বাংলাদেশে রাজস্ব বৃদ্ধি ও দক্ষ আর্থিক খাত গড়াই দীর্ঘস্থায়ী চ্যালেঞ্জ: আইএমএফ

বাংলাদেশে রাজস্ব বৃদ্ধি ও দক্ষ আর্থিক খাত গড়াই দীর্ঘস্থায়ী চ্যালেঞ্জ: আইএমএফ

বাংলাদেশে রাজস্ব বৃদ্ধি ও দক্ষ আর্থিক খাত গড়াই দীর্ঘস্থায়ী চ্যালেঞ্জ: আইএমএফ

দেওয়ানবাগ ডেস্ক: অর্থনীতিতে রাজস্ব আয় বাড়ানো এবং আরও দক্ষ আর্থিক খাত গড়ে তোলাই হচ্ছে বাংলাদেশের জন্য দীর্ঘস্থায়ী চ্যালেঞ্জ। জলবায়ু পরিবর্তন বাংলাদেশের অর্থনীতিকে দীর্ঘমেয়াদি হুমকির মধ্যে ফেলতে পারে। এসব হুমকি মোকাবিলার জন্য বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো এবং রপ্তানি বহুমুখীকরণের পদক্ষেপ নিতে হবে। একই সঙ্গে অর্থনৈতিক সংস্কার কার্যক্রমকে চলমান রাখতে হবে। যা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে আরও স্থিতিশীল করে তুলতে পারে। একই সঙ্গে টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারে।

গত সোমবার আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের (আইএমএফ) সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলা হয়েছে। এতে ঢাকা সফররত আইএমএফের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) অন্তেইনেত এম সায়েহ’র কর্মব্যস্ততার চিত্রও তুলে ধরা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবিলায় আইএমএফের কাছে বাংলাদেশ যে ৪৫০ কোটি ডলার সহায়তা চেয়েছে তা সংস্থাটির আগামী ৩০ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় নির্বাহী বোর্ডের সভায় উপস্থাপন করা হবে। ওই সভায় ঋণ প্রস্তাবটি অনুমোদনের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশে পাঁচ দিনের সফরে শনিবার আইএমএফের ডিএমডি ঢাকা পৌঁছেন। তার সঙ্গে সংস্থাটির পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দল রয়েছে। এর আগে তিনি ভারত সফর করেন। বুধবার পর্যন্ত তিনি ঢাকায় অবস্থান করেন।
জানা যায়, আইএমএফের কাছে বাংলাদেশের চাওয়া ৪৫০ কোটি ডলার ঋণের বিষয়ে চূড়ান্ত পর্যায়ের আলোচনা করতে তিনি ঢাকায় এসেছেন। এর অংশ হিসাবে রোববার তিনি অর্থমন্ত্রী ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক করেন। সোমবার বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত কয়েক দশকে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং সামাজিক উন্নয়নের তথ্য জেনে তিনি আনন্দিত। যা দারিদ্র্য নিরসন, টেকসই অগ্রগতি এবং মানুষের জীবনমান উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতিগুলো মূল্যস্ফীতিকে স্থিতিশীল রাখতে সহায়তা করেছে। বাংলাদেশের জিডিপির তুলনায় বৈদেশিক ঋণের অনুপাত তুলনামূলকভাবে কম। যা বাংলাদেশকে ঝুঁকিমুক্ত রাখতে সহায়তা করছে। এতে বলা হয়, বিশ্বের দেশগুলোর মতো বাংলাদেশও এখন বৈশ্বিক ধাক্কার প্রভাব মোকাবিলা করছে। প্রথমে মহামারি এবং তারপর রাশিয়া ও ইউক্রেন চলমান যুদ্ধের কারণে এ সংকটের সৃষ্টি। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এই ধাক্কাগুলোর প্রভাব মোকাবিলায় বহুমুখী পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। যা দীর্ঘমেয়াদে দেশের সুরক্ষা নিশ্চিত করবে। এতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের সঙ্গে আইএমএফ একটি কর্মসূচির আওতায় ঋণ চুক্তিতে পৌঁছার বিষয়ে একমত হয়েছে।

বাংলাদেশকে উন্নত রাষ্ট্রে উত্তরণে সহায়তা করবে আইএমএফ: সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে গণভবনে বৈঠককালে অন্তেইনেত এম সায়েহ বলেন, ‘২০৪১ সাল নাগাদ বাংলাদেশের একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও উচ্চ আয়ের দেশে উত্তরণের আকাঙ্ক্ষা রয়েছে এবং এটা বাস্তবায়নে আইএমএফ বাংলাদেশকে সহায়তা অব্যাহত রাখবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আইএমএফ দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগী এবং আমি এই সম্পর্ককে আরও জোরদার করতে এসেছি।’

অন্তেইনেত এম সায়েহ বলেন, গোটা বিশ্ব কোভিড-১৯ এর অভিঘাতের কারণে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে একটি কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে গেছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের মতো উদীয়মান অর্থনৈতিক দেশগুলো মুদ্রাস্ফীতিসংক্রান্ত চাপ, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংক্রান্ত নানাধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। এসব সমস্যা মোকাবিলায় বাংলাদেশের প্রচেষ্টায় আইএমএফ পাশে থাকবে। আইএমএফের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করেন।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ বেল-আউটের জন্য কোনো ধরনের সহযোগিতা চায় না, বরং পূর্বপ্রস্তুতি হিসাবে বাংলাদেশ সহযোগিতা চেয়েছে।’
তিনি বলেন, কোভিড-১৯ অভিঘাত, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং এর প্রেক্ষিতে নিষেধাজ্ঞা ও পালটা নিষেধাজ্ঞার কারণে বাংলাদেশের উন্নয়নে গতি মন্থর হয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশের মানুষ কঠিন পরিস্থিতি অতিবাহিত করছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় নিম্নআয়ের মানুষকে সহায়তা করতে সরকার সামাজিক সুরক্ষা ও খাদ্য কর্মসূচি বৃদ্ধি করেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, হতদরিদ্র মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে সামাজিক সুরক্ষা জালের আওতা বর্ধিতকরণ এবং টিসিবি ও ভিজিএফ কার্ডের মাধ্যমে তাদের মাঝে খাদ্য ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস বিতরণের মতো নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে পতিত জমি চাষাবাদের আওতায় নিয়ে এসেছে। এ সময় তিনি বিগত এক দশকে নারী ক্ষমতায়ন, শিক্ষা, কৃষি ও ৬ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধিসহ বিভিন্ন খাতে সরকারের সাফল্য তুলে ধরেন।

বৈঠককালে আইএমএফ প্রতিনিধি দল প্রধানমন্ত্রীর কাছে দুটি ফটোগ্রাফ হস্তান্তর করে। ১৯৭২ সালের ১৭ আগস্ট আইএমএফের আর্টিকেল অব এগ্রিমেন্ট স্বাক্ষরকালে ছবি দুটি তোলা হয়েছিল।
বৈঠককালে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিকবিষয়ক উপদেষ্টা প্রফেসর ড. গওহর রিজভী, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার, জ্যেষ্ঠ অর্থ সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন ও ঢাকায় নিযুক্ত আইএমএফের স্থায়ী প্রতিনিধি জয়েন্দু দে উপস্থিত ছিলেন।

editor

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *