বিশ্বে চাষের মাছে এখন তৃতীয় বাংলাদেশ
দেওয়ানবাগ ডেস্ক: স্বাদুপানির মাছ উৎপাদনে এবারও বাংলাদেশ তৃতীয় স্থান ধরে রেখেছে। আর চাষের মাছে বাংলাদেশ দুই ধাপ এগিয়ে তৃতীয় অবস্থানে উঠে এসেছে। চাষের মাছের উৎপাদনে ছয় বছর ধরে পঞ্চম অবস্থানে ছিল।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) ‘দ্য স্টেট অব ওয়ার্ল্ড ফিশারিজ অ্যান্ড অ্যাকুয়াকালচার–২০২২’ বৈশ্বিক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। বিশ্বের সব দেশের ২০২০ সালে উৎপাদিত মাছের হিসাব নিয়ে তৈরি প্রতিবেদনটি গত সোমবার প্রকাশ করা হয়েছে। এর আগে সর্বশেষ ২০২০ সালে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৮০ সালে বাংলাদেশে স্বাদুপানির মাছের উৎপাদন ছিল ৪ লাখ ৪০ হাজার টন। ২০২০ সালে তা ১২ লাখ ৫০ হাজার টনে উন্নীত হয়েছে, যা বিশ্বের মোট মাছ উৎপাদনের ১১ শতাংশ। বাংলাদেশের আগে রয়েছে ভারত ও চীন। ভারতে ১৮ লাখ টন ও চীনে ১৪ লাখ ৬০ হাজার টন স্বাদুপানির মাছ উৎপাদিত হয়। বাংলাদেশের পরে রয়েছে মিয়ানমার, উগান্ডা ও ইন্দোনেশিয়া।
তবে সামুদ্রিক মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বের শীর্ষ ২৫টি দেশের মধ্যে ২৫তম অবস্থানে রয়েছে। এর আগের বছরের তুলনায় এক লাখ টন বেড়ে ২০২০ সালে দেশের সামুদ্রিক মাছের উৎপাদন দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৭০ হাজার টন। সামুদ্রিক মাছ উৎপাদনে শীর্ষ তিনটি দেশ হচ্ছে চীন, ইন্দোনেশিয়া ও পেরু।
প্রতিবেদনে বলা হয়, চাষের মাছ উৎপাদন বৃদ্ধির দিক থেকে আফ্রিকায় মিসর এবং এশিয়ায় বাংলাদেশ ও ভিয়েতনাম উদাহরণ হয়ে উঠেছে। এসব দেশের মানুষের প্রাণিজ আমিষের চাহিদার ৫০ শতাংশের বেশি মাছ থেকে পূরণ হচ্ছে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক আবদুল ওহাব বলেন, বাংলাদেশে স্বাদুপানির মাছ উৎপাদন বৃদ্ধিতে ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি বড় ভূমিকা রেখেছে। ইলিশের জাটকা সংরক্ষণের কারণে পাঙাস, আইড়সহ নদীর অনেক ধরনের মাছের উৎপাদন বাড়ছে। তবে আমাদের মাছের উৎপাদন আরও বাড়াতে হলে সামুদ্রিক মাছের আহরণ বাড়ানোয় গুরুত্ব দিতে হবে।
মৎস্যবিশেষজ্ঞরা বলছেন, মূলত ইলিশের সৌজন্যে অভ্যন্তরীণ জলাশয়ে স্বাদুপানির মাছ উৎপাদনের হার বেড়েছে। গত এক যুগে জাতীয় এ মাছটির উৎপাদন দ্বিগুণেরও বেশি বেড়ে পাঁচ লাখ টন ছাড়িয়েছে। ইলিশে এদেশ বিশ্বে ১ নম্বর। মোট ইলিশের ৮০ শতাংশই বাংলাদেশে উৎপাদিত হয়।
দেশি মাছের চাষোপযোগী উন্নত জাত উদ্ভাবনের মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য দেশের বিজ্ঞানীদের কৃতিত্ব দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। এফএও এবং ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (ইফপ্রি) একাধিক প্রতিবেদনও বলছে, দেশে পুকুরে মাছ চাষে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেন, ‘আমরা পুকুরে দেশি মাছের চাষ বাড়াতে গুরুত্ব দিচ্ছি। এ জন্য মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটে দেশি মাছের জাত সংরক্ষণের মাধ্যমে সেগুলোকে পুকুরে চাষের উপযোগী করতে ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা হচ্ছে। তবে আমাদের অবশ্যই বঙ্গোপসাগরে মাছ উৎপাদনে জোর দিতে হবে।’
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা বলছেন, দেশের বিজ্ঞানীরা এ পর্যন্ত রুই, কাতলা, কই, তেলাপিয়া, কালিবাউশ ও সরপুঁটির উন্নত জাত উদ্ভাবন করেছেন। দেশের পুকুরে যত মাছ চাষ হচ্ছে, তার অর্ধেকের বেশি এসব জাতের। তাঁরা দেশের বিলুপ্তপ্রায় ২২ প্রজাতির মাছের চাষপদ্ধতিও উদ্ভাবন করেছেন। সে তালিকায় টেংরা, পাবদা ও মলার মতো পুষ্টিকর মাছ রয়েছে।
ইফপ্রির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশের ৫৬ শতাংশ মাছ আসছে পুকুর থেকে। পুকুরে মাছ চাষের কারণে গত তিন দশকে উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ছয় গুণ। মাছ চাষ ও ব্যবসায় প্রায় দুই কোটি মানুষ যুক্ত। ১৯৯০ সালে মানুষ বছরে মাথাপিছু সাড়ে সাত কেজি মাছ খেত। এখন সেটা ৩০ কেজিতে পৌঁছেছে।