বিশ্ব আশেকে রাসুল (সা.) সম্মেলন: আশেকে রাসুলদের মিলন মেলা

বিশ্ব আশেকে রাসুল (সা.) সম্মেলন: আশেকে রাসুলদের মিলন মেলা

ড. পিয়ার মোহাম্মদ
আশেকে রাসুল অর্থ রাসুল প্রেমিক। যারা রাসুলকে ভালোবাসেন তাদেরকেই আশেকে রাসুল বলা হয়। রাসুলকে নিজের জান-মাল, পিতা-মাতা ও স্ত্রী সন্তানের চেয়ে বেশি ভালোবেসে আশেকে রাসুল হতে হয়। আশেকে রাসুল হতে পারলে তার সাথে রাসুল (সা.)-এর একটা রুহানি যোগসূত্র স্থাপিত হয় এবং তখনই তার পক্ষে দয়াল রাসুল (সা.)-এর মাধ্যমে আল্লাহ্ পাকের রহমত ও বরকত লাভ করা সম্ভব হয়। বিশ্ব আশেকে রাসুল (সা.) সম্মেলন সারা বিশ্বের এ ধরনের আশেকে রাসুল বা রাসুল প্রেমিকদের মহামিলন মেলা। এ মিলন মেলা আল্লাহ্ তায়ালা ও হযরত রাসুল (সা.)-এর রহমত ও বরকতে পরিপুর্ণ। এ মেলায় জামে আওলিয়াসহ দেশ বিদেশের লক্ষ লক্ষ আশেকে রাসুল যোগদান করে একে মহিমান্বিত করে তুলেন।
হযরত রাসুল (সা.) দীর্ঘ ১৫ বছর হেরা গুহায় মোরাকাবা করে আল্লাহ্র কাছ থেকে রিসালাত ও ওহির মাধ্যমে চির শান্তির ধর্ম ইসলাম লাভ করেন। বর্বর আরব জাতির যারা সে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন এবং রাসুল (সা.)-কে ভালোবেসে আশেকে রাসুল হতে পেরেছিলেন তারাই সফলকাম হয়েছেন। এখনও যারা রাসুলের ধর্মকে আঁকড়ে ধরে দয়াল রাসুল (সা.)-এর আশেক হতে পারেন তারাই সফলকাম হয়ে থাকেন। মানব জীবন সার্থক করতে আশেকে রাসুল হওয়ার কোনো বিকল্প নেই। যারা দয়াল রাসুল (সা.)-কে ভালোবেসে আশেকে রাসুল হয়েছেন এবং যারা আশেকে রাসুল হতে আগ্রহী তাদের সম্মেলনই আশেকে রাসুল (সা.) সম্মেলন। দয়াল রাসুল (সা.)-এর আশেকগণ যেখানে জমায়েত হন সেখানে দয়াল রাসুল (সা.) হাজির না হয়ে পারেন না। আর দয়াল রাসুল (সা.) হাজির হলে তাঁর সম্মানে অন্যান্য আশেকগণ রুহানিতে তাঁর সাথে হাজির হন। বিষয়টি উপলব্ধি করে আশেকে রাসুলগণ যারপরনাই আনন্দিত হন এবং তামাম জাহানের আশেকে রাসুলগণ এ সম্মেলনে অংশ গ্রহণ করে অশেষ রহমত ও বরকতের সাধ গ্রহণে ধন্য হন।
দয়াল রাসুল (সা.)-এর পরে বেলায়েতের যুগে অলী-আল্লাহ্গণ রাসুলের ইলমুল ক্বালবের শিক্ষা দিয়ে মানুষকে আশেকে রাসুল করে তুলেন। বর্তমান সমস্যা সংকুল পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য মানুষের আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে আশেকে রাসুল হওয়া জরুরি। বিশ্ব আশেকে রাসুল (সা.) সম্মেলনে যোগদান করে আশেকে রাসুলগণ যেমন তাদের মর্যাদা বৃদ্ধির সুযোগ পান তেমনি মুক্তিকামী মানুষ আশেকে রাসুল হওয়ার পথে এগিয়ে যেতে পারেন। আখেরি জামানায় হযরত রাসুল (সা.)-এর প্রবর্তিত মোহাম্মদী ইসলামকে জগতে পুনরুজ্জীবিত করার গুরু দায়িত্ব নিয়ে এসেছিলেন, মহান সংস্কারক মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেব্লাজান। তিনি আশেকে রাসুল হওয়ার শিক্ষা দিয়ে বিশ্বময় শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য নিরলস কাজ করেছেন। তাঁর প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ-সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কোটি কোটি মানুষ আশেকে রাসুল হয়ে হযরত রাসুল (সা.)-এর নৈকট্য লাভ করেছেন। আশেকে রাসুলদের উত্তরোত্তর আত্মিক উন্নয়নের উদ্দেশ্যেই সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেব্লাজান বিশ্ব আশেকে রাউল (সা.) সম্মেলনের আয়োজন করে ছিলেন। হযরত রাসুল (সা.)-এর ওফাতের পর সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেব্লাজান ব্যতীত কোনো অলী-আল্লাহ্ কখনো বিশ্ব আশেকে রাসুল (সা.) সম্মেলনের আয়োজন করেননি। সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজানের অসিলায় আমরা সে সুযোগ পেয়ে ধন্য।
বিশ্ব আশেকে রাসুল (সা.) সম্মেলনে অসংখ্য অলী-আল্লাহ্ উপস্থিত হন এবং তাঁদের অনেকেই মাজ্জুব শে্িরণর ছদ্মবেশী অলী-আল্লাহ্। তাঁদের মজলিসে উপস্থিত হলে আল্লাহ্ তাঁদের ইজ্জতের খাতিরে বিশেষ রহমত দান করেন। এ রহমতের বরকতে মানুষের জীবনের মোড় সম্পূর্ণভাবে পরিবর্তিত হতে পারে। এ সম্মেলনের রহমত ও বরকতে পাপী মানুষেরও চিরদিনের গুনাহ্ মাফ হয়ে আশেকে রাসুলে পরিণত হতে পারেন। আল্লামা রুমি (রহ.) বলেছেন- “এক জামানা সোহবতে বা আউলিয়া, বেহেতের আয সাদ সালাতাতে বেরিয়া।” অর্থাৎ- এক মুহূর্ত কোনো অলী-আল্লাহ্র সান্নিধ্যে থাকা এক শত বছর বেরিয়া (নিরহংকার) ইবাদত হতে উত্তম। পবিত্র কুরআনে অলী-আল্লাহ্গণের মর্যাদা সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে- “হে বিশ্বাসীগণ, আল্লাহ্কে ভয় করো এবং সত্যাশ্রয়ীদের সঙ্গ লাভ করো।” মহান আল্লাহ্র এ ঘোষণা থেকে সুষ্পষ্টভাবেই বুঝা যায় যে, সত্যাশ্রয়ী অলী-আল্লাহ্গণের সান্নিধ্য লাভের উদ্দেশ্যে কোনো অনুষ্ঠানে যোগদান করা অত্যন্ত ফজিলত ও বরকতপূর্ণ কাজ। সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেব্লাজানের চিন্তা আশেকে রাসুলদের মাঝে আল্লাহ্র বিশ্বাস এবং হযরত রাসুল (সা.)-এর প্রতি প্রেম আরো বেশি করে জাগ্রত করা দরকার। সেই কারণে তিনি প্রতি বছরই বিশ্ব আশেকে রাসুল (সা.) সম্মেলনের আয়োজন করেছিলেন।
পবিত্র কুরআনের বর্ণনা অনুযায়ী ধর্ম পালনের অন্যতম লক্ষ্য হলো মু‘মিন বা আশেকে রাসুল হওয়া। আশেকে রাসুল না হতে পারলে ইমানদার হওয়া যায় না। আশেকে রাসুল হওয়ার জন্য স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো ডিগ্রির প্রয়োজন হয় না। এ শুধুই প্রেম ভালোবাসার বিষয়। হযরত রাসুল (সা.)-এর প্রেম হৃদয়ে ধারণ করতে পারলেই আশেকে রাসুল হওয়া যায়। মহান আল্লাহ্ নিজেও তাঁর বন্ধুকে ভালোবাসেন। এরশাদ হয়েছে-“হে মোহাম্মদ, আপনি বলুন তোমরা যদি আল্লাহ্কে ভালোবাসতে চাও তবে আমাকে অনুসরণ করো, তাহলে আল্লাহ্ তোমাদেরকে ভালোবাসবেন এবং তোমাদের গুনাহসমুহ মাফ করে দেবেন।” (সূরা আলে ইমরান ৩: আয়াত ৩১) হযরত মোহাম্মদ (সা.) সৃষ্টির আদি ও মূল কেন্দ্র বিন্দু। এ বিশ্বজাহান সৃষ্টির বহু পূর্বেই আল্লাহ্ পাক নুরে মোহাম্মদী সৃজন করেছেন। হাদিসের বর্ণনায় রয়েছে, “হে মু‘মিনগণ! জেনে রাখ, আল্লাহ্ সব মাখলুক সৃষ্টির আগে হযরত মোহাম্মদ (সা.)-এর নুরকে সৃষ্টি করেন, এটা মহান আল্লাহ্র কাছে তাঁর শ্রেষ্ঠত্বের দলিল। সেই মহান রাসুল (সা.)-এর প্রকৃত প্রেমিকদের জন্য এবং প্রেমিক হওয়ার জন্য বিশ্ব আশেকে রাসুল (সা.) সম্মেলন।
সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজানের শিক্ষা আশেকে রাসুল হওয়া। তাহলেই হযরত রাসুল (সা.)-এর দিদার লাভ করা সম্ভব হবে। সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজানের বিশ্ব আশেকে রাসুল (সা.) সম্মেলনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আশেকে রাসুলগণের মহামিলন ঘটে। অন্তর চক্ষুষ্মান আশেকে রাসুলগণের মতে এ বিশ্ব আশেকে রাসুল (সা.) সম্মেলনে সকল নবি-রাসুল, আওলিয়ায়ে কেরাম, দেশরক্ষক অলী-আল্লাহ্গণ ও তামাম বিশ্বের মু’মিন মু’মিনাতের রুহানি ও জাহেরি সমাবেশ ঘটে। তারা উপস্থিত হয়ে যুগের ইমাম মহান সংস্কারক সূফী সম্রাটকে মোহাম্মদী ইসলাম প্রচারে সহযোগিতার হাত প্রসারিত করার অঙ্গীকার করেন। কাজেই এ বিশ্ব আশেকে রাসুল (সা.) সম্মেলনে উপস্থিত হয়ে আমাদের মতো নালায়েক গোলামদেরও উচিত নিজেদেরকে খেদমতে নিয়োজিত রেখে প্রকৃত আশেকে রাসুল হওয়ার শিক্ষা গ্রহণ করা। আল্লাহ্ যেন আমাদের সকলকে দয়া করে সত্যিকার আশেকে রাসুল হওয়ার সুযোগ করে দেন।
অলী-আল্লাহগণের মর্যাদা আল্লাহ্র দরবারে এত বেশি যে, কোনো এলাকা দিয়ে কোনো অলী-আল্লাহ্ হেঁটে গেলেও তাঁর অসিলায় উক্ত এলাকার কবরসমূহের আজাব আল্লাহ্ পাক ঐ দিনের জন্য বন্ধ করে দেন। বিশ্ব আশেকে রাসুল (সা.) সম্মেলনে যেহেতু স্বয়ং রাসুল (সা.) তাঁর প্রিয় আশেকদের নিয়ে রুহানিতে উপস্থিত থাকেন সেহেতু বিশ্ব আশেকে রাসুলদের সম্মেলন স্থল যে সেদিন রহমতের বন্যায় ভেসে যায় তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এ সম্মেলনে একদিকে যেমন তামাম জাহানের বর্তমান অলী-আল্লাহ্গণ জাহেরিতে উপস্থিত থাকেন অন্যদিকে তেমনি অতীতে ধুলীর ধরায় আগমনকারী অলী-আল্লাহ্গণও রুহানিতে উপস্থিত থাকেন। এ ধরনের অনুষ্ঠানে হাজির হতে পারাও ভাগ্যের ব্যাপার। আমাদের সারা বছরের কর্মকান্ড এ দিনে মূল্যায়িত হবে। এ বিষয় সক্রিয় বিবেচনায় রেখে আমাদের সবারই সতর্ক থাকা দরকার। মনে রাখতে হবে আমাদের মতো পাপীতাপী বান্দাদের আল্লাহ্ পাকের অশেষ কৃপায় তাঁর প্রিয় হাবিবের প্রকৃত প্রেমিক বানিয়ে আমাদের মুক্তির সম্ভাবনা সৃষ্টি করতেই বিশ্ব আশেকে রাসুল (সা.) সম্মেলনের আয়োজন।
