বাণিজ্য ডেস্ক: চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানিতে আয় হয়েছে ৩৫.৬১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আগের বছর ঠিক একই সময়ে পোশাক রপ্তানিতে আয় হয়েছিল ৩২.৯৯ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ আগের বছরের চেয়ে এবার ৯ মাসে পোশাকে রপ্তানি আয় বেড়েছে ৭.৯৬ শতাংশ।
বর্তমানে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় তৈরি পোশাক রপ্তানি গন্তব্য হওয়ায় এই সামগ্রিক প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তৈরি পোশাক খাতের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ‘সার্বিকভাবে দেশের তৈরি পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা আমাদের প্রতিযোগী দেশগুলোর চেয়ে ভালো করছেন।’ তিনি আরো বলেন, ‘বেশিরভাগ দেশের নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হলেও বাংলাদেশ ভালো করছে। মূলত আমরা বিশ্ববাজারে ইতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি, উদ্ভাবন, নতুন বাজার, উচ্চমূল্যের পোশাক রপ্তানি বাড়ার ফলে পরিমাণ এবং কার্যাদেশ কম পেলেও রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ইতিবাচক হচ্ছে। তবে সামনে সংকট মোকাবেলায় সরকারের নীতি সহায়তা দরকার। বিশেষ করে কাঁচামাল আমদানিতে ডলার সংকট এবং জ্বালানি নিয়ে উদ্যোক্তারা হিমশিম খাচ্ছেন।’
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) গত ৯ মাসের তথ্য বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারি-সেপ্টেম্বরের মধ্যে ইউরোপে বাংলাদেশের রপ্তানি ৬.৪০ শতাংশ বেড়ে ১৭.৫২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১৬.৪৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
তথ্য বলছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রধান বাজার জার্মানিতে কয়েক মাস ধরে ক্রমাগত কমেছে। ২০২৩ সালের প্রথম ৯ মাসে জার্মানিতে রপ্তানি ২০২২ সালের একই সময়ের তুলনায় ১২.৫৮ শতাংশ কমেছে। অর্থাৎ ৫.৩৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে ৪.৬৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে নেমেছে।
বাংলাদেশের প্রধান বাজার যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি কমেছে ৭.১৮ শতাংশ এবং ২০২২ সালের জানুয়ারি-সেপ্টেম্বরে ৬.৭৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে ২০২৩ সালের একই সময়ে ৬.৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে নেমে এসেছে।
৯ মাসে যুক্তরাজ্যে ১৪.৯২ শতাংশ ও কানাডায় ৬.২৭ শতাংশ ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এই সময়ে যুক্তরাজ্য ও কানাডায় পোশাক রপ্তানি যথাক্রমে ৪.০৭ ও ১.১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে।
গতানুগতিক বাজারের পাশাপাশি অপ্রচলিত বাজারেও বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বরে ৫.১১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে ২৮.৬৩ শতাংশ বেড়ে ৬.৫৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে।
প্রধান অপ্রচলিত বাজারগুলোর মধ্যে জাপানে তৈরি পোশাক রপ্তানি ১.২৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে, যা বছরে ৪৫.২৩ শতাংশ বেড়েছে। অস্ট্রেলিয়ায় ৫৪.৬৯ শতাংশ, ভারতে ১৩.৮৭ শতাংশ, দক্ষিণ কোরিয়ায় ২০.৯৩ শতাংশ, চীন ও তুরস্কের বাজারে রপ্তানি যথাক্রমে ৪৬.৩২ শতাংশ, ৩৫.১১ শতাংশ বেড়েছে।
বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক আরশাদ জামাল দিপু বলেন, বিশ্ববাজারে তৈরি পোশাক খাতে গত ৯ মাসে প্রায় ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলেও শঙ্কাও আছে। মূল্যস্ফীতি, কাঁচামাল আমদানিতে ডলার সংকট, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর নতুন করে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধ এই উদ্বেগ বাড়িয়েছে। এছাড়া ছয় সপ্তাহ ধরে কার্যাদেশ কমতে শুরু করেছে।