হযরত তরিকুল ইসলাম তারিফ: সারা বিশ্বের মুসলমান সবাই এক আল্লাহ্র বান্দা, এক নবির উম্মত, একই কুরআনের অনুসারী, একই দিনে সবাই পবিত্র জুমার দিনে জুমার নামাজ আদায় করে থাকে। তাহলে সারাবিশ্বের মুসলমানগণ ঈদ কেন দুই কিংবা তিন দিনে পালন করেন? মুসলিম জাতির অনৈক্য, দেশ জাতি রাষ্ট্রীয় সীমানার বিভক্তি, স্বধর্মীদের ধর্ম সম্পর্কে অজ্ঞতা, বিভিন্ন ফতোয়াবাজ মুফতিদের ফতোয়ার ভিন্নতা, মুফতিদের ঐকমত্যের পার্থক্য ও ধর্মীয় গোঁড়ামিসহ নানাবিধ কারণে বিশ্বে সব মুসলমান একই দিনে রোজা ও ঈদ পালন করছে না। সারাবিশ্বে রোজা শুরু ও ঈদ পালন হয় এক, দুই কিংবা ৩ দিন ব্যবধানে। যা মোহাম্মদী ইসলামের শরিয়ত পরিপন্থী। এটি অন্যান্য ধর্মাবলম্বী মানুষদের নিকট হাস্যরসের উপক্রম।
হাদিস শরীফে বর্ণিত হয়েছে- “আলমুসলিমু আখুল মুসলিমি।” অর্থাৎ- “এক মুসলমান অপর মুসলমানের ভাই।” দুনিয়ার মুসলিম এক হও! আল্লাহ্ পবিত্র কুরআনে সকল মুসলমানকে ঐক্যবদ্ধ হতে বলেছেন। দল, মত, জাতি, গোষ্ঠী, দেশের সীমানার পার্থক্য থাকা সত্তে¡ও মহান আল্লাহ্ সকল মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে বলেছেন। বিভিন্ন দলে বিভক্ত হতে নিষেধ করেছেন। মহান আল্লাহ্ পবিত্র কুরআনে বলেন, “ওয়া‘তাসিমূ বি হাবলিল্লাহি জামি‘আও ওয়ালা তাফাররাক্বূ।” অর্থাৎ- “তোমরা আল্লাহ্র রজ্জু মজবুত করে আকড়ে ধরো এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না।” (সূরা আলে ইমরান ৩: আয়াত ১০৩) এই আয়াত থেকে সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান যে, ধর্মপালনে এমন কোনো নিয়ম অনুসরণ করা সমীচীন নয়, যার ফলে মুসলমানদের ঐক্যে বিভেদ সৃষ্টি হয়।
মহান আল্লাহ্ চন্দ্র ও সূর্যকে হিসাব গণনার জন্য সৃষ্টি করেছেন। সূরা আর রাহমানে মহান আল্লাহ্ বলেন, “আশশামসু ওয়াল ক্বামারু বিহুসবান।” অর্থাৎ- “সূর্য ও চন্দ্র হিসাব মতো আবর্তন করে (নির্ধারিত কক্ষপথে)।” (সূরা আ রাহমান ৫৫: আয়াত ৫) সূর্য ও চন্দ্র একটি হিসাব অনুসারে আহ্নিক গতি ও বার্ষিক গতির আলোকে চলে। চন্দ্রের গতি ও সূর্যের আহ্নিক গতির কারণে এরা নির্ধারিত কক্ষপথে বিচরণ করে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ্ বলেন, “আর সূর্য স্বীয় গন্তব্য স্থানের দিকে চলতে থাকে। এটা পরাক্রমশালী, সর্বজ্ঞের নিয়ন্ত্রণ। আমি চন্দ্রের জন্য নির্ধারিত করেছি বিভিন্ন মনজিল, এমনকি তা ভ্রমণ শেষে ক্ষীণ হয়ে খেজুরের পুরাতন ডালের মতো হয়ে যায়। সূর্যের সাধ্য নেই যে, সে চন্দ্রকে ধরে ফেলে এবং রাতও দিনের পূর্বে আসতে পারে না। প্রত্যেকেই নির্ধারিত কক্ষে সন্তরণ করে।” (সূরা ইয়াসিন ৩৬: আয়াত ৩৮ থেকে ৪০) চন্দ্র ও সূর্য আপন আপন কক্ষপথে বিচরণ করায় আরবি চান্দ্রবর্ষ হয় ৩৫৪ দিনে পক্ষান্তরে সূর্যবর্ষ ৩৬৫ দিনে পরিপূর্ণ হয়। সারাবিশ্বে সূর্য বর্ষ হিসেবে ইংরেজি ক্যালেন্ডারের তারিখ একই রকম। কখনো ভিন্নরকম হয় না। তাই পৃথিবীতে চাঁদের তারিখ একটি হওয়াই যুক্তিযুক্ত। সমগ্র বিশ্বে বিভিন্ন দেশের চাঁদের তারিখ ২/৩টি হলে এটা ইসলামি শরিয়তবিরোধী। হযরত উমর (রা.) হযরত আলী (রা.)-এর পরামর্শ ও সহযোগিতায় অন্যান্য সাহাবায়ে কেরামের ঐকমত্যে আরবি হিজরিবর্ষ অষ্টবর্ষ চান্দ্র পঞ্জিকা প্রণয়ন করেন। যাতে সারাবিশ্বে একই হিসাব গণনা করে অনুসরণ করা যায়।
