মূল্যস্ফীতি এই সময়ের সবচেয়ে বড় সমস্যা। জিনিসপত্রের দাম লাগামছাড়া। গত বছর নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য, বিশেষ করে খাদ্যপণ্যের উচ্চ মূল্যস্ফীতি মানুষকে সবচেয়ে বেশি কষ্ট দিয়েছে। কোনো কোনো পণ্যের মূল্য ২০০ শতাংশেরও বেশি বৃদ্ধি পায়।
ফলে নিম্নবিত্ত ও স্থির আয়ের মানুষকে পরিবারের সদস্যদের পুষ্টি চাহিদার সঙ্গে আপস করতে হয়েছে। মূল্যস্ফীতি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এখন মানুষের জন্য সবচেয়ে কষ্টকর হচ্ছে দ্রব্যমূল্য। কিছু মহলের চক্রান্তে মূল্যস্ফীতি ঘটে উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, সামনে রোজা, মানুষের যেন কষ্ট না হয়, সে জন্য মূল্যস্ফীতির রাশ টেনে ধরার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশে বাজার যুক্তি মেনে চলে না। কোনো কারণে বাজারে কোনো পণ্যের সংকট হলে কিংবা অবৈধ মজুদের মাধ্যমে কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হলে লাফিয়ে লাফিয়ে দাম বাড়তে থাকে। আর এ জন্য ব্যবসায়ীদের অজুহাতেরও অভাব হয় না। বাজারে পণ্যমূল্য বৃদ্ধির পেছনে অনেক বিষয় থাকে। প্রথমে খুঁজে বের করতে হবে কী কারণে বাজারে মূল্যস্ফীতি হচ্ছে, সেটা।
বৈশ্বিক কারণে কখনো কখনো মূল্যস্ফীতি ঘটতে পারে। বাংলাদেশ আমদানিনির্ভর দেশ। আন্তর্জাতিক বাজারে কখনো কোনো পণ্যের দাম বেড়ে গেলে দেশের বাজারে তার প্রভাব পড়বে, এটাই স্বাভাবিক। আমাদের দেশের মূল সমস্যা হচ্ছে, এখানে বাজার ব্যবস্থাপনা মোটেও সংগঠিত নয়। এর সুযোগ নিয়ে এক শ্রেণির ব্যবসায়ীকে বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানোর প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হতে দেখা যায়।
কোনো কোনো সময় বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেও পণ্যের দাম বাড়ানো হয়। অনেক অসাধু ব্যবসায়ী চাহিদা সামনে রেখে কম দামে কিনে কয়েক গুণ বেশি দামে বিক্রি করেন। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে পণ্যের কৃত্রিম সংকট তৈরি করেন। ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে বাধ্য হয়েই ভোক্তাকে এসব পণ্য কয়েক গুণ বেশি দামে কিনতে হয়।
অর্থনীতিবিদরা এ জন্য বাজার ব্যবস্থাপনার দুর্বলতাকেই মূলত দায়ী করেছেন। তাঁদের মতে, পণ্যমূল্য স্থিতিশীল রাখাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিতে হবে। সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ ও তা বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাজারে যাতে সরবরাহের ঘাটতি না হয়, সেদিকে বিশেষ জোর দিতে হবে। অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, বৈশ্বিক অস্থিরতা, আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধি, ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন, অভ্যন্তরীণ বাজারের গতিবিধি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে না পারা, এক শ্রেণির ব্যবসায়ীর অতি মুনাফার লোভ, মজুদদারি, সিন্ডিকেট ইত্যাদি পণ্যমূল্য স্ফীতির জন্য দায়ী। সবচেয়ে বেশি দায়ী বাজারে স্থিতিশীলতা রক্ষায় সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সময়োপযোগী পদক্ষেপের অভাব।
যেসব কারণে বাজারে পণ্যের দাম বাড়ে, সেগুলো রোধ করতে ব্যবস্থা নিতে হবে। পণ্যমূল্য স্ফীতি ও বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারকে আরো বেশি উদ্যোগী হতে হবে। প্রকৃত তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের মাধ্যমে সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ নিতে হবে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বাজার ব্যবস্থাপনায় সরকারকে আরো জোর দিতে হবে। এর পাশাপাশি উৎপাদন বৃদ্ধি ও আমদানির মাধ্যমে বাজারে সরবরাহ ঠিক রাখতে হবে। আমাদের কৃষিপণ্য সঠিকভাবে সংক্ষরণ ও বাজারজাত করতে পারলে মূল্যস্ফীতি রোধ করা সহজ হতো। এর সঙ্গে বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের যেসব বিভাগ ও সংস্থা রয়েছে, সেগুলোকে আরো সক্রিয় করতে হবে। এসব প্রতিষ্ঠানকে আরো দায়িত্বশীল ভ‚মিকা পালন করতে হবে।