অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনে বাড়ছে স্ট্রোকের ঝুঁকি

অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনে বাড়ছে স্ট্রোকের ঝুঁকি

দেওয়ানবাগ ডেস্ক: অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনে বাড়ছে স্ট্রোকের ঝুঁকি। এটি মস্তিষ্কের রোগ। এটি বয়স্কদের রোগ হলেও, বর্তমানে তরুণদের মধ্যে এ রোগের প্রবণতা বেড়েছে। আগেকার তরুণরা কায়িক শ্রম করত। তারা হেঁটে যাতায়াত করত। কিন্তু এখন যাতায়াতে যানবাহন ও গাড়ি ব্যবহার করা, জাংকফুড খাওয়া, বিভিন্ন নেশাজাতীয় দ্রব্য সেবন ও অতিরিক্ত চাপের কারণে তরুণদের মধ্যেও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ছে বলে জানান সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। তবে তারা বলছেন, স্ট্রোক দ্রুত শনাক্ত করে রোগীকে সময়মতো হাসপাতালে নিতে পারলে একটি ইনজেকশন পুশের মাধ্যমেই রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ করা সম্ভব।

স্ট্রোক রোগ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতেই প্রতি বছর ২৯ অক্টোবর বিশ্ব স্ট্রোক দিবস উদযাপন করা হয়। এ বছর দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারিত হয়েছে-‘Mianutes can save lives”। বাংলায় যা করা হয়েছে-‘না করলে সময় ক্ষেপণ, স্ট্রোক হলেও বাঁচবে জীবন’।

স্ট্রোক শনাক্তের উপায় : স্ট্রোক দুইভাবে হতে পারে-এক, মস্তিষ্কের রক্তনালি বন্ধ হয়ে অথবা কোনো কারণে রক্তনালি ছিঁড়ে রক্তক্ষরণ হয়ে স্ট্রোক হয়। স্ট্রোক চেনার উপায় হচ্ছে-যদি আচমকা হাত-পা, বা শরীরের কোনো একপাশ অবশ লাগে বা শক্তি কম অনুভূত হয়। মুখ বেঁকে যাওয়া, চোখে ঝাপসা দেখা এবং রোগীর কথা জড়িয়ে যাবে। তীব্র মাথাব্যথা এবং রোগী হঠাৎ ভারসাম্য হারিয়ে ফেলতে পারে। এ ধরনের লক্ষণ কারো মধ্যে দেখা দিলে, দ্রুত হাসপাতালে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। কারণ স্ট্রোকে আক্রান্ত রোগীর সুস্থতা অনেকটা নির্ভর করে সময়ের ওপর।

তরুণদের মধ্যে স্ট্রোকের কারণ অনেকগুলো। তার মধ্যে- আগেকার তরুণরা বসে থাকত না, তারা কায়িক শ্রম করত। তারা কাজ করত, খেলাধুলা করত, ব্যায়াম করত, গ্রামে তারা চাষাবাদ করত। তখন এত যানবাহন ছিল না, গাড়ি ছিল না, তারা হেঁটে চলাফেরা করত। এখন তো তারা গাড়িতে চড়ে, যানবাহনে যাতায়াত করে। সেকেন্ডারি লাইফ স্টাইলের কারণে তরুণদের কায়িক শ্রম হয় না। আর কায়িক শ্রম না হওয়ার কারণে তাদের অল্প বয়সে উচ্চ রক্তচাপ হচ্ছে, ডায়াবেটিস হচ্ছে, সেই সঙ্গে খাবারের যে পরিবর্তনটা, আগেকার তরুণরা জাংকফুড খেত না। তারা অতিরিক্ত চর্বিজাতীয় খাবার খেত না। তারা ভাজাপোড়া খেত না। অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার খেত না। এখন ঢাকা বা চট্টগ্রামে গেলে দেখা যাবে, প্রত্যেক সড়কের মোড়ে মোড়ে ফাস্টফুডের দোকান। এসব দোকানের সুস্বাদু খাবার অতিরিক্ত তেলে ভাজা, অতিরিক্ত লবণ এবং অতিরিক্ত চর্বি। এসব সুস্বাদু খাবারের প্রতি আমাদের তরুণ সমাজ অনুরক্ত হয়ে গেছে। এটা একটা কারণ। তরুণরা এসব খাবার বেশি খাচ্ছে।

দ্বিতীয় কারণ, আগের প্রজন্ম মদ-গাঁজা, ইয়াবা, প্যাথেডিন এসব নিত না বা কালে ভদ্রে নিত। এখন প্রায় প্রতি গ্রাম-মহল্লায়, প্রতি ওয়ার্ডে কোনো না কোনো ছেলেমেয়ে মাদকাসক্ত। এই মাদকাসক্তের গুরুত্বপূর্ণ রিস্কফ্যাক্টর স্ট্রোক। এছাড়া তাদের মধ্যে আরো আছে-ডিপ্রেসন, স্ট্রেস, অ্যানজাইটি, এরা পরিবার থেকে দূরে, পরিবারের সঙ্গে বন্ডিং নাই। অথবা আশানুরূপ চাকরি পাচ্ছে না। কিছু তরুণ জন্মগত রক্তনালির অসুখে ভোগে, অনেকের হার্টের অসুখ থাকে, এন্ডোক্রাইন ডিজিজ থাকে। কিন্তু এরা সহজে চিকিৎসকের কাছে যায় না। অথবা অল্প বয়সে ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপের কথা স্বীকারই করে না। কিন্তু এটা যে অল্প বয়সে হতে পারে. এটা তারা বিশ্বাসও করে না। আর এ সম্পর্কে মানুষের মধ্যে সচেতনতাও নেই।

জাতীয় নিউরো সায়েন্স ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. কাজী দীন মোহাম্মদ বলেছেন, স্ট্রোককে জানতে হবে এবং তাৎক্ষণিক চিকিৎসা নিতে হবে। স্ট্রোকের প্রথম সাড়ে ৪ ঘণ্টার মধ্যে একটি ইনজেকশন পুশ করার মাধ্যমে স্ট্রোকের রোগীকে সম্পূর্ণ সুস্থ করা যায়। যে কারণে স্ট্রোকের রোগীর জন্যে সময় অতি গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষজ্ঞ এই চিকিৎসক স্ট্রোক প্রতিরোধে সচেতনতা বাড়াতে ধূমপানমুক্ত থাকার কথা বলেন। একই সঙ্গে তিনি অতিরিক্ত মদ্যপান না করা, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা, দুশ্চিন্তামুক্ত জীবনযাপন পরিহার ও কায়িক শ্রম করার পরামর্শ দেন।

তরুণদের মধ্যে স্ট্রোকের প্রবণতার কারণ হিসেবে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো-সায়েন্স হাসপাতালের অধ্যাপক ডা. মো. বদরুল আলম বলেন, স্ট্রোক বয়স্কদের রোগ হলেও এটি যে কোনো বয়সে হতে পারে। তবে অনেক কারণে তরুণদের স্ট্রোক হয়। আগে বলা হতো, স্ট্রোক বয়স্কদের অসুখ কিন্তু এখন তৃতীয় বিশ্বে এবং সমগ্র বিশ্বে স্ট্রোক শুধু বয়স্কদের অসুখ নয়; স্ট্রোক যে কোনো বয়সের যে কোনো লিঙ্গের যে কোনো দেশেই যে কোনো কারণে হতে পারে।

editor

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *