দেওয়ানবাগ ডেস্ক: পরিবেশবান্ধব পরমাণু জ্বালানির জন্য কৃত্রিম সূর্য আবিষ্কার করেছে দক্ষিণ কোরিয়া। সিউল ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি এবং দ্য কোরিয়া ইনস্টিটিউট ফর ফিউশন এনার্জি মিলে বিজ্ঞানের বিস্ময়কর এই সূর্য আবিষ্কার করেছে। চীনের তৈরি কৃত্রিম সূর্যের চেয়েও দক্ষিণ কোরিয়ার সূর্যের শক্তি বেশি। কোরিয়া সুপারকন্ডাক্টিং টোকামাক অ্যাডভান্সড রিসার্চ রিঅ্যাক্টরে (কেএসটিএআর) এই সূর্য তৈরি করা হয়েছে। মূলত কেএসটিএআরকেই কৃত্রিম সূর্য বলা হচ্ছে।
শক্তিশালী পারমাণবিক বিক্রিয়া ঘটিয়ে কৃত্রিম সূর্য তৈরি করা হয়েছে। কৃত্রিম সূর্যটি ৩০ সেকেন্ডে ১০ কোটি ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা উৎপন্ন করতে সক্ষম হয়েছে। এটা বিশ্ব রেকর্ড। পরীক্ষার তীব্রতার বিষয়টি থেকে বোঝা যায় যে, সূর্য দেড় কোটি ডিগ্রি সেলসিয়াসে পুড়ছে। অর্থাৎ কেএসটিএআর সূর্যের চেয়ে সাত গুণ তাপমাত্রা উৎপন্ন করতে সক্ষম। আসল সূর্যের কেন্দ্রের তাপমাত্রা দেড় কোটি ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত হতে পারে। নিউক্লিয়ার বিক্রিয়ার মাধ্যমে তাপ উৎপাদনের মতোই তাপমাত্রা পেতে এর প্রক্রিয়াকে কৃত্রিমভাবে প্রয়োগের চেষ্টা করছেন। এ বছরের শেষ নাগাদ ১০ কোটি ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ৫০ সেকেন্ড ধরে রাখতে চান বিজ্ঞানীরা। ২০২৬ সাল নাগাদ তাদের লক্ষ্য হচ্ছে কৃত্রিম সূর্যের তাপমাত্রা ৩০০ সেকেন্ড বা ৫ মিনিট পর্যন্ত ধরে রাখা। ধীরে ধীরে তা বাড়ানো, যাতে করে পরিবেশবান্ধব শক্তি পাওয়া যেতে পারে। এতে করে জ্বালানির সংকটও দূর করা সম্ভব হবে বলে বিজ্ঞানীরা তাদের গবেষণায় জানিয়েছেন।
কৃত্রিম সূর্য তৈরি হলে তা আমাদের পুড়িয়ে মারবে না। বরং এ থেকে অফুরন্ত তাপশক্তি আমরা নিরাপদে ব্যবহার করতে পারব। এটা তৈরির কাজ পুরোপুরি সম্পন্ন হলে বিদ্যুতের জন্য জ্বালানি তেল কয়লা পোড়ানো ন্যূনতম মাত্রায় নামিয়ে আনা এবং কার্বনমুক্ত নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার সহজ হবে। সূর্যের ভেতরে ফিউশন রিঅ্যাকশনে যে প্রচণ্ড তাপশক্তি তৈরি হয়, আয়ন সম্মিলিত হওয়ার সময় প্রচণ্ড তাপ বের হয়। আর এই তাপমাত্রাতেই প্রক্রিয়া চালানো সম্ভব হয়। এই ফিউশন রিঅ্যাকশন থেকে কম শক্তি ব্যবহার করে বেশি শক্তি পাওয়া যায়। পরে এই তাপশক্তি বিদ্যুতে রূপান্তরিত করে কার্বন নিঃসারণের বিপদমুক্ত বিদ্যুৎশক্তি পাওয়া যাবে। বর্তমানে নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্টগুলো ‘নিউক্লিয়ান ফিউশন’ এর ওপর নির্ভরশীল। এতে চেইন রিঅ্যাকশনের মাধ্যমে ইউরেনিয়াম অ্যাটম ভেঙে শক্তি বের হয়। এর সুবিধা হলো পারমাণবিক বর্জ্যের সমস্যা নেই এবং আকস্মিক দুর্ঘটনার সম্ভাবনাও কম।