দেওয়ানবাগ ডেস্ক: দেশের জনসংখ্যা ১৭ কোটি ৭১ লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে। শুমারি-পরবর্তী গণনায় উঠে এসেছে এমন তথ্য। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর জনশুমারি ও গৃহগণনার প্রাথমিক ফলাফলে এ সংখ্যা ছিল ১৬ কোটি ৫১ লাখ ৫৮ হাজার ৬১৬ জন।
এ হিসাব প্রকাশের পর শুমারির পরিসংখ্যান নিয়ে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা। বিভিন্ন পর্যায় থেকে বাদ পড়ার অভিযোগ আসতে থাকে। অবশেষে সেই জল্পনা-কল্পনার অবসান হচ্ছে।
তৃতীয় পক্ষ মূল্যায়নের মাধ্যমে উঠে এসেছে মানুষের প্রকৃত সংখ্যা। এই মূল্যায়নের কাজটি করছে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস)। চলতি মাসের শেষ সপ্তাহেই পোস্ট ইনুমারেশন চেক (পিইসি) বা শুমারি-পরবর্তী গণনার প্রতিবেদন বিবিএসে জমা দেবে সংস্থাটি। শিগগিরই পাওয়া যাবে জনসংখ্যান চূড়ান্ত হিসাব। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, ৩ শতাংশ আন্ডার কাউন্টের বিষয়টি এখনো আমার জানা নেই। তবে চূড়ান্ত হিসাব বের হলে সাধারণ মানুষের ভুল ভেঙে যাবে। কেননা অনেকেই জনশুমারির প্রাথমিক তথ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল। সেটি আর থাকবে না।
পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, যে কোনো শুমারিতে ২-৩ শতাংশ ভুল থাকাটাই স্বাভাবিক। এর সঙ্গে প্রাথমিক হিসাব অ্যাডজাস্ট করে চূড়ান্ত হিসাব বের করা হয়। এছাড়া মানুষ অনেক সময় আগের মূল শুমারিতে কী তথ্য দিয়েছে আর পিইসিতে কী তথ্য দিচ্ছে তার মধ্যে মিল নাও থাকতে পারে। এটাকে বলা হয় রেসপন্ডেন্ড ইরোর। আবার অনেক সময় অভ্যন্তরীণ মাইগ্রেশনও হতে পারে। তিনি বলেন, যে কোনো শুমারিতে আন্ডারকাউন্ট ৫ শতাংশ পর্যন্ত গ্রহণযোগ্য।
বিবিএস এবং বিআইডিএস-এর বিভিন্ন পর্যায়ের সূত্র জানায়, এবারের তৃতীয় পক্ষ মূল্যায়নে দেখা গেছে শুমারিতে ৩ শতাংশ মানুষ আন্ডারকাউন্ট বা গণনার বাইরে ছিল। ফলে সে হিসাবে বাদ পড়ে প্রায় ৪৯ লাখ ৫৩ হাজার মানুষ। এছাড়া শুমারিতে গণনা করা হলেও প্রাথমিক প্রতিবেদনে প্রকাশ করা হয়নি এমন ৭০ লাখ বাংলাদেশি আছেন প্রবাসে। সব মিলিয়ে হিসাব ধরলে দেশের জনসংখ্যা দাঁড়ায় ১৭ কোটি ৭১ লাখ ৩৮ হাজার ৬১৬ জন। তবে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ব্যুরো অব ম্যানপাওয়ার ইমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড ট্রেনিং (বিএমইটি)-এর বিভিন্ন সময়ের দেওয়া তথ্যমতে, এখন দেশের বাইরে আছেন প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ বাংলাদেশি। এ হিসাব ধরলে মোট জনসংখ্যা আরও বেশি হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জনশুমারি ও গৃহগণনা প্রকল্পের পরিচালক মো. দিলদার হোসেন বলেন, বিআইডিএস থেকে প্রতিবেদন পেলে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই জনসংখ্যার চূড়ান্ত হিসাব দেওয়া হবে। তবে এই শুমারির মোট প্রতিবেদন হবে ১৩৩টি। এর মধ্যে প্রাথমিক প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে একটি। পিইসির প্রতিবেদন হবে একটি। এভাবে পর্যায়ক্রমে ২০২৪ সালের মধ্যে বাকি ১৩১টি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে। এর বেশিরভাগই হবে জেলা পর্যায়ের প্রতিবেদন। এরপর গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত প্রতিবেদন থাকবে। বিশ্বের অন্য দেশগুলো ৪-৫ বছরের আগে সব রিপোর্ট দিতে পারে না। ডিজিটাল শুমারি করায় এবার আমরা সুফল পাচ্ছি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখনো বলার সময় আসেনি যে কত শতাংশ আন্ডারকাউন্ট ছিল। ইতোমধ্যেই পাওয়া পিইসির প্রাথমিক তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাধ্যবাধকতা না থাকলেও এবারই প্রথম জনশুমারিতে বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের গণনা করা হয়েছে। প্রাথমিক প্রতিবেদনের সে তথ্য প্রকাশ না হলেও মূল প্রতিবেদনে তা দেওয়া হবে।
সূত্র জানায়, গত ১৫ থেকে ২১ জুন জনশুমারি প্রকল্পের মূল গণনা কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে সিলেট অঞ্চলে এক সপ্তাহ গণনা কার্যক্রম বাড়িয়ে ২৮ জুন পর্যন্ত করা হয়। দেশের ৩ লাখ ৮০ হাজার গণনা এলাকার প্রতিটি বাসগৃহ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এবার ডিজিটাল পদ্ধতিতে তথ্য সংগ্রহ করায় দ্রুত সময়ের মধ্যে গত জুলাই মাসে প্রাথমিক প্রতিবেদন দিয়েছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। এর পর তৃতীয় পক্ষ হিসাবে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) মূল্যায়ন কার্যক্রম হিসাবে পুনরায় মানুষ গণনা করে গত ১০ অক্টোবর থেকে ১৬ অক্টোবর পর্যন্ত। এ সময় সারা দেশ থেকে ৩৫৪টি নমুনা এলাকা থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পিইসি কার্যক্রমের সমন্বয়ক ও বিআইডিএসের গবেষক ড. ইউনূস বলেন আমরা কাজ করছি। চুক্তি অনুযায়ী যথাসময়েই প্রতিবেদন বিবিএসের কাছে জমা দেওয়া হবে। আশা করছি এ মাসের শেষেই জমা দেওয়া যাবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ৩ শতাংশ আন্ডার কাউন্টের বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না। আপনাকে যিনি তথ্য দিয়েছেন তিনি তার নিজ দায়িত্বেই দিয়েছেন। কেননা এ বিষয়ে আমরা এখন কিছু বলতে পারব না। আমি ব্যক্তিগতভাবেও বলতে পারব না কিংবা বিআইডিএসও কিছু বলতে পারবে না।
সূত্র জানায়, ২০১১ সালের শুমারিতে প্রাথমিক হিসাবে দেশের জনসংখ্যা ছিল ১৪ কোটি ৪০ লাখ। পরবর্তী সময়ে পিইসির পর জনসংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১৪ কোটি ৯৮ লাখ। তবে এবার যে কোনো বারের চেয়ে দেশে ভালো শুমারি হয়েছে আগেই দাবি করেছিল বিবিএস সংশ্লিষ্টরা।
জানতে চাইলে পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন বলেন, কত শতাংশ আন্ডারকাউন্ট আছে সেটি এই মুহূর্তে বলতে পারছি না। তবে চুক্তি অনুযায়ী এই মাসের ২৮ তারিখের মধ্যে বিআইডিএস তাদের পিইসির প্রতিবেদন জমা যাতে দেয় সে বিষয়ে কথা বলেছি। আশা করছি তারা নির্ধারিত সময়েই প্রতিবেদন দেবে। এরপর যত দ্রুত সম্ভব আমরা চূড়ান্ত হিসাব প্রকাশ করব।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান সমিতির মহাসচিব একেএম আশরাফুল হক বলেন, পরিসংখ্যানগত দিক থেকে যে কোনো শুমারিতে ৫ শতাংশ পর্যন্ত আন্ডারকাউন্ট বা ওভারকাউন্ড গ্রহণযোগ্য বলে স্বীকৃত। তবে এবার যাতে আন্ডারকাউন্ট বা ওভারকাউন্ট কম হয় সেজন্য পরিসংখ্যান ব্যুরো ডিজিটালি সব ধরনের পদক্ষেপই নিয়েছিল। মাঠ পর্যায় পর্যন্ত আইটি এক্সপার্টরা কাজ করেছেন। সুতরাং আশা করছি আন্ডারকাউন্ট কম হবে। এক্ষেত্রে ৩ শতাংশ হলেও এটি স্বাভাবিক বলা যায়।