দেওয়ানবাগ ডেস্ক: যুদ্ধ-দ্বন্দ্ব, পরিবেশগত অবক্ষয় এবং মহামারির মতো বিপর্যয়ে দিন দিন পৃথিবীর সম্পদ কমলেও নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে এসে গ্রহের জনসংখ্যা দাঁড়াবে ৮০০ কোটি।
কিন্তু এখানেই খ্যান্ত হবে না এ প্রক্রিয়া, বরং বেড়েই চলবে বৈশ্বিক জনসংখ্যা। সোমবার এএফপিতে প্রকাশিত জাতিসংঘের একটি বিশ্লেষণে সে চিত্রই ওঠে এসেছে।
বিপুল জনসংখ্যার ভারে এমনিতেই নুয়ে পড়েছে বিশ্ব। এই চিন্তাতেই শঙ্কিত হয়ে উঠেছে জাতিসংঘ। কারণ, জনসংখ্যা বৃদ্ধি বিশ্বের সম্পদের ওপর শুধু চাপ সৃষ্টি করে না, পাশাপাশি বাড়ে খাদ্য, পানি, আবাসন, জ্বালানি এবং স্বাস্থ্যসেবাসহ আরও অনেক চাহিদার।
জনসংখ্যা বৃদ্ধির মন্থরতা: জাতিসংঘের জনসংখ্যা বিভাগের অনুমান অনুযায়ী ১৫ নভেম্বরের মধ্যে পৃথিবীর জনসংখ্যা দাঁড়ায় ৮০০ কোটি (৮ বিলিয়ন)।
১৯৫০ সালে বিশ্বব্যাপী ২৫০ কোটি জনসংখ্যার যে গণনা করা হয়েছিল তার চেয়ে প্রায় তিনগুণ বেশি। ১৯৬০-এর দশকে এক লাফে শীর্ষে ওঠার পর থেকেই নাটকীয়ভাবে কমতে থাকে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার।
বার্ষিক জন্মহার ১৯৬২-৬৫ সালের মধ্যে সর্বোচ্চ ২ দশমিক ১ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছিল। ২০২০ সালের মধ্যেই নেমে এসেছিল ১ শতাংশেরও নিচে। জাতিসংঘ প্রকল্প অনুযায়ী জন্মহার ক্রমাগত হ্রাস পাওয়ার কারণে সংখ্যাটি ২০৫০ সালের মধ্যে ০.৫ শতাংশ নেমে আসতে পারে।
সর্বোচ্চ জনসংখ্যায় পৌঁছাবে কখন?: জাতিসংঘে প্রকল্প অনুযায়ী, প্রত্যাশিত আয়ু বৃদ্ধির পাশাপাশি সন্তান জন্মদানের বয়সের মানুষের সংখ্যার পরিপ্রেক্ষিতে ২০৩০ সালে জনসংখ্যা হবে প্রায় ৮৫০ কোটি। ২০৫০ সালে তা বৃদ্ধি পেয়ে হবে ৯৭০ কোটি। যা ২০৮০ সাল অব্দি তা গিয়ে দাঁড়াবে সর্বোচ্চ শিখর ১ হাজার ৪০ কোটিতে।
অন্যান্য পরিসংখ্যান আবার ভিন্ন কথা বলে। ইউএস-ভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর হেলথ মেট্রিক্স অ্যান্ড ইভেলুয়েশনের (আইএইচএমই) ২০২০ সালের একটি গবেষণা তথ্যমতে, ২০৬৪ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী জনসংখ্যা সর্বোচ্চ বৃদ্ধি পাবে।
তাদের অনুমান অনুসারে জনসংখ্যা কখনো ১০০০ কোটিতে (১০ বিলিয়ন) পৌঁছাবে না এবং ২১০০ সালের মধ্যে তা ৮৮০ কোটিতে (৮.৮ বিলিয়ন) নেমে আসবে।
আইএইচএমই গবেষণার প্রধান লেখক, ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের হেলথ মেট্রিক্স সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক স্টেইন এমিল ভলসেট বলেন, ‘জাতিসংঘের পরিমাণের চেয়ে কম মনে করছি। এর পেছনেও একটি ভালো কারণ রয়েছে-তা হলো ভিন্নধর্মী ‘উর্বরতা মডেল’, যার অধীনে জনসংখ্যা মাত্র ৯ থেকে ১০ মিলিয়নে পৌঁছাবে।
প্রজনন হার হ্রাস: ২০২১ সালে প্রত্যেক নারীর প্রজনন হার ১৯৫০ সালে গড়ে ৫ থেকে কমে দাঁড়িয়েছিল ২.৩-এ। অবাক হলেও সত্যি যে, ২০৫০ সালের মধ্যে প্রজনন উর্বরতা গড়ে ২.১-এ নেমে আসবে।
জাতিসংঘের জনসংখ্যা ও উন্নয়ন তহবিল শাখার প্রধান রাচের স্নো বলেন, ‘আমরা বিশ্বের এমন একপর্যায়ে পৌঁছে গেছি, যেখানে বেশিরভাগ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ প্রজনন ক্ষমতার নিম্নসীমায় বাস করছে। নারীদের গড়ে ২.১টি শিশু উৎপাদন ক্ষমতা রয়েছে।’
বিশ্বব্যাপী ধূসরতা: ‘ধূসরতা’ মূলত এমন একটি পরিস্থিতি যেখানে বয়স্ক লোকেরা অনেক দিন বাঁচে এবং তাদের সংখ্যা অনেক বেশি। গড় আয়ু অব্যাহত রয়েছে। এটি জনসংখ্যা বৃদ্ধির অন্যতম আরেকটি কারণ। ২০১৯ সালে গড় আয়ু ছিল ৭২.৮ বছর, যা ১৯৯০ সালের তুলনায় ৯ বছর বেশি।
জাতিসংঘ ২০৫০ অব্দি গড় আয়ু ৭৭.২ বছর পূর্বাভাস দিয়েছে। ৬৫ বছরের বেশি মানুষের অনুপাত ২০২২ থেকে ২০৫০ সালের মধ্যে ১০ শতাংশ ছাড়িয়ে ১৬ শতাংশে উন্নীত হবে। আর এই বৈশ্বিক ধূসরতা দারুণভাবে প্রভাব ফেলবে শ্রমবাজার, অর্থনীতি ও পেনশন প্রক্রিয়ার ওপর। প্রয়োজন পড়বে বৃদ্ধাশ্রমের সংখ্যা বৃদ্ধিরও।
নজিরবিহীন ভিন্নতা: বিশ্বব্যপী আঞ্চরিক বৈষম্য রয়েছে। জাতিসংঘ প্রকল্প অনুসারে ২০৫০ সালের মধ্যে জনসংখ্যা বৃদ্ধির জন্য বেশিরভাগ দায় ঠেকবে ৮টি দেশের ওপর-কঙ্গো, মিসর, ইথিওপিয়া, ভারত, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান, ফিলিপাইন এবং তানজানিয়া। বিভিন্ন অঞ্চলে গড় বয়সের তাৎপর্যও ভিন্ন। যেমন-ইউরোপে ৪১.৭ বছর বনাম সাব-সাহারান আফ্রিকার ১৭.৬ বছর। তিনি বলেন, বয়সের পার্থক্য বাড়বে। কিছু অঞ্চলে পূর্বে গড়ে বেশির ভাগই ছিল তরুণ।
চীনকেও ছাড়িয়ে যাবে ভারত: জাতিসংঘ জানায়, সর্বাধিক জনবহুল দেশ চীন ও ভারত স্থান-বাণিজ্য শুরু করতে পারে। তবে চীনের ১৪০ কোটি (১.৪ বিলিয়ন) জনসংখ্যা হ্রাস পেতে থাকবে, যা ২০৫০ সালে যেয়ে দাঁড়াবে ১৩০ কোটিতে (১.৩ বিলিয়ন)।
চলতি শতাব্দীর শেষ নাগাদ চীনের জনসংখ্যা ৮০ কোটিতে (৮০০ মিলিয়ন) নেমে আসবে। ভারত জনসংখ্যার দৌড়ে চীন থেকে পিছিয়ে থাকলেও ২০২৩ সালের মধ্যে তার উত্তরের প্রতিবেশীকে হারাবে বলে মনে করছে অনেকে। ২০৫০ সালের মধ্যে ভারতের জনসংখ্যা ১৭৮ কোটি (১.৭৮ বিলিয়ন) হবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। তৃতীয় স্থান দখল করবে যুক্তরাষ্ট্র।