দেওয়ানবাগ ডেস্ক: চলতি অর্থবছরে (২০২৩-২৪) বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ৫.৬ শতাংশে নেমে আসতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। তবে মূল্যস্ফীতির চাপ কমলে আগামী অর্থবছরে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
গত মঙ্গলবার প্রকাশিত ওয়াশিংটনভিত্তিক ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানটির গেøাবাল ইকোনমিক প্রসপেক্টাস রিপোর্টে এই পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের হিসাবে, ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭.১ শতাংশ। তাদের আনুমানিক হিসাব ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬ শতাংশ। প্রবৃদ্ধির হার কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে তারা বলেছে, আমদানি নিষেধাজ্ঞা, উপকরণ ও জ্বালানির উচ্চমূল্য আর তার সঙ্গে ক্রমবর্ধমান বাহ্যিক ও আর্থিক চাপের প্রভাবে প্রবৃদ্ধির হার কমে গেছে।
বিশ্বব্যাংক জানিয়েছে, বাংলাদেশের এ সময় উচ্চ মূল্যস্ফীতি অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা আছে। যেহেতু বিদেশি মুদ্রার মজুদ কম থাকার সম্ভাবনা আছে, তাই আমদানি বিধি-নিষেধ অব্যাহত থাকবে এবং বেসরকারি বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিপরীতে সরকারি বিনিয়োগ স্থিতিশীল থাকবে বলে অনুমান করছে বিশ্বব্যাংক।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সরকার জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ৭.৫০ শতাংশ, আগের অর্থবছরেও জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা একই ছিল।
দেশের রপ্তানি নিয়ে বিশ্বব্যাংক বলেছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের প্রত্যাশিত প্রবৃদ্ধি হচ্ছে না এবং বিষয়টি প্রবৃদ্ধির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। এ ছাড়া সদ্যঃসমাপ্ত জাতীয় নির্বাচনের আগে কিছু সময় অনিশ্চয়তা ছিল, বেসরকারি খাতের বিনিয়োগে যার প্রভাব পড়ে থাকতে পারে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
স¤প্রতি জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৩ সালে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৬ শতাংশ। নতুন বছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কিছুটা কমে ৫.৬ শতাংশে নামবে, তবে ২০২৫ সালে তা কিছুটা বেড়ে ৫.৮ শতাংশে উঠতে পারে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৩ সালে মূল্যস্ফীতির সূচক ছিল ঊর্ধ্বমুখী। মূলত খাদ্যের উচ্চমূল্য ও মুদ্রার অবমূল্যায়নের কারণে মুদ্রানীতির রাশ টেনে ধরা হয়। একই সঙ্গে লেনদেনের ভারসাম্যে প্রভাব পড়ে, টান পড়ে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভে। আর্থিক খাত আরো দুর্বল হয়ে পড়ে এবং খেলাপি ও সম্ভাব্য খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে যায়।
বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি বাড়ার চারটি কারণ চিহ্নিত করেছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটি বলেছে, অভ্যন্তরীণ জ্বালানির মূল্য বেড়ে যাওয়া, দুর্বল মুদ্রানীতি, টাকার অবমূল্যায়ন ও বৈদেশিক মুদ্রা কমে যাওয়ায় আমদানি কমে যাচ্ছে। এই চার কারণেই বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি বাড়ছে বলে জানায় সংস্থাটি।
বর্তমানে মূল্যস্ফীতির চাপ কমাতে আর্থিক নীতির কার্যকর বাস্তবায়নের কথা বলেছে আন্তর্জাতিক ঋণ প্রদানকারী ব্যাংকটি, আর বাংলাদেশের অবকাঠামোর চাহিদা ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াতে প্রয়োজনে বিভিন্ন স্কিম থেকে বেশি সুদে ঋণ দিতে প্রস্তুত রয়েছে বিশ্বব্যাংক। সে ক্ষেত্রে বাজার ধরে বাংলাদেশ ঋণ নিতে পারে বলছেন সংস্থাটির কান্ট্রি ডিরেক্টর। এ সময় ব্যাংক ব্যবস্থাপনা এবং রাজস্ব নীতির আমূল পরিবর্তনের ওপর জোর দেন তিনি।