দেওয়ানবাগ ডেস্ক: দেশের গভীর সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি এক্সন মবিলকে কাজ দিতে ইতিবাচক সরকার। শিগগিরই বিষয়টি নিয়ে উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি গঠিত হচ্ছে। কমিটিতে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞসহ সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম এমন ব্যক্তিদের রাখা হবে। ভৌগোলিক সীমারেখা, বর্তমান আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং কোম্পানির সক্ষমতাসহ সামগ্রিক বিষয় বিবেচনায় নিয়ে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। অনুমোদন পেলে কোম্পানি এখানে ৩০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে। স্থানীয় মুদ্রায় যা সোয়া ৩ লাখ কোটি টাকা। এই পরিমাণ অর্থ ১০টি পদ্মা সেতুর ব্যয়ের সমান। জ্বালানি বিভাগ সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের স্বার্থ রক্ষা করে গ্যাস উত্তোলন নিশ্চিত করা উচিত।
প্রসঙ্গত, ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্র বিরোধ নিষ্পত্তির পর বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের সীমা ২৬টি ব্লকে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে অগভীর অংশে ১১টি এবং ১৫টি গভীর ব্লক রয়েছে। পানির গভীরতা ২০০ মিটার পর্যন্ত অগভীর ব্লক ধরা হয়। এরপর থেকে গভীর সমুদ্র ব্লক। ২০১৪ সালের পর কয়েক দফায় পেট্রোবাংলা সমুদ্রের ব্লকগুলো ইজারা দিতে চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে। এবার মার্কিন কোম্পানি এক্সন মবিল গভীর সমুদ্রের ১৫টি ব্লক একসঙ্গে ইজারা নিতে চাচ্ছে। তবে এবার তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য ব্লক বরাদ্দ নয়, গভীর সমুদ্রে দ্বিমাত্রিক জরিপ করতে চায় কোম্পানিটি। জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সম্প্রতি গণমাধ্যমকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
বিনিয়োগের ব্যাপারে এই মাসের মধ্যে এ সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই করতে চায় কোম্পানিটি। এ ব্যাপারে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদকে চিঠি দিয়েছেন এক্সন মবিলের নিউ অপারচুনিটি ম্যানেজার জনাথান উইলসন। গত ১৬ জুলাই বিদ্যুৎ বিভাগের কাছে এই চিঠি পাঠিয়েছে মার্কিন কোম্পানিটি। এর আগে জ্বালানি প্রতিমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করে গেছেন এক্সন মবিলের কর্মকর্তারা। এ সময় জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী গণমাধ্যমকে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কোনো কোনো জায়গায় ভিন্নমত থাকলেও দুদেশের সম্পর্ক অনেক আন্তরিক। গুরুত্বপূর্ণ মার্কিন কোম্পানির বিনিয়োগ প্রস্তাব তারই প্রমাণ।
প্রতিমন্ত্রী জানান, সরকার এক্সন মবিলের প্রস্তাবটি খতিয়ে দেখছে। এক্সন মবিল বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় দ্বিমাত্রিক ও পরে ত্রিমাত্রিক জরিপ করতে চায়। তিনি বলেন, এক্সন মবিল পৃথিবীর এক নম্বর কোম্পানি। সমুদ্রে জ্বালানি অনুসন্ধানে তারা আমাদের প্রস্তাব দিয়েছে। এই সরকারের ওপর যদি আস্থা না থাকত, এই অর্থনীতির ওপর যদি আস্থা না থাকত পৃথিবীর সর্ববৃহৎ কোম্পানি এই মুহূর্তে কেন আসবে!
এক্সন মবিল চিঠিতে জানিয়েছে, গভীর সমুদ্রে সম্পদ অনুসন্ধানে দ্বিমাত্রিক জরিপে ৪০ থেকে ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে। এতে তেল-গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিলে ত্রিমাত্রিক জরিপ করা হবে। এতে ব্যয় হবে ৫০ থেকে ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এছাড়া প্রতিটি কূপের উন্নয়নে ৮০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের পাশাপাশি গভীর সাগরে অনুসন্ধানে ১০ থেকে ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করার আগ্রহ দেখিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। পুরো প্রক্রিয়া সফল হলে বাংলাদেশের তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির তুলনায় প্রতিবছর ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থ সাশ্রয় হবে।
জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে প্রস্তাব পাঠানো হলে তিনি তাতে নীতিগত সম্মতি দেন। তবে চূড়ান্ত চুক্তির আগে তার সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনার নির্দেশ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টদের। এ নিয়ে ইতোমধ্যে উচ্চপর্যায়ের কমিটি হয়েছে। চলতি বছরই এক্সন মবিলের সঙ্গে উৎপাদন অংশীদারত্ব চুক্তি (পিএসসি) হতে পারে। জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বদরুল ইমাম বলেন, বিশ্ববিখ্যাত কোম্পানি এক্সন মবিল বাংলাদেশের গভীর সমুদ্রে গ্যাস অনুসন্ধানে নিয়োজিত হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। সে বিষয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনা করা দরকার। দেশের স্বার্থে এই চুক্তি করে তাদের নিয়োগ করা উচিত বলে মনে করেন তিনি।