কীভাবে সারা বিশ্বের সব মুসলমান একই দিনে রোজা ও ঈদ পালন করতে পারে পবিত্র কুরআন, হাদিস, ইজমা, কিয়াস ও মাজহাবের দলিলসহ উপস্থাপন করা হলো-
মহান আল্লাহ্ নতুন চাঁদ সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে বলেন- “তারা আপনাকে নতুন চাঁদের বিষয়ে জানতে চায়। [হে রাসুল (সা.)] আপনি বলে দিন! এটি মানুষের জন্য এবং হজের জন্য সময় নির্ধারণ করার মাধ্যম।” (সূরা আল বাকারাহ ২: আয়াত ১৮৯)
হযরত মোহাম্মদ (সা.) মক্কা হতে মদীনায় হিজরত করার এক বছর পর আল্লাহ্ তায়ালা মুসলমানদের উপর রোজার বিধান প্রবর্তন করেন। তিনি তখন সাহাবিগণকে ডেকে রমজানের রোজা থাকার নির্দেশ দিলেন। তাঁরা জিজ্ঞেস করেন, “ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমরা কবে থেকে রোজা রাখবো? তখন আরবে চান্দ্র বছর গণনার কোনো সুষ্ঠু নিয়ম না থাকাতে এবং মুসলমানরা স্বল্প পরিসরে মদীনা ও তার উপকন্ঠে বসবাস করতো বিধায় হযরত মোহাম্মদ (সা.)-এর বাণী মোবারকে বলেন- “তোমরা নতুন চাঁদ দেখে সাওম (রোজা) শুরু করো এবং তা (নতুন চাঁদ) দেখে রোজা শেষ করো (ঈদ করো)।” (বুখারী শরীফ, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৫৬ এবং ই.ফা.বা. বর্তৃক অনূদিত বোখারী শরীফ ৩য় খণ্ড, হাদিস নং ১৮৮৮) সেসময় মুসলমানদের মধ্যে এ বিধান চলতে থাকে, কিন্তু পরবর্তীতে দিনে দিনে মুসলমানদের সংখ্যা বৃদ্ধি পায় এবং মুসলিম রাষ্ট্রের পরিধি মদীনা থেকে স্ফীত হয়ে সমগ্র আরব জাহানে ছড়িয়ে পড়ে। এমতাবস্থায় মুসলমানরা যাতে সুষ্ঠু ও সঠিকভাবে ধর্ম-কর্ম করতে পারে, সেজন্যে হযরত মোহাম্মদ (সা.) তাঁর শেষ জীবনে চান্দ্র মাস গণনার উপর গুরুত্বারোপ করেন। হযরত ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে- তিনি বলেন, আল্লাহ্র রাসুল (সা.) এরশাদ করেন- “আমরা উম্মি জাতি। লিখতেও পারি না, হিসাব রাখতেও জানি না। মাস হয় এই, এই ও এইতে। (এই বলে তিনি দুই হাতের দশ আঙ্গুল তিনবার দেখালেন) এবং তৃতীয়বারে (এক হাতের) বৃদ্ধ আঙ্গুল বন্ধ রাখলেন। অর্থাৎ- ঊনত্রিশ দিনে। অতঃপর বললেন, “মাস হয় এই, এই ও এইতে। (এই বলে তিনি দুই হাতের দশ আঙ্গুল তিন বার দেখালেন)। অর্থাৎ-পূর্ণ ত্রিশ দিনে। মূলত এক বার উনত্রিশ দিনে আরেক বার ত্রিশ দিনে।” (বোখারী ও মুসলিম শরীফের সূত্রে মেশকাত শরীফ, পৃষ্ঠা ১৭৪) এই হিসাবের আলোকেই মুসলিম বিশ্বে চান্দ্র পঞ্জিকা আরবি হিজরি বর্ষ হযরত উমর (রা.)-এর খেলাফতের সময়কালে প্রণীত হয়। “সারাবিশ্বে একটি চান্দ্র পঞ্জিকা তৈরি করে অনুসরণ করলে সমগ্র বিশ্বে একই দিনে রোজা শুরু ঈদ পালন করা সম্ভব। কারণ রোজা বিধান সর্বজনীন।” পৃথিবী একটা, চাঁদ একটা, কুরআন একটা, সমস্ত মুসলিম এক জাতি, সবাই এক নবির উম্মত, তাহলে ঈদ কেন তিন দিনে করবো?…!
