মুহাম্মদ হেদায়াতুল্লাহ: মানবিক গুণাবলির মাধ্যমে সামাজিক শান্তি তৈরি হয়। তাই সুশৃঙ্খল সমাজ বিনির্মাণে উত্তম গুণাবলির ভূমিকা অপরিসীম। প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা.)-কে উদ্দেশ করে মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আপনি মহান চরিত্রের অধিকারী।’ (সুরা কলম, আয়াত ৪)
হযরত জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, হযরত রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে আমার সবচেয়ে প্রিয় ও কিয়ামতের দিন আমার সবচেয়ে কাছে থাকবে, যে তোমাদের মধ্যে অধিকতর সুন্দর চরিত্রের অধিকারী। আর আমার কাছে সবচেয়ে ঘৃণিত ও আমার কাছ থেকে সবচেয়ে দূরে থাকবে বাচাল ও অহংকারী।’ (তিরমিজি, হাদিস ২১০৮)
নিম্নে কয়েকটি মানবিক গুণ সম্পর্কে বর্ণনা করা হলো-
সত্যবাদিতা: সত্যবাদিতা মুমিনের ভূষণ। সততা মানুষকে সফলতার পথ দেখায়। আর ধ্বংসের পথে পৌঁছে দেয় মিথ্যা ও কপটতা। তাই মহান আল্লাহ সত্যবাদীদের সঙ্গে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘হে মুমিনরা, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সঠিক কথা বলো।’ (সুরা আহজাব, আয়াত ৭০)
বিপদে ধৈর্য ধারণ: বিপদাপদের মুহূর্তে ধৈর্য ধারণ করা মুমিনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। কঠিন সময়ে অস্থির না হয়ে আল্লাহর কাছে পুণ্যের প্রত্যাশা করা জরুরি। আল্লাহ বলেন, ‘যে আল্লাহকে ভয় করল এবং ধৈর্য ধারণ করল, আল্লাহ সৎকর্মশীলদের প্রতিদান নিষ্ফল করেন না।’ (সুরা ইউসুফ, আয়াত ৯০)
হযরত আবু সাইদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, হযরত রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ধৈর্যধারণের চেষ্টা করবে, আল্লাহ তাকে ধৈর্যধারণের সুযোগ দেবেন। আর ধৈর্যের চেয়ে বেশি ব্যাপক ও কল্যাণকর কোনো কিছু কাউকে দেওয়া হয়নি।’ (বুখারি, হাদিস ১৪৬৯, মুসলিম, হাদিস ১০৫৩)
সুন্দর কথা: সবার সঙ্গে সুন্দরভাবে কথা বলা সদকার সমতুল্য। সুন্দর কথা মানুষের অন্তরে অনেক বেশি প্রভাব বিস্তার করে। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হযরত রাসুল (সা.) বলেন, ‘সূর্য উদিত হওয়া প্রতিটি দিবসেই মানুষের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ওপর সদকা দেওয়া আবশ্যক হয়। দুজনের মধ্যে বিবাদ নিরসন করা সদকার সমতুল্য। কাউকে বাহনে উঠতে কিংবা কোনো সামগ্রী বাহনে তুলে দিতে সাহায্য করা সদকা। সুন্দর কথা বলা সদকা। নামাজে যাওয়ার প্রতিটি পদক্ষেপ সদকা। পথ থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে ফেলা সদকা।’ (মুসলিম, হাদিস ১০০৯)
অনর্থক কাজ পরিহার: ইসলামের সৌন্দর্য হলো অনর্থক কাজকর্ম পরিহার করা। তাই একজন মুসলিমের অনর্থক কাজে লিপ্ত হওয়া অনুচিত। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হযরত রাসুল (সা.) বলেন, ‘কোনো ব্যক্তির ইসলামের সৌন্দর্য হলো অনর্থক কাজ পরিহার করা।’ (তিরমিজি, হাদিস ২৩১৮)
অতিথিপরায়ণতা: অতিথির সমাদর ইসলামের অন্যতম সৌন্দর্য। সাধ্যানুযায়ী অতিথির আদর-আপ্যায়ন করা কর্তব্য। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হযরত রাসুল (সা.) বলেন, ‘কেউ আল্লাহ ও আখিরাতের ওপর ইমান আনলে সে যেন কল্যাণকর কথা বলে নতুবা চুপ থাকে। কেউ আল্লাহ ও আখিরাতের ওপর ইমান আনলে সে যেন প্রতিবেশীকে সম্মান করে। কেউ আল্লাহ ও আখিরাতের ওপর ইমান আনলে সে যেন অতিথির সমাদর করে।’ (বুখারি, হাদিস ৬০১৮)
মানুষের জন্য কল্যাণ কামনা: সবার জন্য কল্যাণের প্রত্যাশা করা মুমিনের অন্যতম গুণ। তামিম বিন আউস আদদারি (রা.) থেকে বর্ণিত, হযরত রাসুল (সা.) বলেন, ‘দ্বিন হলো মানুষের কল্যাণ কামনা। দ্বিন হলো মানুষের কল্যাণ কামনা। দ্বিন হলো মানুষের কল্যাণ কামনা।’
সাহাবারা জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসুল, কার জন্য? হযরত রাসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর জন্য, তাঁর রাসুল (সা.)-এর জন্য, মুমিনদের ইমামদের জন্য এবং সাধারণ মুমিনদের জন্য। সর্বোপরি সাধারণ মুসলিম ও তাদের ইমামদের জন্য।’ (আবু দাউদ, হাদিস ৪৮৬০)
ক্রোধ সংবরণ: ক্রোধ দমন করা ও প্রতিশোধ নেওয়া থেকে বিরত থাকা মুসলিমের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। রাগ দমনকারীর মর্যাদা আল্লাহর কাছে অনেক উঁচু। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমরা রবের ক্ষমার দিকে এবং আসমান ও জমিনের সমান বিস্তৃত জান্নাতের দিকে দৌড়ে যাও, যা খোদাভীরুদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল অবস্থায় ব্যয় করে, ক্রোধ সংবরণ করে ও মানুষের প্রতি ক্ষমাশীল, আল্লাহ সৎকর্মশীলদের ভালোবাসেন।’ (সুরা আলে ইমরান)
ঝগড়া-বিবাদ নিরসন: ঝগড়া-বিবাদ নিরসনে এগিয়ে আসা মহাপুণ্যের কাজ। হযরত আবু দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত, হযরত রাসুল (সা.) বলেন, ‘আমি কি তোমাদের রোজা, নামাজ ও সদকার চেয়ে বেশি উত্তম কাজের কথা বলব না?’ সাহাবারা বলেন, হে আল্লাহর রাসুল, অবশ্যই বলবেন। তিনি বলেন, ‘পরস্পরের মধ্যে বিবাদ নিরসন করা। কারণ পরস্পরের মধ্যে থাকা বিবাদ সব কিছু ধ্বংস করে।’ (তিরমিজি, হাদিস ২৫০৯)
মহান আল্লাহ আমাদের আমল করার তাওফিক দান করুন।