বাণিজ্য ডেস্ক: সারা বিশ্বে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি এবং মানুষের আয় কমে যাওয়ার প্রভাব পড়ছে জীবনযাত্রায়। মানুষ এখন আগের চেয়ে কম খরচ করছে। তাদের প্রকৃত আয় কমে যাচ্ছে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, এই প্রবণতা আগামী বছরও থাকতে পারে। মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি সামাজিক অস্থিরতা বাড়াতে পারে। মূল্যস্ফীতির চাপ আগামী বছর কিছুটা কমে আসতে পারে। তবে আরো অন্তত তিন বছর পর্যন্ত খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।
বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের শীর্ষ অর্থনীতিবিদদের মতামতের ভিত্তিতে জরিপ করেছে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম। সেই জরিপের ফলাফল নিয়ে ‘চিফ ইকোনমিস্ট আউটলুক’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সংস্থটি। এতে প্রায় ৮০ শতাংশ অর্থনীতিবিদ বলেছেন, মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ার ফলে দরিদ্র্য মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাবে। তবে উদ্বেগের বিষয় হলো, অনেক অর্থনীতিবিদ ধারণা করছেন, তুলনামূলক ধনী দেশগুলোতেও দরিদ্র্য মানুষের সংখ্যা বাড়বে। এসব দেশেও বাড়বে সামাজিক অস্থিরতা।
জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ার ফলে মানুষের প্রকৃত আয় কমে যাচ্ছে। আগামী বছরও প্রকৃত মজুরি কমে যাওয়ার এই প্রবণতা থাকতে পারে। করোনার প্রকোপ কমতে শুরু করলেও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতির জন্য নতুন আশঙ্কা তৈরি করেছে। পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি, জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে উৎপাদন ব্যয় বেড়ে গেছে কয়েক গুণ। এর প্রভাবে সারা বিশ্বে খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে হু হু করে।
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, বিশ্ব জুড়ে খাদ্যনিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। শুধু উৎপাদন কম হওয়া এবং পরিবহন খরচ বেশি, এই কারণেই নয়। রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ করার ফলেও খাদ্যসংকট নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে অনেক দেশ চাইছে খাদ্যের মজুত ধরে রাখতে। তাছাড়া খাদ্যপণ্য রপ্তানিতেও নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।
জরিপে ১০ জনের মধ্যে সাত জন অর্থনীতিবিদ বিশ্ব মন্দার আশঙ্কা করেছেন। ১০ জনের মধ্যে অন্তত ৯ জন অর্থনীতিবিদ আশঙ্কা করছেন আগামী বছর ইউরোপের অর্থনীতির অবস্থা আরো খারাপ হবে। বড় অর্থনীতির দেশগুলো মূল্যস্ফীতি রোধ করতে মুদ্রানীতি কঠোর করে যাচ্ছে। দেশগুলো নীতি সুদহার বাড়িয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে চাইছে। কিন্তু বর্তমান বিশ্বে সরবরাহের ঘাটতির কারণেও পণ্যের দাম বাড়ছে। প্রতিবেদনে আশঙ্কা করা হচ্ছে, খাদ্য ও জ্বালানির দাম বৃদ্ধির প্রভাবে জীবনযাত্রার সংকট তৈরি করছে, বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়া ও মধ্য আফ্রিকার দেশগুলোতে। জরিপে ৭৯ শতাংশ অর্থনীতিবিদ বলেছেন, নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে সামাজিক অস্থিরতা বাড়তে পারে। জরিপে ২০ শতাংশ অর্থনীতিবিদ বলেছেন, উচ্চ আয়ের দেশগুলোতেও এই অস্থিরতা তৈরি হতে পারে।