সারা বিশ্বের জন্য চাঁদ একটি। পৃথিবীর যে কোনো স্থান থেকে প্রথম চাঁদ দেখা যাবে সেদিন থেকে পৃথিবীতে চাঁদের ১ তারিখ গণনা করতে হবে। পৃথিবীর ভিন্ন ভিন্ন স্থান থেকে চাঁদ দেখে ভিন্ন ভিন্ন চাঁদের তারিখ নির্ধারণ করা বিষয়টি শরিয়ত বিরোধী। অর্থাৎ (চাঁদ দেখাকে কোনো একটা নির্দিষ্ট দূরত্ব বা দেশের মধ্যে সীমিত করাটা) যুক্তি এবং শরিয়ত উভয়েরই পরিপন্থি।” এ প্রসঙ্গে ‘ফাতওয়ায়ে-ই আলমগিরি’-তে বলা হয়েছে, “(পৃথিবীর) পশ্চিম এলাকার লোকজনের চাঁদ দেখায় পূর্ব এলাকার (পূর্ব প্রান্তের) লোকের উপর রোজা রাখা ওয়াজিব।” (খুলাসা) [ই.ফা.বা. কর্তৃক অনূদিত ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪৮৫] উল্লেখ্য, ফাতওয়ায়ে আলমগিরির এ দলিল অনুযায়ী সারা বিশ্বের যে কোনো স্থান থেকে চাঁদ দেখা গেলে সব মুসলমানের জন্য রোজা ও ঈদ পালন করতে হবে।
চার মাজহাবের দলিলের আলোকে সারা বিশ্বে একই দিনে রোজা ও ঈদ পালনে সম্ভবের দলিল:
চার মাজহাবের সমন্বিত ফিকহ ‘গ্রন্থ আল ফিকহ আলা মাজাহিবিল আরবায়া’ নামক গ্রন্থের ভাষ্য হচ্ছে- “পৃথিবীর কোনো এক প্রান্তে চাঁদ দেখা প্রমাণিত হলে সকল স্থানেই উক্ত দেখার দ্বারা রোজা ফরজ হবে। তাই চাঁদ নিকটবর্তী দেশে দেখা যাক বা দূরবর্তী দেশে দেখা যাক এতে কোনো পার্থক্য নেই। তবে চাঁদ দেখার সংবাদ গ্রহণযোগ্য পদ্ধতিতে অন্যদের নিকট পৌঁছতে হবে। তিন ইমাম তথা ইমাম আবু হানিফা (রহ.), ইমাম মালেক (রহ.) এবং ইমাম আহমদ ইবন হাম্বল (রহ.)-এর মতে চাঁদের উদয়স্থলের ভিন্নতা গ্রহণীয় নয়। অর্থাৎ প্রথম দিনের দেখার দ্বারাই সর্বত্র আমল ফরজ হয়ে যাবে।” (আল ফিকহ ‘আলা মাযাহিবিল আরবায়া, ১ম খণ্ড, পৃ. ৪৪৩)
আমার মহান মোর্শেদ, আল্লাহ্র মহান বন্ধু, মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী, সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেব্লাজান কুরআন ও হাদিসের আলোকে সংস্কার করেছেন -“সারবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন করা সম্ভব।” সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেব্লাজান বলেন, “আজ হোক কাল হোক সারাবিশ্বে একই দিনে রোজা ও ঈদ পালন হবে।” (ইনশাআল্লাহ) তিনি তাঁর অনবদ্য ধর্মীয় সংস্কারের কিতাব ‘সূফী সম্রাটের যুগান্তকারী ধর্মীয় সংস্কার’ কিতাবের ১২তম অধ্যায়ে বিস্তারিতভাবে লিখেছেন। তিনি সঠিক সময়ে ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালনের প্রতি গুরুত্বারোপ ও সারাবিশ্বে একই দিনে ইসলামি অনুষ্ঠান পালনের পদ্ধতি প্রণয়ন করে সংস্কার করেছেন। তিনি সারা বিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন করা সম্ভব এ বিষয়ে ‘ঈদ সমস্যার সমাধান’ (বাংলা), ঊরফ গড়ড়হ ঝরমযঃরহম চৎড়নষবস ধহফ ঝড়ষঁঃরড়হ (ইংরেজি) কিতাব লিখেছেন।
সারাবিশ্বে একই দিনে রোজা শুরু করা ও ঈদ পালন করার গুরুত্বপূর্ণ যৌক্তিক কারণসমূহ উপস্থাপন করছি-
১. কেন মুসলিম বিশ্বে একই সাথে শবে কদর পালিত হয় না? শবে কদরের রাত কি একটা নাকি দুইটা? হযরত মোহাম্মদ (সা.)-এর নিকট নাজিলকৃত পবিত্র কুরআন যে রাতে নাজিল হয়েছিল সেটাই কদরের রাত। পবিত্র কুরআন কি মধ্যপ্রাচ্যে এক রাতে আর বাংলাদেশে তার পরের রাতে অর্থাৎ দুই রাতে নাজিল হয়েছে? অবশ্যই না।
২. হযরত রাসুল (সা.)-এর হাদিস দ্বারা প্রমাণিত, কিয়ামত ১০ই মহররম শুক্রবারে হবে। আমাদের প্রচলিত গণনা অনুযায়ী মধ্যপ্রাচ্যে যদি শুক্রবারে ১০ই মহররম হয় তবে বাংলাদেশে সেদিন ৯ই মহররম শুক্রবার। আবার যদি বাংলাদেশে শুক্রবারে ১০ই মহররম হয় তবে মধ্যপ্রাচ্যে সেদিন ১১ই মহররম শুক্রবার। কিয়ামত মধ্যপ্রাচ্যের ১০ই মহররম শুক্রবারে হলে বাংলাদেশে সেদিন ৯ই মহররম থাকার কারণে কি বাংলাদেশে কিয়ামত হবে না। আর বাংলাদেশের ১০ই মহররম শুক্রবারে কিয়ামত হলে মধ্যপ্রাচ্যে ১১ই মহররম থাকার কারণে কিয়ামত হবে না। তাহলে কিয়ামত কোন দেশের ১০ই মহররম শুক্রবার অনুযায়ী হবে? অবশ্য আল্লাহ্র হিসাব অনুসারেই কিয়ামত সংঘটিত হবে। ইনশাআল্লাহ্! তবে মুসলমানদের নিজেদের পৃথক পৃথক চাঁদের তারিখ অনুসারে কিয়ামত হবে না। তবে আমাদের চাঁদের তারিখ আল্লাহ্ ও তাঁর রাসুলের হিসাব অনুসারে গণনা করতে হবে।
৩. বাংলাদেশ থেকে কেউ রোজা শুরু করে রমজান মাসের যে কোনো দিন মধ্যপ্রাচ্যে গিয়ে সেখানে ঈদ করলে তার রোজা ২৮ বা ২৯টি হয়। আবার মধ্যপ্রাচ্য থেকে কেউ রোজা শুরু করে রমজান মাসের যে কোনো দিন বাংলাদেশে এসে এখানে ঈদ করলে তার রোজা ৩০ বা ৩১টি হয়। ২৮ ও ৩১ রোজার বিধান কি ইসলামে আছে? অবশ্যই নাই। সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন হলে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব।
৪. পৃথিবীর যে গোলার্ধে চাঁদ দেখে না, তারা কোন হিসেবে রোজা ও ঈদ পালন করবে? তারা গণনার মাধ্যমে সারাবিশ্বে একই তারিখে একই দিনে ঈদ পালন করা সম্ভব।
৫. অনেকেই বলেন নামাজের ওয়াক্ত মধ্যপ্রাচ্যে ও বাংলাদেশে এক নয় তাহলে শবে কদর এক হবে কীভাবে। তাদেরকে বলি, নামাজের ওয়াক্ত এবং সাহ্রি ইফতার হয় সূর্য অনুযায়ী, কিন্তু যে কোনো আরবি মাস শুরু হয় চাঁদ অনুযায়ী। সূর্য ও চাঁদের হিসাব আলাদা। নামাজের ওয়াক্ত এবং সাহ্রি ইফতার কি চাঁদ অনুযায়ী হয়? অবশ্যই না। সূর্যের হিসেবেই হয়ে থাকে। আরবি মাস কি সূর্য অনুযায়ী হয়? অবশ্যই না। আরবি মাস চাঁদের হিসাব অনুসারে হয়ে থাকে।
মুসলমানগণ এক আল্লাহ্র বান্দা ও একই রাসুলের উম্মত হওয়া সত্তে¡ও বিভিন্ন দেশে ঈদ, রোজা, শবে মেরাজ, শবে বরাত, শবে কদর, কোরবানিসহ ইসলামের বিবিধ অনুষ্ঠান ভিন্ন ভিন্ন তারিখে পালন করে থাকে। চন্দ্র গণনার পার্থক্যের কারণে, প্রতি বছর বাংলাদেশের আকাশে চাঁদ দেখা যায়নি- এ অজুহাতে, মক্কা শরীফের সাথে বাংলাদেশের সময়ের ব্যবধান মাত্র তিন ঘণ্টা হওয়া সত্তে¡ও মক্কা শরীফে ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালনের দীর্ঘ এক দিন অথবা দু দিন পর তা বাংলাদেশে পালন করা হয়। যেহেতু সমগ্র পৃথিবীর জন্য চাঁদ একটি, মুসলিম জাতির কেন্দ্রবিন্দু মক্কা শরীফে চাঁদ দেখার সাথে সঙ্গতি রেখে সারা বিশ্বে একই দিনে যাবতীয় অনুষ্ঠানাদি উদ্যাপন সম্ভব।
আল্লাহ্র মহান বন্ধু, আমর মহান মোর্শেদ যুগের ইমাম, সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেব্লাজান এ সমস্যা সমাধানের জন্য ১৯৭৮ খ্রিষ্টাব্দে চান্দ্রপঞ্জিকা প্রণয়নের একটি মডেল মুসলিম বিশ্বের সরকার প্রধানগণের কাছে উপস্থাপন করেন। প্রস্তাবটি ইসলামি সম্মেলন সংস্থা (ওআইসি)-এর সেমিনারে আলোচিত হলে, সদস্যভুক্ত ৫০টি দেশের প্রতিনিধিগণ এর ভূয়সী প্রশংসা করেন। অতঃপর ওআইসি তার সদস্যভুক্ত দেশসমূহকে সারা বিশ্বে একই দিনে ঈদ করার প্রস্তাবনা দিয়ে চিঠি প্রেরণ করে। সেই প্রস্তাবটি ওআইসি’র সম্মলনে প্রশংসিত ও গৃহীত হয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ্! বর্তমানে এ প্রস্তাবটি বাংলাদেশ সরকারের বিশেষ বিবেচনাধীন রয়েছে।
‘কেউ যদি বলেন, আগে তো আমরা একসাথে ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন, রোজা শুরু ও ঈদ পালন একই দিনে করি নাই, এখন করলে কেমনে কী হবে? সমস্যা হবে। তাদেরকে বলছি- আগে তো ৬ মাসে জাহাজে করে হজে যেতেন এখন তো বিমানে মাত্র ৬ ঘন্টায় হজে যাওয়া যায়। সুতরাং যুগ পরিবর্তন হয়েছে। সবই ১০০% সম্ভব। শুধু মন মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে।
পরিশেষে মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিনের নিকট প্রার্থনা জানাই তিনি যেন দয়া করে সারাবিশ্বে একই দিনে রোজা শুরু ও ঈদ পালন করার তাওফিক দান করুক। মহান প্রভু সমগ্র বিশ্বের সকল মুসলমানদেরকে ঐকমত্যের ভিত্তিতে সবাইকে একই দিনে রোজা শুরু ও ঈদ পালন করার তাওফিক এনায়েত করুক। আমিন!