণ হিসেবে ডলার সংকট, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়া, বৈদেশিক লেনদেনের ক্ষেত্রে উঁচু মাত্রার দুর্বলতা ও তারল্যের ঝুঁঁকি বিবেচনায় নেওয়ার কথা জানানো হয়। বাংলাদেশের বৈদেশিক রিজার্ভ প্রথমবারের মতো সর্বোচ্চ ৪৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গিয়েছিল ২০২১ সালের আগস্ট মাসে। এর পর থেকে রিজার্ভ কমতে থাকে। আমদানি নিয়ন্ত্রণ ও ব্যয় সংকোচনের পদক্ষেপ নিয়েও রিজার্ভ কমে যাওয়া থামানো সম্ভব হয়নি। বর্তমানে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ১৯.৪৫ বিলিয়ন ডলার। মুডিসের তথ্য মতে, ভারতের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৫৯৫ বিলিয়ন ডলার। পাকিস্তানের রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ১৩ বিলিয়ন ডলার ও শ্রীলঙ্কার রিজার্ভ দাঁড়ায় ৩.৫ বিলিয়ন ডলার। রিজার্ভের এ বিষয়টি পর্যালোচনা করে মুডিসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্যের সংকটে মাঝারি ধরনের সংবেদনশীলতা রয়েছে বাংলাদেশের। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা সবচেয়ে নাজুক অবস্থায় রয়েছে। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, বাংলাদেশের লেনদেন ভারসাম্য ঝুঁকির বড় কারণ রিজার্ভ ক্রমাগত কমে আসা।’ রিজার্ভের দুটি দিক- লেভেল ও নির্দেশনা। এখন রিজার্ভ লেভেল কম। এই লেভেল ঠিক রাখতে দেড় বছর ধরে সঠিক নির্দেশনা আসেনি। এ কারণে রিজার্ভের নেতিবাচক অবস্থার পরিবর্তন হয়নি। এমন নির্দেশনা চলতে থাকলে রিজার্ভ চার-পাঁচ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসবে। তিনি বলেন, রিজার্ভ ১০ বিলিয়নে নেমে এলে মাঝারি থেকে উচ্চঝুঁকিতে থাকবে বাংলাদেশ। এই ঝুঁকি এড়াতে এখনই বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনার পরিবর্তন আনা উচিত। সেটি করতে পারলে রিজার্ভ ঠিক হয়ে যাবে। এ ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সামষ্টিক অর্থনীতি ব্যবস্থাপনায় জোরদার পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। বিশেষ করে মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনা, ঋণের সুদ বাড়ানোসহ নানা পদক্ষেপ নিতে হবে। বহির্বিশ্বের সঙ্গে লেনদেনে চলতি হিসাব ও আর্থিক হিসাবের ভিত্তিতে সামগ্রিক লেনদেন ভারসাম্যের চিত্র পাওয়া যায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব মতে, বর্তমানে সামগ্রিক লেনদেন ভারসাম্যে নেতিবাচক অবস্থা আছে।
অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে সামগ্রিক লেনদেন ভারসাম্যে ২৮৫ কোটি ডলারের বেশি ঘাটতি ছিল। বিশ্লেষণে মুডিস বলেছে, দক্ষিণ এশিয়ার চারটি দেশের মধ্যে বৈচিত্র্যপূর্ণ পণ্য রপ্তানি করায় তুলনামূলক কম ঝুঁকিতে ভারত। তবে রপ্তানি কিছুসংখ্যক পণ্যে কেন্দ্রীভূত থাকায় পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ঋণমান আভাস কমেছে এবার যুক্তরাষ্ট্রের ঋণমানবিষয়ক আভাস অবনমন করেছে মুডিস। দেশটির ঋণমান তারা ‘স্থিতিশীল’ থেকে অবনমন করে ‘ঋণাত্মক’ করেছে। কারণ হিসেবে যে দুটি বিষয় তারা চিহ্নিত করেছে, সে দুটি হলো যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় ঋণ বেড়ে যাওয়া এবং তার ঋণ নেওয়ার সক্ষমতায় ভাটা পড়া। ঋণমান নির্ণয়কারী সংস্থাগুলোর মধ্যে কেবল মুডিস যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ ঋণমান বজায় রেখেছে, যদিও তারা এবার আভাস নেতিবাচক করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির শক্তি সম্পর্কে বলার পাশাপাশি ট্রেজারি বন্ডের সুদহার বৃদ্ধির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের ঋণ নেওয়ার সক্ষমতা চাপের মুখে পড়বে বলে মনে করে মুডিস।