মহান সংস্কারক সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেব্লাজানের ৭৪তম শুভ জন্মদিন উপলক্ষ্যে মোহাম্মদী ইসলামের নেতৃত্ব প্রদানকারী ইমাম; দেওয়ানবাগ শরীফের পরিচালক, সমন্বয়ক ও সমস্যার ফয়সালাকারী ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুর ২৩শে ফেব্রুয়ারি শুক্রবার ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল উপজেলাধীন বাবে বরকত, দেওয়ানবাগ শরীফে বিশ্ব আশেকে রাসুল (সা.) সম্মেলন আহ্বান করেছেন। এ সম্মেলনে বাংলাদেশের চৌষট্টি জেলা থেকে এবং পৃথিবীর ৫০টি দেশ থেকে লক্ষ লক্ষ আশেকে রাসুল ও মুক্তিকামী মানুষ এসে যোগদান করবেন। এ সম্মেলন একদিকে যেমন আল্লাহ্র অলীদের সম্মেলন অন্যদিকে রাসুল প্রেমিকদের এক অভাবনীয় মিলন মেলা। সারা পৃথিবীর রাসুল প্রেমিকদের সর্ববৃহৎ অনুষ্ঠান এই বিশ্ব আশেকে রাসুল (সা.) সম্মেলন। এ আশেকে রাসুল সম্মেলন আল্লাহ্র অনুষ্ঠান, আম্বিয়ায়ে কেরাম ও আওলিয়া কেরামের অনুষ্ঠান। বিশ্ব আশেকে রাসুল (সা.) সম্মেলন মানুষের মুক্তির সম্মেলন, আশেকে রাসুল (সা.) সম্মেলন পৃথিবীর সেরা সম্মেলন। আল্লাহ্ তায়ালা এরশাদ করেন, অলী-আল্লাহ্গণ কোনো প্রার্থনা করলে, তিনি তা সাথে সাথে কবুল করে নেন। (হাদিসে কুদসি) সুতরাং এ বরকতময় অনুষ্ঠানে অলী-আল্লাহ্গণের সাথে মুনাজাতে শরিক হয়ে পরম করুণাময় ও দয়ালু আল্লাহ্ তায়ালার কাছে প্রার্থনা জানালে তিনি অবশ্যই আমাদের মনের বাসনা পূর্ণ করে প্রকৃত আশেকে রাসুল হওয়ার সুযোগ করে দিবেন।
এ সম্মেলনে একদিকে যেমন আশেকে রাসুলগণের মহামিলন ঘটবে অন্যদিকে মহান মোর্শেদ সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেব্লাজানের শুভ জন্মদিন উপলক্ষ্যে বিশেষ রহমত ও বরকত লাভ করা যাবে। এ বরকতময় অনুষ্ঠানে সারোয়ারে কায়েনাত, মোফাখ্খারে মওজুদাত হযরত মোহাম্মদ মোস্তফা আহমদ মোজতবা (সা.) ও তাঁর আহলে বাইত, সাহাবায়ে কেরাম, জামে আম্বিয়া, জামে আওলিয়া ও পৃথিবীর সমস্ত আশেকে রাসুল এবং মু‘মিন মু’মিনাদের ওপর বিশেষভাবে সওয়াব রেছানি করা হয়ে থাকে। আল্লাহ্ তায়ালার প্রিয় বন্ধুগণের এ অনুষ্ঠানে হাজির হয়ে অন্যদের আশেকে রাসুলে পরিণত হওয়া সম্ভব। মহান আল্লাহ্ পাকের নিকট প্রার্থনা তিনি যেন আমাদের এ বিশ্ব আশেকে রাসুল (সা.) সম্মেলনের জন্য দয়া করে কবুল করেন।

editor

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *