দেওয়ানবাগ ডেস্ক: ডিসেম্বর শুরু হচ্ছে বাঙালির সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জনের মাস। পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে বিজয়ের মাস। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে বাঙালি জাতি যে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, সেই যুদ্ধের চূড়ান্ত ফল আসে এই মাসে।
৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ এবং ৩০ লাখ শহীদের প্রাণের বিনিময়ে আসে আমাদের এই গর্বিত বিজয়। আসে বাঙালির বহু কাঙিক্ষত স্বাধীনতা। ডিসেম্বর মাসের আগে থেকেই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী দেশের বিভিন্ন স্থানে পিছু হটতে থাকে। মানসিকভাবে ভেঙে পড়া আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত বাহিনীটি মুক্তিকামী মানুষের কাছে আত্মসমর্পণ করে এ মাসের ১৬ তারিখে। বিশ্বের মানচিত্রে স্থান করে নেয় আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের এই সগৌরব অভ্যুদয় সেদিন অনেকেই মানতে পারেনি। একাত্তরে যখন বাঙালি স্বাধীনতার জন্য জীবন দিয়ে লড়াই করছে, তখন কিছু মানুষ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসর হয়ে তাদের সহায়তা করেছে। এই স্বল্পসংখ্যক মানুষ নিয়ে রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় গঠিত হয়েছিল রাজাকার ও আলবদর বাহিনী।
দেশের বিভিন্ন এলাকায় সেদিন এই বাহিনীর সদস্যরা ত্রাসের সঞ্চার করে। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল চিনত না। তাদের পথ দেখিয়ে নিয়ে গেছে রাজাকার-আলবদর বাহিনীর সদস্যরা। যুদ্ধের শেষ পর্যায়ে এসে, বাঙালির বিজয় যখন নিশ্চিত প্রায়, তখন বেছে বেছে দেশের সেরা বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়েছে। দেশের স্বাধীনতাকে বাধাগ্রস্ত করতে না পারলেও জাতিকে মেধাহীন করার পরিকল্পনা ছিল তাদের।
আমাদের মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকে যে ষড়যন্ত্রের শুরু, তা স্বাধীনতার পরও থেমে থাকেনি। ১৯৭৫ সালের রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ও সপিরবারে বঙ্গবন্ধু হত্যা সেই ষড়যন্ত্রেরই অংশ। একইভাবে দেশকে নেতৃত্বশূন্য করতে ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর জেলখানায় হত্যা করা হয় জাতীয় চার নেতাকে।
বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সেই ষড়যন্ত্র এখনো চলছে। দেশকে পিছিয়ে দিতে চায় একটি প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি। এই রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র। ১৯৭৫ সালের পর থেকে বাংলাদেশকে পাকিস্তানের ‘নতুন সংস্করণ’ করার চেষ্টা হয়েছে। স্বাধীনতার মূলমন্ত্র সংবিধান থেকে মুছে ফেলা হয়েছে। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের পরিচয় মুছে ফেলার চেষ্টা এখনো চলছে, কিন্তু কোনো ষড়যন্ত্রই সফল হয়নি। দেশের মানুষ বাংলার চিরায়ত বৈশিষ্ট্যকেই সব সময় ঊর্ধ্বে তুলে ধরেছে। এই ষড়যন্ত্র রুখে দাঁড়াতে হবে। জনগণের সম্মিলিত শক্তিই সব ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করতে পারে। এনে দিতে পারে নতুন মুক্তি। আমাদের স্বাধীনতার লক্ষ্য ছিল শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা। সেলক্ষ্য পূরণ হয়নি। দারিদ্র্য দূর করা যায়নি। জাতি হিসেবে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। সবার জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান নিশ্চিত করা যায়নি। যেদিন দেশের সব মানুষ পাবে শিক্ষার আলো, পাবে নিরাপদ স্বাস্থ্যসেবা, যেদিন সব মানুষের বাসস্থান নিশ্চিত হবে, সেদিনই অর্জিত হবে কাঙ্ক্ষিত বিজয়।
বিজয়ের এই গর্বিত মাসের শুরুতে আমরা স্মরণ করছি সেই সব অকুতোভয় বীর মুক্তিযোদ্ধাকে, যাঁরা নিজেদের প্রাণের বিনিময়ে আমাদের এই লাল-সবুজের পতাকা দিয়েছেন। স্মরণ করছি ৩০ লাখ শহীদকে, যাঁরা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন।