করোনা দুর্বল হয়ে পড়েছে

করোনা দুর্বল হয়ে পড়েছে

দেওয়ানবাগ ডেস্ক: দেশে করোনা পরিস্থিতি এখন অনেকটা সহনীয় পর্যায়ে। সংক্রমণ কমে আসার সঙ্গে সঙ্গে কমেছে মৃত্যুও। এতে এই রোগ নিয়ে মানুষের মধ্যে উদ্বেগ-আশঙ্কা কমেছে। বেশির ভাগ মানুষ প্রাণঘাতী এ ভাইরাস নিয়ে এখন এতটা নিঃশঙ্ক যে মাস্ক ব্যবহার ও হাত ধোয়া কমে গেছে ব্যাপক। টিকা নেওয়ার বেলায়ও আগের সেই আগ্রহ নেই।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টিকা গ্রহণের ফলে মানুষের দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়েছে। এর সঙ্গে একাধিক মিউটেশনের ফলে ভাইরাসটি দুর্বল হয়ে পড়েছে। এতে এখন আর মানুষকে হাসপাতালে যেতে হচ্ছে না। তবে ভাইরাসটি রয়ে গেছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছে ৪৮ জন। এই সময়ে নতুন কোনো রোগীর মৃত্যু হয়নি। শনাক্তের হার কমে এখন ১.৯৭ শতাংশ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, দেশে গত ২৭ অক্টোবরের পর থেকে করোনা শনাক্তের হার ৫ শতাংশের নিচে রয়েছে। সর্বশেষ পাঁচ দিন কোনো মৃত্যু নেই।

বিশ্ব করোনা পরিস্থিতি সম্পর্কে গতকাল ৬টা পর্যন্ত ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য বলছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ২১টি দেশের এক লাখ ৭৫ হাজার ৬২৩ জন মানুষ নতুন করে সংক্রমিত হয়েছে। একই সময়ে মৃত্যু ৩০৮ জনের। সবচেয়ে

বেশি ৭৪ হাজার ৯৩ জন সংক্রমিত হয়েছে জাপানে। এই সময়ে সে দেশে মৃত্যু হয়েছে ৮১ জনের। এরপর দক্ষিণ কোরিয়ায় ৫৪ হাজার ৫১৯ জনের সংক্রমণ ঘটেছে। মৃত্যু ৪০ জনের। তাইওয়ান এ তালিকায় তৃতীয়। সে দেশে সংক্রমিত হয়েছে ২০ হাজার ৩০৬ জন। মারা গেছে ৬২ জন। গত এক সপ্তাহে সংক্রমণ কমেছে ১০ শতাংশ আর মৃত্যু কমেছে ৩০ শতাংশ।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ডা. মোশতাক আহমেদ বলেন, কভিড বিদায় নিয়েছে, এটা বলা যাবে না। কারণ রোগতাত্ত্বিকভাবে এটা এখনো মহামারি পর্যায়ে রয়ে গেছে। ভাইরাসটির তীব্রতা কমেছে। একই সঙ্গে মানুষ পরীক্ষা করা কমিয়ে দিয়েছে, যে কারণে শনাক্তের সংখ্যা কমে এসেছে।

যুক্তরাজ্যের শেফিল্ড ইউনিভার্সিটির সিনিয়র রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট খোন্দকার মেহেদী আকরাম বলেন, কভিড রোগী কমে যাওয়া, এতে মৃত্যু কমে আসার পেছনে কারণ হলো টিকা গ্রহণ ও ভাইরাসের মিউটেশন। এতে ভাইরাসটি একদিকে দুর্বল হচ্ছে, অন্যদিকে টিকা নেওয়ায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়েছে।

তিনি বলেন, করোনা এখন হয়তো মৌসুমি রোগের মতো হবে। যুক্তরাজ্যে শীতের দিকে সংক্রমণ বাড়ে। বাংলাদেশে হয়তো মৌসুমি ফ্লুর সময় সংক্রমণ বাড়বে। তবে আগের মতো মারাত্মক বিপর্যয় সৃষ্টি করার আশঙ্কা নেই।

খোন্দকার মেহেদী আকরাম বলেন, ‘বর্তমানে মৃত্যু না থাকলেও এখনো প্রতি হাজারে একজন মারা যেতে পারে। সুতরাং ভ্যাকসিনের কোনো বিকল্প নেই। একই সঙ্গে মাস্ক ব্যবহার ও হাত ধোয়া আমাদের চালিয়ে যেতে হবে। যারা ভ্যাকসিন নিয়েছে, তাদের অবশ্যই বুস্টার ডোজ নেওয়া উচিত। বিশেষ করে যারা কিডনিজনিত রোগে ভুগছে, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস রয়েছে, ফুসফুস ও হার্টের সমস্যায় ভুগছে, তাদের যেকোনো সময় জটিল পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। ’

কভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, কভিড থাকবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। বর্তমানে ভাইরাসটি প্যান্ডামিক নয়। এমন পরিস্থিতি হলেও আমাদের মাস্ক ব্যবহার করা উচিত। মাস্ক অন্যান্য রোগ থেকেও বাঁচাবে। যেমন এবার অ্যাজমা রোগী কমেছে। অনেকের নিয়মিত মাস্ক ব্যবহার করায় এবার অ্যাজমা হয়নি।

কভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, কভিডের ওমিক্রন ধরন থাকলে হয়তো নতুন কোনো ঢেউ আসবে না। এলে হয়তো ওমিক্রনের সাব-ভ্যারিয়েন্ট আসতে পারে। কিন্তু সেটা এখনো বলার সময় হয়নি।

তিনি বলেন, ‘যদি নতুন ঢেউ আসে, সে ক্ষেত্রে চিন্তা বাড়াবে ভ্যাকসিন। কারণ আমরা নিশ্চিত নই, ভ্যাকসিন সে সময় পর্যন্ত সুরক্ষা দেবে কি না। এ জন্য প্রয়োজন সার্ভেইল্যান্স। আমাদের ইমিউনিটি লেভেল কেমন থাকছে, সেটা জানা দরকার। আরেকটি বিষয় হলো যারা এখন আক্রান্ত হচ্ছে, তাদের ওপর গবেষণা করা। তারা ভ্যাকসিন নিয়েছিল কি না, দেখা দরকার। নিয়ে থাকলে সে কয়টি ভ্যাকসিন নিয়েছে, সেটা জানা দরকার। ’

editor

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *