মুহাম্মদ জহিরুল আলম: বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের মহান স্রষ্টা আল্লাহ্ তায়ালা নিজেকে প্রকাশ করতে ভালোবাসলেন, তাই পরিচিত হওয়ার জন্য জগৎ সৃজন করলেন এবং তাঁর পরিচয় জগদ্বাসীর নিকট তুলে ধরার জন্য তিনি যুগে যুগে মহামানব প্রেরণ করেন। তিনি মানব জাতিকে হেদায়েতের জন্য হযরত আদম (আ.) থেকে শুরু করে হযরত মোহাম্মদ (সা.) পর্যন্ত ১ লক্ষ ২৪ হাজার নবি-রাসুল প্রেরণ করেছেন। সমকালীন যুগের মানুষের একান্ত কর্তব্য ছিল তাঁদের প্রতি পূর্ণ অনুগত হওয়া। তাঁদের বিধান মানাই ছিল ধর্ম। মহান আল্লাহর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানুষ যখন আল্লাহ্ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পথ হারিয়ে ফেলে, তখন মহামানবগণ পৃথিবীর পথহারা মানুষকে পরম স্রষ্টার পরিচয় তুলে ধরে সঠিক পথ নির্দেশনা দান করেন।
মহামানব সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে, “আমার সৃষ্টির মাঝে একটি সম্প্রদায় রয়েছে যারা মানুষকে সৎ পথ দেখায় এবং সেই অনুযায়ী ন্যায় বিচার করে”। (সূরা আ‘রাফ ৭ : আয়াত ১৮১) আল্লাহ্ তায়ালার মনোনীত এসকল মহামানবকে নবুয়তের যুগে বলা হতো- নবি, রাসুল; আর বেলায়েতের যুগে বলা হয়- অলী-আল্লাহ্। প্রকৃতপক্ষে, মহামানব বলতে নবি-রাসুল ও অলী-আল্লাহ্গণকে বুঝায়।
নবি-রাসুল ও অলী-আল্লাহ্গণ দয়াল রাসুল (সা.)-এর ‘সিরাজুম মুনির’ হৃদয়ের মাঝে ধারণ করে সমকালীন যুগের মানুষকে হিদায়েতের পথ দেখান। যুগের মহামানবগণের মঝে যিনি শ্রেষ্ঠ, তিনিই হলেন যুগশ্রেষ্ঠ মহামানব বা যুগের ইমাম। নবুয়তের যুগের পর বেলায়েতের যুগেও নুরে মোহাম্মদীর নুর বা সিরাজুম মুনির হৃদয়ে ধারণ করে যুগের ইমাম বা মোজাদ্দেদগণ সমকালীন যুগের মানুষকে আলোকিত করেছেন। এ কারণেই মহান আল্লাহ্ বেলায়েতের যুগে যুগের ইমাম হিসেবে বড়ো পির মহিউদ্দিন হযরত আব্দুল কাদের জিলানি (রহ.), পরবর্তীতে হযরত খাজা মুইনুদ্দিন চিশতি (রহ.), হযরত খাজা বাহাউদ্দিন নকশবন্দ (রহ.), হযরত মোজাদ্দেদ আল ফেসানি (রহ.), ইমাম সৈয়দ আবুল ফজল সুলতান আহমদ চন্দ্রপুরী (রহ.)-এর মতো মহামানবকে প্রেরণ করেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় দয়াময় আল্লাহ্ একবিংশ শতাব্দীর শিরোভাগে মহান সংস্কারক মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী যুগের ইমাম সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেবলাজানকে ধর্মকে সজীব ও সতেজ করে তোলার জন্য পৃথিবীতে প্রেরণ করেছিলেন। হযরত রাসুল (সা.) ফরমান, “নিশ্চয়ই মহাপরাক্রমশালী সম্ভ্রান্ত আল্লাহ্ তায়ালা প্রত্যেক শতাব্দীর শিরোভাগে এ উম্মতের জন্য এমন এক ব্যক্তিকে প্রেরণ করেন, যিনি ধর্মকে সংস্কার অর্থাৎ সজীব ও সতেজ করে তোলেন।” (মেশকাত শরীফ, পৃষ্ঠা ৩৬; আবু দাউদ শরীফ)।
হযরত রাসুল (সা.)-এর ওফাতের ১৩১৭ বছর পর পাপসংকুল পৃথিবীর পথহারা মানুষকে শান্তি, কল্যাণ ও মুক্তির পথ প্রদর্শন করে মহান আল্লাহ ও হযরত রাসুল (সা.)-এর প্রকৃত পরিচয় ও হারিয়ে যাওয়া মোহাম্মদী ইসলামকে জগতে পুনরুজ্জীবিত করার জন্যে নুরে মোহাম্মদীর ধারক ও বাহক রূপে যুগের ইমামের সুমহান দায়িত্ব নিয়ে প্রেরিত হয়েছিলেন মহান সংস্কারক সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেব্লাজানকে। তিনি ১৯৪৯ সালের ১৪ই ডিসেম্বর, বুধবার বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জ উপজেলাধীন বাহাদুরপুর গ্রামের সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি হযরত রাসুল (সা.)-এর ২৩তম বংশধর। কঠোর আধ্যাত্মিক সাধনার মাধ্যমে এ মহামানব ১৯৮৩ সালের ১৬ই ডিসেম্বর মহান রাব্বুল ইজ্জতের পক্ষ থেকে জামানার ‘মোজাদ্দেদ’ বা মহান সংস্কারকের দায়িত্ব লাভ করেন; ১৯৮৮ সালের ১০ই মহররম যুগের ইমামের দায়িত্ব লাভ করেন; ১৯৮৯ সালের ৫ই এপ্রিল বিশ্বনবি হযরত মোহাম্মদ (সা.) তাঁকে ‘মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী’ খেতাবে ভূষিত করেন; ১৯৯৬ সালের ২রা অক্টোবর সমস্ত আম্বিয়ায়ে কেরামের ধর্ম পরিচালনার দায়িত্ব ও বেলায়েত লাভ করেন। অতঃপর ২০০৮ সালের ১০ই অক্টোবর হতে আশেকে রাসুলগণ তাঁর নুরানিময় চেহারা মোবারক পূর্ণিমার চাঁদের মাঝে দেখেন।
ইসলামের নামে পবিত্র কুরআন ও হাদিস বহির্ভুত যে সব বিষয় মুসলিম সমাজে প্রচলিত রয়েছে, সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেব্লাজন সেগুলোর সংস্কার করে হযরত রাসুল (সা.)-এর প্রকৃত ইসলামি দর্শন মানবজাতির কাছে তুলে ধরেছেন। তাঁর শতাধিক সংস্কার দেশে ও বিদেশে বিপুলভাবে প্রশংসিত হয়েছে। তাঁর কয়েকটি সংস্কার হলো পবিত্র কাবা ও হযরত রাসুল (সা.)-এর রওজা শরীফের ছবি সংবলিত জায়নামাজে নামাজ পড়া বেয়াদবি; পবিত্র কুরআনের সঠিক আয়াত সংখ্যা ৬২৩৬টি; ১৯৯১ সাল থেকে তাঁর প্রস্তাবিত পদ্ধতিতে আমাদের দেশে জমি রেজিস্ট্রেশন চালু রয়েছে; বান্দার নামে নয়, বান্দার পক্ষ থেকে আল্লাহর নামে কোরবানি করুন; আল্লাহ্কে জানার বিজ্ঞান এলমে তাসাউফ শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রবর্তন; হযরত রাসুল (সা.) ধনী ছিলেন, গরিব নন; ১২ই রবিউল আউয়াল নয়, ১লা রবিউল আউয়াল হযরত রাসুল (সা.) ওফাত লাভ করেছিলেন; ১০ই মহররম পবিত্র আশুরা মহান রাব্বুল আলামিনের অভিষেকের অনুষ্ঠান, ইহা শুধু শিয়াদের অনুষ্ঠান নয়; মাতৃভাষায় জুমার খুৎবার প্রচলন; ইসলামে ছবি তোলায় নিষেধ নেই; আল্লাহ্্ নিরাকার নন, আল্লাহ্্ তায়ালার নুরের আকার আছে। তাঁর সংস্কারমূলক কার্যাবলিই বিশ্ববাসীর জন্য অনন্য নিয়ামত। জগতশ্রেষ্ঠ তাসাউফ বিজ্ঞানী সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী কর্তৃক প্রণীত ‘তাফসীরে সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী’ জগদ্বাসীর জন্য অনন্য উপহার। সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেব্লাজান ২০২০ সালের ২৮শে ডিসেম্বর, সোমবার ওফাত লাভ করেন। সকল মহামানবের মতোই তিনি ওফাতের পূর্বে অছিয়তনামা দান করেন। তিনি সঠিকভাবে মোহাম্মদী ইসলাম পরিচালনার জন্য ২০২০ সালের ২৭শে ডিসেম্বর রবিবার কতিপয় নির্দেশনামূলক অছিয়ত প্রদান করেন।
বিশ্ববাসীর জন্য সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.)-এর অনন্য নিয়ামত হলো ‘বিশ্ব আশেকে রাসূল (সা.) সম্মেলন’। পৃথিবীতে একমাত্র বাংলাদেশেই সর্বপ্রথম এ মহামানবের আহবানে রাসুল প্রেমিকদের এ সম্মেলনের সূচনা হয়।
বিশ্ব আশেকে রাসুল (সা.) সম্মেলন-এর ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
আশেকে রাসুল অর্থ রাসুল প্রেমিক। যারা হযরত রাসুল (সা.)-কে ভালোবাসেন তাদেরকেই আশেকে রাসুল বলা হয়। বিশ্ব আশেকে রাসুল (সা.) সম্মেলন হলো হযরত রাসুল (সা.)-এর আশেক বা প্রেমিকদের সম্মেলন। এ সম্মেলন আল্লাহ্ তায়ালার রহমত ও হযরত রাসুল (সা.)-এর বরকতে পরিপূর্ণ- পৃথিবীর সমস্ত আশেকে রাসুলের একটি পুণ্যময় মহামিলনের অনুষ্ঠান। এতে দেশ-বিদেশের লক্ষ লক্ষ আশেকে রাসুল যোগদান করে থাকেন। মোহাম্মদী ইসলামের শিক্ষা, আদর্শ তথা মোহাম্মদী ইসলাম জগদ্বাসীর সামনে পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেবলাজান বিশ্বের সকলকে মোহাম্মদী ইসলামের পতাকাতলে সমবেত হওয়ার যে ডাক দিয়েছিলেন তাই বিশ্ব আশেকে রাসুল (সা.) সম্মেলন।
হযরত রাসুল (সা.)-এর প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার নাম ইমান। যে রাসুল (সা.)-কে যতটুকু ভালোবাসে তার মধ্যে ততটুকু ইমান আছে। হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে, হযরত রাসুল (সা.) ফরমান- “যে ব্যক্তি নিজের জান-মাল, পিতা-মাতা, সন্তানসন্ততি যাবতীয় সবকিছুর চেয়ে আমাকে বেশি ভালোবাসতে না পারবে সে মু’মিন হতে পারবে না।” পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে- “হে মাহবুব (সা.)! আপানি বলে দিন, তোমরা যদি আল্লাহ্কে ভালোবাসতে চাও, তবে আমার অনুসরণ করো। তাহলে আল্লাহ্ তোমাদের ভালোবাসবেন, তোমাদের পাপরাশি ক্ষমা করে দিবেন। অবশ্যই আল্লাহ্ পরম ক্ষমাশীল ও দয়াময়।” (সূরা আলে ইমরান ৩: আয়াত ৩১) হেদায়েতের দায়িত্ব প্রাপ্ত মহামানবগণের সান্নিধ্য লাভ করা মুক্তিকামী মানুষের জন্য প্রভূত কল্যাণকর। তাই পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ্্ এরশাদ করেন- “মানুষের মাঝে হজের জন্য ঘোষণা করে দাও, তারা তোমার কাছে আসবে পায়ে হেঁটে এবং সবধরনের দুর্বল উটের পিঠে সওয়ার হয়ে, তারা আসবে দূর-দূরান্তের পথ অতিক্রম করে। যাতে তারা উপস্থিত হতে পারে তাদের কল্যাণময় স্থানে।” (সূরা হাজ্জ ২২: আয়াত ২৭-২৮)
সূফী সম্রাট বাবা দেওয়ানবাগী (রহ.) বিশ্বময় মোহাম্মদী ইসলাম প্রচারের লক্ষ্যে ১৯৮৫ সালের ১০ই মহররম নারায়ণগঞ্জ জেলার দেওয়ানবাগে বাবে জান্নাত, দেওয়ানবাগ শরীফ প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি তাঁর স্বীয় মোর্শেদ সৈয়দ আবুল ফজল সুলতান আহমেদ (রহ.)-এর ১ম ওফাত দিবস স্মরণে তাঁর একনিষ্ঠ ভক্ত মুরিদ সন্তান আশেকে রাসুল মো. শফিউদ্দিন সাহেবের রতন মেটাল ভবনের ছাদে ১ম ওরস শরীফের আয়োজন করেন। সূফী সম্রাট তাঁর স্বীয় মোর্শেদের ওফাত দিবস স্মরণে দেওয়ানবাগ শরীফে বাৎসরিক অনুষ্ঠান ‘মহাপবিত্র ওরস মোবারক’ আয়োজনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। ১৯৮৫ সাল থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত ৪টি মহাপবিত্র ওরস মোবারক আয়োজন করেন। এর মধ্যে তিনটি নারায়ণগঞ্জ জেলার বাবে জান্নাত, দেওয়ানবাগ শরীফে অনুষ্ঠিত হয়।
১৯৮৯ সালে সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজান দেওয়ানবাগ শরীফের বাৎসরিক অনুষ্ঠান ‘মহাপবিত্র ওরস মোবারক’ পরিবর্তন করে ‘বিশ্ব সূফী সম্মেলন’ নামকরণ করেন। একই সাথে তিনি তাঁর মোর্শেদ ইমাম হুজুরের ওফাত দিবস স্মরণে নয়, বরং ইমাম হুজুরের শুভ জন্মদিন স্মরণে ‘বিশ্ব সূফী সম্মেলন’-এর আহবান করেন। তিনি শিক্ষা দেন অলী-আল্লাহ্গণ অমর, তাই আল্লাহ্ কর্তৃক প্রেরিত মহামানবগণের শুভ জন্মদিনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অত্যাধিক। তিনি আরো বলেন, “মুসলমানদের শ্রেষ্ঠত্ব ফিরে পেতে হলে আবার সমগ্র বিশ্বে তাসাউফের জোয়ার আনা প্রয়োজন।… সুফিবাদের আদর্শ তুলে ধরার লক্ষ্যে ‘বিশ্ব সূফী সম্মেলন’ আহবান করেছি।” এরই প্রেক্ষাপটে সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজান ১৯৮৯ সাল থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জের বাবে জান্নাত, দেওয়ানবাগ শরীফে ৪টি ‘বিশ্ব সূফী সম্মেলন’ এবং ১৯৯৩ সাল থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত ঢাকার প্রাণকেন্দ্র মতিঝিল বাবে রহমত, দেওয়ানবাগ শরীফে ৫টি ‘বিশ্ব সূফী সম্মেলন’ আয়োজন করেন।
সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজান মহান আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ বন্ধু হযরত রাসুল (সা.)-এর প্রকৃত স্বরূপ জগদ্বাসীর কাছে তুলে ধরার লক্ষ্যে ‘বিশ্ব সূফী সম্মেলন’-এর পরিবর্তে ‘বিশ্ব আশেকে রাসুল (সা.) সম্মেলন’ আয়োজনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। তিনি তাঁর মোর্শেদ সৈয়দ আবুল ফজল সুলতান আহমেদ (রহ.)-এর শুভ জন্মদিন স্মরণে ১৯৯৭ সালের ১৮ই ডিসেম্বর মুসলিম জাতির ইতিহাসে সর্বপ্রথম ‘বিশ্ব আশেকে রাসুল (সা.) সম্মেলন’-এর আহ্বাবান করেন। সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজান, ১৯৯৭ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ২৪ বছরে ২১টি ‘বিশ্ব আশেকে রাসুল (সা.) সম্মেলন’-এর আয়োজন করেন।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিশ্ব আশেকে রাসুল (সা.) সম্মেলন
মহান সংস্কারক, মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী যুগের ইমাম সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়াবাগী (রহ.) এবং কুতুবুল আকতাব, দুররে মাকনুন, খাতুনে জান্নাত হযরত সৈয়দা হামিদা বেগম (রহ.)-এর মেজো সাহেবজাদা ইমাম ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুর। ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুর ১৯৮৫ সালের ১৬ই জুন পবিত্র রমজান মাসে শবে কদরের মহিমান্বিত রজনিতে জন্মগ্রহণ করেন। এ মহামানব সম্পর্কে তাঁর পিতা সূফী সম্রাট হযরত দেওয়াবাগী (রহ.) বলেন, “মাতৃগর্ভের সাত মাস বয়সেই সে দুনিয়াতে আগমন করে। জন্মের সাত দিনের মাথায় আমি আমার দুই হাতের দুটি আঙ্গুল তার দিকে বাড়িয়ে দিয়েছিলাম, সে আমার আঙ্গুল দুটি শক্তভাবে ধরে শোয়া থেকে দাঁড়িয়ে আল্লাহ্ প্রদত্ত উজ্জ্বল ভবিষ্যতের ইঙ্গিত দিয়েছিল।” (মোর্শেদের দরবারে মুরীদের করণীয়, দ্বিতীয় সংস্করণ, সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজানের বাণী মোবারক)। সূফী সম্রাট হযরত দেওয়াবাগী (রহ.) ওফাতের পূর্বে ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুরকে অছিয়ত করে মোহাম্মদী ইসলাম পরিচালনার নেতৃত্ব প্রদানের দায়িত্ব অর্পণ করেন। নুরে মোহাম্মদীর ধারক ও বাহক ইমাম ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুর বর্তমানে মোহাম্মদী ইসলামের নেতৃত্ব প্রদানকারী মহামানব; দেওয়ানবাগ শরীফের পরিচালক, সমন্বয়ক ও সমস্যার ফয়সালাকারী।
ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুরের অসাধারণ নেতৃত্বে মোহাম্মদী ইসলামে জাগরণ সৃষ্টি হয়েছে। তিনি সূফী সম্রাটের শিক্ষা ও আদর্শের বাণী নিয়ে সমগ্র বাংলাদেশের পথে প্রান্তরে রাত-দিন ছুটছেন। দেশজুড়ে আশেকে রাসুলগণকে সংগঠিত করেন, তাদের সমস্যার কথা শুনে ফয়সালা দেন। তিনি তাঁর মোর্শেদের উপস্থিতিতেই দেওয়ানবাগ শরীফের সকল কার্যক্রম মোর্শেদের সম্মতিতে পরিচালনা করতেন। প্রতিটি সম্মেলনে তিনিই ছিলেন সমন্বয়ক, পরিচালক ও পরিকল্পনাকারী। সম্মেলন শেষে গোলামদের নিয়ে উপস্থিত হতেন মহান মোর্শেদের কদম মোবারকে। মহান মোর্শেদ মধুর হাসিতে কবুল করে নিতেন।
আজ জাহেরিতে মহান মোর্শেদ নেই। ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুর তাঁর পবিত্র জবানীতে বলেন, “কিশোর বয়স থেকে আমার হৃদয় মাঝে একটি স্বপ্ন বারবার দোলা দিতো। স্বপ্নটি ছিল- আমার মহান মোর্শেদ সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেব্লাজানের শুভ জন্মদিন উপলক্ষ্যে দেশ ও বিদেশের মোর্শেদ প্রেমিকদের নিয়ে ‘বিশ্ব আশেকে রাসুল (সা.) সম্মেলন’ অনুষ্ঠান করা।” তিনি আরো বলেন- আমার সেই আকাঙ্খিত স্বপ্নটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে একদিন দয়াল বাবাজানকে অত্যন্ত আদবের সাথে বললাম, “বাবাজান! আপনি আপনার মোর্শেদ ইমাম শাহ্ চন্দ্রপুরী (রহ.) হুজুরের শুভ জন্মদিন উপলক্ষ্যে ‘বিশ্ব আশেকে রাসুল (সা.) সম্মেলন’ করে থাকেন, আপনিতো আমাদের মহান মোর্শেদ, আমরা আপনার শুভ জন্মদিনে ‘বিশ্ব আশেকে রাসুল (সা.) সম্মেলন’ করতে চাই।” আমার কথা শুনে দয়াল বাবাজান মৃদু হেসে বললেন, “তোমার সময় তুমি বিশ্ব আশেকে রাসুল (সা.) সম্মেলন করিও।” (সূফী সম্রাট স্মরণিকা ২০২৩)।
এ প্রেক্ষাপটে মোহাম্মদী ইসলামের নেতৃত্ব প্রদানকারী মহামানব ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুরের আহ্বাবানে, ২০২২ সালের ২৩শে ডিসেম্বর সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.)-এর ৭৩তম শুভ জন্মবার্ষিকী স্মরণে ‘১ম বিশ্ব আশেকে রাসুল (সা.) সম্মেলন’ অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্বের ৩০টি দেশ থেকে আশেকে রাসুলগণ এ সম্মেলনে যোগ দেন। সম্মেলনে লক্ষাধিক আশেকে রাসুল অংশগ্রহণ করেন এবং অনলাইন প্ল্যাটফরমের মাধ্যমে শতাধিক দেশের লক্ষ লক্ষ আশেকে রাসুল অনুষ্ঠানটি উপভোগ করেন। সম্মেলনের আহŸায়ক মোহাম্মদী ইসলামের নেতৃত্ব প্রদানকারী মহামানব ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুরের অমীয় বাণী মোবারক শ্রবণে আশেকে রাসুলগণের প্রাণে মোর্শেদ ও রাসুল প্রেমের জোয়ার সৃষ্টি হয়। এ সম্মেলনটিই ছিল দেওয়ানবাগ শরীফের ইতিহাসে আশেকে রাসুলগণের সর্ববৃহৎ মিলনমেলা। বছর ঘুরে আবারও এসেছে ‘বিশ্ব আশেকে রাসুল (সা.) সম্মেলন’। আগামী ২৩শে ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল উপজেলাধীন গোপালপুরে বাবে বরকত, দেওয়ানবাগ শরীফে মহান সংস্কারক, মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.)-এর ৭৪তম শুভ জন্মবার্ষিকী স্মরণে মোহাম্মদী ইসলামের নেতৃত্ব প্রদানকারী মহামানব ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুরের আহবানে অনুষ্ঠিত হবে ‘বিশ্ব আশেকে রাসুল (সা.) সম্মেলন’। মহান আল্লাহর নিকট প্রার্থনা তিনি যেন আমাদের এ সম্মেলনে গোলামি করার সুযোগ দান করেন। আমিন।