কক্সবাজার সংবাদদাতা: গত ২৯ জুলাই থেকে পরীক্ষামূলকভাবে চালু হলো কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলায় কয়লাভিত্তিক মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম ইউনিট। এই ইউনিটের উৎপাদনক্ষমতা ৬০০ মেগাওয়াট। দুপুর ১২টার দিকে এই ইউনিটে পরীক্ষামূলকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করা হয়। মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ প্রকল্পের তত্ত¡াবধায়ক প্রকৌশলী মনোয়ার হোসেন মজুমদার পরীক্ষামূলক বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, পরীক্ষামূলক উৎপাদনের শুরুতে ৩৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। বিকেল থেকে এর উৎপাদন ১২৫ থেকে ১৫০ মেগাওয়াট পর্যন্ত হতে পারে। এই ইউনিটে ১২৫ থেকে সর্বোচ্চ ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎই পরীক্ষামূলকভাবে উৎপাদন করা হবে। উৎপাদিত এই বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। আগামী ডিসেম্বর নাগাদ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের এই ইউনিটে পুরো সক্ষমতা অনুযায়ী ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করার আশা করছেন কর্মকর্তারা।
কক্সবাজার জেলার মহেশখালী উপজেলার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ মাতারবাড়ী ও ধলঘাটা ইউনিয়নের মাঝামাঝি এক হাজার ৬০৮ একর জমির ওপর স্থাপিত হচ্ছে দুটি ইউনিটে বিভক্ত ১২০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র। কোল পাওয়ার জেনারেশন কম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিপিজিসিএল) প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।
মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ প্রকল্পের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মনওয়ার হোসেন মজুমদার জানিয়েছেন, মাতারবাড়ী পাওয়ার প্লান্টের দুটি ইউনিটের মধ্যে প্রথমটি শনিবার পরীক্ষামূলকভাবে চালু হচ্ছে।
এই ইউনিটের উৎপাদন ক্ষমতা ৬০০ মেগাওয়াটের হলেও প্রাথমিকভাবে ১২৫ থেকে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পরীক্ষামূলকভাবে উৎপাদন করা হবে। এজন্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। উৎপাদিত এই বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডেই সরবরাহ করা হবে বলে জানান তিনি।
মাতারবাড়ী পাওয়ার প্লান্টের দ্বিতীয় ইউনিটের পরীক্ষণমূলক উৎপাদন শুরুর সম্ভাবনা রয়েছে আগামী ডিসেম্বর মাসে। সেটিতেও পরীক্ষণমূলক উৎপাদনে ১২৫ থেকে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে।
মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্পের নির্বাহী পরিচালক আবুল কালাম আজাদ জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চলতি বছরের ডিসেম্বরে ইউনিটটির নিয়মিত উৎপাদন প্রক্রিয়ার উদ্বোধন করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। প্লান্টের সম্মিলিত উৎপাদনক্ষমতা এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট, আগামী মার্চ বা এপ্রিল মাসে পুরোদমে বাণিজ্যিক উৎপাদনে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে, ২০২৪ সালের জুলাই মাসে এটি পুরোপুরি চালুর পূর্বপরিকল্পনা আছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
সরকারের মেগাপ্রকল্পগুলোর অন্যতম মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্র। এটি জাপানের আর্থিক সহায়তায় প্রায় ৫১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে এবং এটি প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্পগুলোর মধ্যে অন্যতম।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মতে, পুরো প্লান্টে প্রতিদিন ১০ হাজার টন ও প্রতিটি ইউনিটে পাঁচ হাজার টন কয়লা প্রয়োজন হবে। এখন পর্যন্ত তিন লাখ টন কয়লা সংরক্ষণ করা হয়েছে এবং আরো ৬৫ হাজার টন কয়লা নিয়ে আগামী ৭ আগস্ট উৎপাদন এলাকায় পৌঁছবে।
প্রকল্প পরিচালক জানান, জাহাজ থেকে সরাসরি কয়লা আনলোড করার জন্য প্রকল্প এলাকায় দুটি জেটির পাশাপাশি ১.৭ মিলিয়ন টন স্টোরেজ ক্ষমতার চারটি ট্যাংক ইতোমধ্যে নির্মিত হয়েছে। ট্যাংকগুলোর ৬০ দিনের জন্য কয়লা সংরক্ষণের সক্ষমতা রয়েছে। জাহাজ থেকে কয়লা আনলোড করতে দেড় থেকে দুই দিন সময় লাগে। কয়লা উত্তোলনের জন্য দুটি জেটি এবং কয়লা সংরক্ষণের জন্য চারটি ট্যাংক নির্মাণসহ প্রকল্পের নির্মাণকাজ প্রায় শেষ হয়েছে। মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর ও মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্র সাইটের কাছে এলএনজি ও এলপিজি টার্মিনাল নির্মাণ করা হচ্ছে।