সাহিত্য সময়কে ধরে রাখে। সাহিত্য মানুষের মনের খোরাক জোগায়। মুসলিম সাহিত্যিকরা তাদের সাহিত্যজ্ঞান দিয়ে শতাব্দীকাল ধরে পাঠকের মনের পুষ্টির জোগান দিয়েছেন। জ্ঞানের আলো ও পাঠের আনন্দ তাদের সাহিত্য সৃষ্টিকে করেছে কালজয়ী। মুসলিম সাহিত্যের বড় অংশই আলোচনা করেছে স্রষ্টা প্রেমের অনবদ্য আকুল আবেদন। স্রষ্টা প্রেমের পাশাপাশি মানবপ্রেমের নানাদিক উঠে এসেছে এই সাহিত্যকর্মগুলোতে। কবিতা ছাড়াও দর্শন, বিজ্ঞান, ইতিহাস ও ভ্রমণও ছিল তাদের সাহিত্যের বিষয়বস্তু। সাহিত্যে অনন্য অবদান রাখা মুসলিম সাহিত্যিকের সংখ্যা কম নয়। তাদের উল্লেখযোগ্য দুজন-
হযরত ফরিদ উদ্দীন আত্তার (রহ.)
তার পুরো নাম আবু হামিদ বিন আবু বকর ইব্রাহিম। তিনি লেখালেখি করেছেন ফরিদ উদ্দীন নামে। তাঁর লেখনী এতটাই হƒদয়গ্রাহী ছিল যে, পাঠকরা তাঁকে সুগন্ধির সঙ্গে তুলনা করতেন। তাঁর নামের সঙ্গেই জুড়ে দেওয়া হয় আত্তার বা সুগন্ধি ব্যবসায় শব্দটি। তিনি হয়ে ওঠেন তাঁর সময়ে অন্যতম প্র্রধান মুসলিম কবি। তাঁর কবিতা পড়ে মানুষের মন স্রষ্টার প্রতি আকৃষ্ট হতো। হƒদয় ছুঁয়ে যাওয়ার আবেগ তাঁর কবিতার প্রধান বৈশিষ্ট্য। এই ফারসি কবি কিন্তু সুফিবাদের ছোঁয়া রাখতেন তাঁর কবিতায়। শুধু তাই নয়, কবিতার আড়ালে সুফিবাদের যে প্রেমময় দিক উঠে আসত তা পরবর্তীতে স্থায়ী ভিত্তি লাভ করে। ফরিদ উদ্দীন আত্তার অন্তত ৩০টি বই লিখে গেছেন। তাঁর একটি বিখ্যাত বই হচ্ছে ‘মানতিকে তাইয়ার’ বা ‘পাখির সমাবেশ’। তিনি গবেষণার মাধ্যমে যে জ্ঞান অর্জন করেন তা কবিতা আকারে লিখে গেছেন।
সাইদ নুরসি
সাইদ নুরসিকে অনেকে চেনেন বদিউজ্জামান নামে। এই প্রখ্যাত লেখক রিসালায়ে নূর নামক কুরআনের ব্যাখ্যা রচনা করেন। এটির আকার ৬ হাজার পৃষ্ঠারও বেশি। আধুনিক বিজ্ঞান ও যুক্তিকে ভবিষ্যতের পথ বিবেচনা করে তিনি সাধারণ বিদ্যালয়ে ধর্মীয় জ্ঞান ও ধর্মীয় বিদ্যালয়ে আধুনিক বিজ্ঞান শিক্ষাদানের পক্ষপাতী ছিলেন। যে কারণে তাঁকে এখনো শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হয়। বর্তমানে ইসলাম নিয়ে উচ্চশিক্ষার যে ধারা চালু রয়েছে এর নেপথ্যে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। সাইদ নুরসি উসমানীয় সাম্রাজ্যের অন্তর্গত পূর্ব আনাতোলিয়ার বিতলিস ভিলায়েত প্রদেশের নুরস নামক কুর্দি গ্রামে জš§গ্রহণ করেন। তিনি ধর্মীয় বিতর্কে পারদর্শিতা দেখান। ইসলামি জ্ঞানের ক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জনের পর তাঁকে বদিউজ্জামান নাম প্রদান করা হয়, যার অর্থ ‘সময়ের অদ্বিতীয় ও সবচেয়ে উচ্চ ব্যক্তি’।