দেওয়ানবাগ ডেস্ক: ভারত, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডের মধ্যে ত্রিদেশীয় সড়ক নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ। এই লক্ষ্যে ঢাকার তরফে তিনটি দেশকেই চিঠি দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে চলতি বছরে থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠেয় বিমসটেক সম্মেলনকালে তিন দেশের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে আলাদাভাবে কথা বলতে পারেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশগুলো রাজি হলে এই আঞ্চলিক নেটওয়ার্কে বাংলাদেশ হবে চতুর্থ দেশ। এই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে চার দেশ নিজেদের মধ্যেই শুধু নয়; লাওস, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়ার মতো পূর্বের দেশের সঙ্গেও কানেকটিভিটি চালু হবে। এতে বাণিজ্যের পণ্য চলাচল এবং পর্যটনের জন্য মানুষের যাতায়াতেরও সুযোগ সৃষ্টি হবে। আঞ্চলিক এই সড়কপথে সিলেট কিংবা চট্টগ্রাম থেকে যাত্রা করে মণিপুর ও মিজোরাম হয়ে মিয়ানমারের মান্দালেই শহরে যাওয়া যাবে। থাইল্যান্ডের সীমান্তে মেসোট শহর থেকে মান্দালেই পর্যন্ত রাস্তা আছে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
আরও জানা গেছে, এই যোগাযোগ হলে সড়কপথে পণ্য পাঠানো যাবে। কম খরচে পর্যটক যেতে পারবে। মিয়ানমারের সাগাইন এলাকা মণিপুরের উল্টোদিকে ভেতর দিয়ে রাস্তা আছে। তবে সেতু পুরোনো। তাই ভারত সরকার পুরোনো ৬৯টি লোহার সেতু বদলিয়ে কংক্রিটের সেতু বানানোর প্রকল্প বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে। সাগাইল এলাকায় এখন নিরাপত্তার ঝুঁকি আছে। তাই কাজ বন্ধ। তবে মিয়ানমারের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে কাজ আবার শুরু হবে। দরকার হলে মিয়ানমার আর্মির পাহারায় কাজ সম্পন্ন করতে ভারত আগ্রহী। বাংলাদেশের মৌলভীবাজার জেলার শেওলা ও সুতারকান্দি থেকে আসাম হয়ে মণিপুরে গিয়ে যুক্ত হতে পারে। আবার চট্টগ্রাম থেকেও এই সড়কে যুক্ত হওয়া সম্ভব। গত বছরের জুলাই মাসে ব্যাংককে অনুষ্ঠিত মেকং-গঙ্গা কো-অপারেশন ডায়ালগের সাইডলাইনে ভারত, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা ত্রিদেশীয় সড়ক নেটওয়ার্কের বিষয়ে আলোচনা করেছেন। তারা এই ত্রিদেশীয় হাইওয়ের কাজের অগ্রগতি পর্যালোচনা করেন। এদিকে গত বছরেই মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, লাওস আর ভিয়েতনামের ডানাং পোর্ট পর্যন্ত রাস্তা চালু হয়েছে। ফলে ত্রিদেশীয় নেটওয়ার্কে যুক্ত হয়ে বাংলাদেশ প্রকৃতপক্ষে থাইল্যান্ডের পূর্বের দেশগুলোর সঙ্গেও যুক্ত হওয়ার সুযোগ পাবে। বাংলাদেশের জন্য এ এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। ভারতের মিজোরাম থেকে মিয়ানমারের মান্দালেই পর্যন্ত রাস্তার খারাপ দশা দূর করতে বিশেষ করে সেতু ও কালভার্ট পাল্টাতে ভারত ‘লাইন অব ক্রেডিট’ (ঋণ) দিয়েছে। এই পথে মিয়ানমারের ভেতরের ৮০ থেকে ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত রাস্তার সংস্কারের কাজ চলাকালে ২০২১ সালে মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানে জান্তা ক্ষমতা দখল করে। তখনই বামারদের একটি শক্তিশালী গ্রুপের তৎপরতা শুরু হয়।
ব্যাংককে একটি হোটেলে থাইল্যান্ডে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আব্দুল হাই বলেছেন, ত্রিদেশীয় সড়ক নেটওয়ার্কে যুক্ত হতে বাংলাদেশের তরফে থাইল্যান্ড, মিয়ানমার ও ভারতের কাছে চিঠি দিয়ে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এই বছরেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিমসটেক সামিট উপলক্ষ্যে থাইল্যান্ডে আসবেন। একই সঙ্গে সামিটের আগে অথবা সামিট চলাকালে একটি দ্বিপক্ষীয় সফরের উদ্যোগ নেওয়া হবে। আমরা আশা করি, থাইল্যান্ডে প্রধানমন্ত্রীর দ্বিপক্ষীয় সফর এবং বিমসটেকের আওতায় আঞ্চলিক সফর থাইল্যান্ডের সঙ্গে সম্পর্ককে একটি নতুন মাত্রায় নিয়ে যাবে। তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১৫ বছরে ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের একটা উঁচু স্থান নির্ধারণ করেছেন। একইভাবে পূর্বের দেশগুলোর সঙ্গেও এটি করার সুযোগ তৈরি হবে এই বছরে প্রধানমন্ত্রীর থাইল্যান্ড সফরের মাধ্যমে। ভারতের নির্বাচন শেষ হওয়ার পর বিমসটেক সম্মেলন হবে বলে আমরা আশা করি। চলতি বছরের মাঝামাঝি কিংবা দ্বিতীয় ভাগে এই সম্মেলন হতে পারে। বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডের মধ্যে বাণিজ্য এবং মানুষের চলাচল বৃদ্ধি পাচ্ছে। থাইল্যান্ড বছরে বাংলাদেশে প্রায় দেড় বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করে থাকে। বাংলাদেশ কিছুটা পিছিয়ে। থাইল্যান্ডে বাংলাদেশের রপ্তানি ৮০ মিলিয়ন ডলারে সীমাবদ্ধ। থাইল্যান্ড থেকে প্লাস্টিক পণ্য, ফলমূল, ফুল, বিয়ের সাজ-সরঞ্জাম, শিল্পের মেশিনারিজ, যন্ত্রাংশ প্রভৃতি বাংলাদেশে আসে। বাংলাদেশ থেকে মূলত তৈরি পোশাক থাইল্যান্ডে যায়। এছাড়া পাট ও পাটজাত পণ্য, সমুদ্রের মাছ থাইল্যান্ডে রপ্তানি করা হয়।
বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডের মধ্যে মানুষের চলাচলও বেড়েছে। বাণিজ্য, চিকিৎসা ও পর্যটনের জন্য মানুষ চলাচল করে। প্রতিদিন পাঁচটি ফ্লাইট দুই দেশের মধ্যে চলাচল করে। থাই এয়ারের দুটি, বাংলাদেশ বিমানের একটি, ইউএস বাংলা ও এয়ার এশিয়ার ফ্লাইটও আছে। প্রতি তিন থেকে চার ঘণ্টায় ফ্লাইট রয়েছে। শিক্ষাক্ষেত্রে সহযোগিতা হচ্ছে। থাইল্যান্ডে জনসংখ্যা কমে যাচ্ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ছাত্রছাত্রী পায় না। বাংলাদেশের ছাত্রছাত্রীরা সেখানে গিয়ে শিক্ষা গ্রহণ করার পর ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারেন। পর্যটনের সহযোগিতাও বাড়ছে। সড়ক নেটওয়ার্কে যুক্ত হলে এসব ক্ষেত্রে সহযোগিতা আরও জোরদার হবে। জানতে চাইলে মিয়ানমারে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মনোয়ার হোসেন টেলিফোনে বলেন, ‘মিয়ানমারের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছি। ভারতের মিজোরাম থেকে মিয়ানমারের মান্দালেই পর্যন্ত রাস্তার কাজ বন্ধ আছে। ফলে বিষয়টি এখনো পরিপক্বতা লাভ করেনি বলে মিয়ানমারের তরফে আমাদের জানানো হয়েছে। তবে আমরা আঞ্চলিক সড়ক নেটওয়ার্কের সব পক্ষের সঙ্গে যুক্ত আছি।’