আঞ্চলিক উন্নয়নের বাধা আস্থাহীনতা

আঞ্চলিক উন্নয়নের বাধা আস্থাহীনতা


দেওয়ানবাগ ডেস্ক: দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর উন্নয়নে একাধিকবার নানা পদক্ষেপ নেওয়া হলেও তা কার্যকর হয়নি। এর পেছনে অন্যতম প্রধান কারণ আস্থাহীনতা, সমন্বয়হীনতা ও পরিকল্পনার অভাব।
গত রবিবার ১৪তম সাউথ এশিয়া ইকোনমিক সামিটের শেষ দিনে সমাপনী বক্তব্যে এসব কথা বলেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান রেহমান সোবহান। সিপিডি এই সম্মেলনের আয়োজন করে।
রেহমান সোবহান বলেন, এই আস্থাহীনতা দূর করার জন্য প্রয়োজন সার্কের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যকারিতা বাড়ানো। তিনি বলেন, ‘অমর্ত্য সেন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও অর্থনৈতিক ব্যক্তিদের মধ্যে গণবিতর্কের মাধ্যমে নানা ধরনের সমস্যার সমাধানে কথা বলেছেন। আমরা সেই কাজটিই করছি। এখানে দুই দিনব্যাপী আলোচনায় বেশ কিছু সমস্যা ও সম্ভাবনার কথা শুনলাম।
আশা রাখি, সামনের দিনে এসব সমস্যার সমাধান হবে এবং কিভাবে এসব সমস্যার সমাধানে আমরা কাজ করব, তার একটা দিকনির্দেশনা পাওয়া যাবে।’
সিপিডির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান বলেন, দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর মধ্যে আন্ত ট্রেন যোগাযোগ ও আন্ত সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হলেও এর বাস্তবায়ন হয়নি। কেন হয়নি, তা নিয়ে ভাবতে হবে। প্রয়োজন হলে সুধীসমাজকে এসব কাজে যুক্ত করতে হবে।
নীতিনির্ধারণীতে তাদের অবদান রাখার সুযোগ করে দিতে হবে। এর আগে দুই দিনব্যাপী সম্মেলনের আলোচনার সংক্ষিপ্ত উপস্থাপন করেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। তিনি বলেন, ‘দুই দিনব্যাপী প্যানেল আলোচনায় মূলত আলোচনা হয় দক্ষিণ এশিয়ার উন্নয়ন, সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে। পাশাপাশি আলোচনা হয়েছে উচ্চ প্রবৃদ্ধি, উন্নয়নে সুধীসমাজের ভূমিকা, আন্ত বর্ডার বাণিজ্য ও বাইলেটারাল চুক্তির বিষয়াদি নিয়ে। আমরা কারণ খোঁজার চেষ্টা করেছি এর আগে নেওয়া পদক্ষেপগুলো কেন বাস্তবায়ন হয়নি।’
সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি স্টিফেন লিলার বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে অপার অর্থনৈতিক সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এর জন্য প্রয়োজন অবকাঠামোমূলক উন্নয়ন, পারস্পরিক সহযোগিতা, উন্নত যোগাযোগ ও বৈদ্যুতিক খাতের উন্নয়ন।
নারীর ক্ষমতায়ন ও লৈঙ্গিক ক্ষমতায়ন শীর্ষক সেমিনারের প্যানেল আলোচনায় অংশ নিয়ে সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘বাংলাদেশের নারীরা অনেক দূর এগিয়েছে শিক্ষা ও কর্মসংস্থানে অংশগ্রহণের দিক থেকে। তবে এখনো সমাজে বেশ কিছু সাংস্কৃৃতিক বিষয় রয়েছে, যে কারণে নারীদের নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। আমরা করোনাকালে দেখেছি, নারী শিক্ষার্থীরা বেশির ভাগই ঝরে পড়েছে। অনেকের বাল্যবিবাহ হয়েছে। এর পেছনে অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে মেয়েদের মা-বাবা তাঁদের সন্তানদের প্রতি এখনো বিনিয়োগ করতে চান না।’
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, সমাজে যেসব নারী খানিকটা পিছিয়ে রয়েছে, তাদের পিছিয়ে পড়ার অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে সহিংসতা। তারা ঘরে-বাইরে সহিংসতার শিকার হয়েছে। তিনি বলেন, নারীদের কর্মক্ষেত্রে অংশগ্রহণ বেড়েছে। তবে তা অবৈতনিক কাজে বেশি। নারীরা উচ্চবেতন ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে তেমন জড়িত হতে পারেনি। এখনো তারা রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতাশীল হতে পারেনি।
ব্র্যাকের চেয়ারপারসন ও পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, ‘জনস্বাস্থ্য খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি ক্ষেত্র। বাংলাদেশের অনেক ক্ষেত্রেই সফলতা রয়েছে, কিন্তু এ ক্ষেত্রে নানা সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে। এর অন্যতম কারণ মানসম্পন্ন চিকিৎসার অভাব। অন্যদিকে জনসংখ্যার তুলনায় ডাক্তার ও নার্সের অনুপাত অনেক কম, যা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বিবেচনায় অনুপস্থিত। এদিকে আমাদের নজর দেওয়া দরকার। আমার মনে হয়, স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিয়ে আলোচনাও হয় সীমিত পরিসরে।’
দুই দিনের এই সম্মেলনে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর থেকে ছয় শর বেশি খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা অংশ নেন। সম্মেলনে মোট ১৭টি প্যারালাল সেশন অনুষ্ঠিত হয়। এতে দেশ-বিদেশ থেকে ৭০ জনেরও বেশি বক্তা বক্তব্য দেন।

editor

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *