দেওয়ানবাগ ডেস্ক: বাংলাদেশে নির্মাণাধীন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজ শতভাগ শেষ না হলে নতুন করে কোনো কেন্দ্র তৈরির কাজ শুরু করা হবে না। যদিও দেশের মোট চাহিদার ১০ শতাংশ বিদ্যুতের জোগান পরমাণু থেকে নিশ্চিত করতে চায় সরকার। আর তা বাস্তবায়ন করতে হলে নির্মাণ করতে হবে আরও কয়েকটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান এ কথা জানিয়েছেন। বর্তমানে আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার ৬৬তম সাধারণ অধিবেশনে অংশ নিতে অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায় অবস্থান করছেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী। সোমবার অধিবেশনের প্ল¬্যানারি সেশনের ফাঁকে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে এসব কথা বলেন তিনি। নতুন পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে সরকারের পরিকল্পনার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইয়াফেস ওসমান বলেন, এখনই তা সম্ভব নয়। রূপপুরের অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে আগামী দিনে প্রকল্প বাস্তবায়নের ইঙ্গিত মিলেছে তার কথায়। তিনি বলেন, ‘(পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে) বাইরে কাজ করে এসেছেন, এমন অভিজ্ঞ জনবল আমাদের নেই বললেই চলে। জিরো ইউনিট বলতে গেলে, আমরা আমাদের ছেলেগুলোকে ওইভাবে প্রশিক্ষণ করিয়ে নিচ্ছি। এ জায়গায় এমন একটা বিপুল কাজ, যেটা এক দিক দেখলে পরে আরেক দিক দেখা যায় না। একটা বিশাল প্রজেক্টের ব্যাপার। এর নির্মাণের মধ্য দিয়ে আমাদের সক্ষমতা আমরা বুঝতে পারলাম। আর এটি শেষ হওয়ার আগে আমার মনে হয় আরকেটা প্রকল্প নির্মাণ করা আমাদের জন্য খুব একটা লজিক্যাল হবে না।’ তবে জ্বালানি নিয়ে সরকার পরিকল্পনা প্রণয়ন করে ফেলেছে বলেও মন্তব্য করেছেন ইয়াফেস ওসমান। তিনি বলেন, ‘আমরা তো আমাদের এনার্জি পরিকল্পনা করে ফেলেছি। অধিবেশনে দেখলাম বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আগত প্রতিনিধিদের কয়েকজন বললেন, তারাও নিউক্লিয়ারে ১০ শতাংশে যেতে চান। আমাদের এনার্জির ১০ শতাংশ আসবে নিউক্লিয়ার থেকে। আর জ্বালানির ১০ শতাংশ যদি পরমাণু থেকে আনতে হয় তার জন্য আরও পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করতে হবে। সেটা করতে হলে আমাদের আরও কয়েকটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করতে হবে। একটা জায়গা আমরা দেখছি দক্ষিণের দিকে, যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইচ্ছা। আর এখানেও (পাবনরা ঈশ্বরদীর রূপপুরে) আরও দুটো করার মতো সুযোগ আছে। তবে এগুলো আরও একটু পরে। এটা আমরা শুরু করার পর ওই সিদ্ধান্তগুলোতে যাওয়া লজিক্যাল বলে মনে করি।’ এদিকে সম্মেলনের ফাঁকে সাইডলাইনে মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসেছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিনিয়োগ ও নির্মাণকারী রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান রোসাটম। প্রকল্পে সহায়তাকারী দেশ ভারতের সঙ্গেও বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কথা বলেছেন বলে জানান রূপপুর প্রকল্পের পরিচালক ড. শৌকত আকবর। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘কভিড-ননকভিড এসব মিলিয়ে একটা সিচুয়েশন তৈরি হয়েছে। এগুলো নিয়ে নির্মাণকারী দেশ আলাপ করতে চায়। কিন্তু আমাদের কথা হলো যে, আমরা যেভাবে টার্গেট নিয়েছি, মানে তারিখ ঠিক করেছি, এর মধ্য থেকে যেন আমরা বেরিয়ে না যাই সেটাই আমাদের লক্ষ্য।’
সব ঠিক থাকলে মন্ত্রীর আশা ২০২৩ সালে উৎপাদনে আসছে রূপপুরের প্রথম ইউনিট। আর পরের বছর আসছে দ্বিতীয় ইউনিট। যে গতিতে কাজ এগিয়ে চলেছে তাতে ‘প্রকল্পে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়’। পরমাণু নিয়ে সরকারের পরিকল্পনা জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশকে ক্লাইমেটে চ্যাম্পিয়ন এ বিষয়টি তো সারা পৃথিবী মেনে নিয়েছে। আমরা চাই যে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজটিও যেন একইভাবে হয়।’ তবে এটি নিয়ে এখনো ধোঁয়াশা আছে বলে মনে করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘এটা অনেকের কাছে খুব ক্লিয়ার না। আমাদের অর্থনীতিবিদরাও ওইভাবে চিন্তা করেননি। এ ধরনের টেকনোলজি বাংলাদেশের মতো দেশে ব্যবহার করে ইলেকট্রিসিটি তৈরি করতে পারি।’
এরপর আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা ৬৬তম অধিবেশনের প্ল্যানারি সেশনে বক্তব্য রাখেন মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান। বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে তিনি বলেন, ‘পারমাণবিক প্রযুক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের মাধ্যমে একটি উন্নত বিশ্বের জন্য সংস্থাটির আদেশ ও কার্যক্রমের প্রতি বাংলাদেশের দৃঢ় সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করছি।’