দেওয়ানবাগ ডেস্ক: বেলায়েত খান অফিস শেষে বাড়ি ফিরছেন। বললেন, ‘ভাই রে, আমার বাড়ি আব্দুল্লাপুর। যাইতে খবর আছে। অনেক সময় লাগে। তাই ঘুমানোটা অভ্যাস হইয়া গ্যাছে। খালি খালি বইসা থাকনের চেয়ে একটু ঘুমাইলে কাজে লাগব।’ বেলায়েত খানের নিজ গন্তব্যে পৌঁছানোর কারণ একটাই-যানজট। এতে দীর্ঘ সময় লেগে যায়। প্রতিদিনই ঘটে এটা।
শুধু বেলায়েত খান নন, গত বৃহস্পতিবার আরো অনেক বাসযাত্রীর মধ্যে এমন একঘেয়ে তিক্ত অভিজ্ঞতার ছাপ দেখা যায়।
গত কয়েক দিন ধরে যানজটের কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয়েছে রাজধানীর পাশের এলাকা টঙ্গী। যানজটে নাকাল ঢাকাবাসী। এতে বিভিন্ন যানবাহনের যাত্রী শুধু ত্যক্তবিরক্তই হচ্ছেন না, পুড়ছে গাড়ির তেল, নষ্ট হচ্ছে কর্মঘণ্টা, ভেস্তে যাচ্ছে পূর্বপরিকল্পিত কাজের পরিকল্পনা।
গাজীপুর মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ সূত্র জানায়, গতকাল ভোর থেকে মিলগেটে যানজট দেখা দেয়। বেলা বাড়ার সঙ্গে মহাসড়কে যানবাহনও বাড়তে থাকে। বাড়তে থাকে যানজটও।
সকাল ৯টার পর যানজট গাজীপুরের বোর্ডবাজার থেকে রাজধানীর বনানী পর্যন্ত দীর্ঘ হয়। ১০ মিনিটের পথ যেতে এক থেকে দেড় ঘণ্টা লাগে। এতে দুর্ভোগ পোহান ঢাকা-গাজীপুর সড়কপথের এবং ময়মনসিংহগামী যাত্রীরা। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে ঢাকার অফিসগামী যাত্রীদের। মিরপুর, মহাখালী, বনানী, বাড্ডা, নতুনবাজার, কুড়িল এলাকায়ও তীব্র যানজট দেখা গেছে। এই যানজটের বিরূপ প্রভাব গুলিস্তান, পল্টন ও ফার্মগেট এলাকায়ও দেখা দেয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, দুপুর ২টার দিকে মিরপুর থেকে গুলিস্তানের দিকে যাওয়ার সময় কল্যাণপুরে এসে আধাঘণ্টা ধরে বাসগুলো দাঁড়িয়ে। অনেকে বাধ্য হয়ে বাস থেকে নেমে হাঁটতে শুরু করেন। গুলিস্তানগামী বাসের যাত্রী মিনহাজ উদ্দিন বলেন, ‘এভাবে তো চলাচল করাই মুশকিল হয়ে যাচ্ছে। তিন ঘণ্টা ধইরা বাসে বইসা আছি। ’
একই অবস্থা দেখা যায় বিকেল ৪টার দিকে গুলিস্তান থেকে বারিধারা আসার পথে। গুলিস্তান থেকে উত্তর বাড্ডার বাসযাত্রী করিম শেখ বলেন, ‘দুপুরে এক ভিআইপি যাওয়ার কারণে দুই ঘণ্টা বাংলামোটরে আটকে ছিলাম। ’
অনেকে বাসের অপেক্ষায় সড়কের বিভিন্ন মোড়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। কাকরাইল মোড়ে কথা হয় মো. হাওলাদারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘অফিস শেষে ৩৫ মিনিট ধরে এক জায়গায়ই দাঁড়িয়ে আছি। কিন্তু কোনো বাসেই উঠতে পারলাম না।’ বিকেলে মগবাজার উড়ালসেতুর ওপরও ছিল দীর্ঘ যানজট। উড়ালসেতু ব্যবহার করে শান্তিনগর মোড় থেকে মালিবাগ আবুল হোটেলগামী বাসগুলোকে অপেক্ষা করতে হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। মগবাজার থেকে শান্তিনগর ও রাজারবাগগামী বিপরীত সড়কেও ছিল যানবাহনের দীর্ঘ সারি।
রাজধানীতে বড় বড় প্রকল্পের কারণে যানজট বাড়ে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। সড়ক পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা জোরদার ও দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে টাস্কফোর্সের সভায় তিনি এ কথা বলেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মেট্রো রেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে অনেক রাস্তা দখল করে রেখেছে। এছাড়া রাজধানীতে যে পরিমাণ সড়ক দরকার, তার চেয়ে কম আছে। রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণেও যানজট তৈরি হচ্ছে।