নাজনীন আখতার: দেশে সর্বশেষ জনশুমারি ও গৃহগণনা অনুসারে পুরুষের চেয়ে নারীর সংখ্যা ১৬ লাখ ৩৪ হাজারের বেশি। আবার কর্মক্ষম হিসেবে ১৫ থেকে ৫৯ বছর বা ২৫ থেকে ৫৯ বছর বয়সী নারীর সংখ্যা পুরুষের চেয়ে বেশি। তবে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে এর কোনো প্রতিফলন নেই। শ্রমে পুরুষের তুলনায় নারীর অংশগ্রহণ এখনো অনেক কম। শহরে অসমতার হার আরও বেড়েছে।
জনসংখ্যাবিদ ও অর্থনীতিবিদদের মতে, কর্মদক্ষ নারীদের যতটা শ্রমশক্তিতে থাকার কথা, ততটা নেই। পড়াশোনার মাঝপথে বিয়ে বা বাল্যবিবাহের শিকার মেয়েদের অনেকে শ্রমশক্তির বাইরে থেকে যায়। শহরে অনেক নারী সামাজিক ও পারিবারিক কারণে শ্রম থেকে ঝরে পড়ছেন। অন্যদিকে গ্রামে কৃষিতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়লেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কাজের মজুরি থাকে না। ফলে তাঁদের অংশগ্রহণ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড হিসেবে বিবেচিত হয় না।
শ্রমে অসমতার এই অবস্থায় ‘জেন্ডার সমতাই শক্তি: নারী ও কন্যাশিশুর মুক্ত উচ্চারণে হোক পৃথিবীর অবারিত সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন’ প্রতিপাদ্য নিয়ে ১১ জুলাই মঙ্গলবার পালিত হয় বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস।
গত ২০ জুন বৈশ্বিক জেন্ডার বৈষম্য নিয়ে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের (ডবি¬উইএফ) প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, বাংলাদেশে লিঙ্গভিত্তিক অসমতা এখনো প্রায় ২৮ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি বৈষম্য অর্থনীতি ও রাজনীতিতে। অর্থনৈতিক অংশগ্রহণ ও সুযোগের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের বৈষম্য এখনো ৫৬ শতাংশ। এ ক্ষেত্রে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩৯তম। রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে নারী-পুরুষের বৈষম্য ৪৫ শতাংশ।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুারোর (বিবিএস) ত্রৈমাসিক শ্রমশক্তি জরিপ ২০২২ অনুসারে, ২০১৬-১৭ প্রতিবেদনের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায়, শ্রমবাজারে নারী-পুরুষ অসমতা কিছুটা কমলেও এখনো তা ৩৭ শতাংশের বেশি। গ্রামে নারীর শ্রমে অংশগ্রহণ প্রায় ১১ শতাংশ বেড়েছে। ফলে গ্রামে নারী-পুরুষের অসমতার ব্যবধান কমে দাঁড়িয়েছে ২৯ শতাংশে। আর শহরে নারীর অংশগ্রহণ প্রায় ৮ শতাংশ কমে অসমতা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৬ শতাংশে।
অর্থনীতিবিদ শারমিন্দ নিলোর্মির মতে, প্রাতিষ্ঠানিক শ্রমে যুক্ত করে নারীর জন্য কর্মসহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করা প্রয়োজন।
সহায়ক পরিবেশের গুরুত্ব কতটা, তা বোঝা যায় নারী উদ্যোক্তা তাইরিন সুলতানা (২৮) ও মারিয়া আক্তারের (৩০) ঘটনা থেকে।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ইসমত আরা বেগম ২০২০ সালের ডিসেম্বরে ‘পুটিং উইমেন ইন দ্য সেন্টার অব অ্যাগ্রিকালচার’ শিরোনামে এক গবেষণাপত্রে বলেন, গত ২৫ বছরে কৃষিতে নারীর অংশগ্রহণ পুরুষের তুলনায় ১০ শতাংশ বেড়েছে। তবে মাত্র ১৫ শতাংশ নারী মজুরি পান।
জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিলের বাংলাদেশ কার্যালয়ের জনসংখ্যাবিষয়ক পরিকল্পনা ও গবেষণা বিভাগের প্রধান এম শহীদুল ইসলাম বলেন, কৃষিক্ষেত্রে কম মূল্যায়নের কাজে নারীর অংশগ্রহণ বেশি। অসমতা কমাতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে শিল্প ও সেবা খাতে। নারীর অর্থনৈতিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে না পারলে লিঙ্গভিত্তিক অসমতার দুষ্টচক্র থেকে বের হওয়া যাবে না।