নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিতিশীলতা

নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিতিশীলতা

আমাদের বাজার কোনো নিয়ম-নীতি মানে না। নৈতিকতার অভাবও এখানে প্রকট। সুযোগ পেলেই ভোক্তার পকেট কাটা হয়। আর এ জন্য ব্যবসায়ীদের অজুহাতের অভাব হয় না।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, আমদানি বাধাগ্রস্ত হওয়া, তেলের মূল্যবৃদ্ধি ও জাহাজে পরিবহনের খরচ বেশি হওয়া, ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমে যাওয়া- এমনই আরো কত কি! কিন্তু যেসব পণ্য আমদানি করা হয় না, দেশেই উৎপাদিত হয়- সেগুলোর দাম বাড়ে কেন? ভোক্তাদের এই প্রশ্নের উত্তর কেউ দেয় না। ধরা যাক, কৃষিপণ্য আলুর কথাই। চাহিদার পুরোটাই দেশে উৎপাদিত হয়। এক মাসেরও বেশি সময় ধরে এর দাম কেবলই বাড়ছে।
সরকার দাম নির্ধারণ করে দিলেও তা মানা হয় না। অবশেষে সরকার আমদানির অনুমতি প্রদান করে। আমদানি করা আলু দেশে ঢুকতে শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে দাম কমতে শুরু করেছে। একই পরিস্থিতি দেখা গেছে ডিমের ক্ষেত্রেও।
কেন এমন হয়? জানা যায়, মৌসুমে যখন আলু উৎপাদিত হয়, তখন আলুর দাম ২০ টাকার নিচে, কখনো ১০ টাকার নিচে নেমে যায়। অনেক সময়ই উৎপাদনকারী কৃষকের উৎপাদন খরচও ওঠে না। তখন সস্তা দামে এগুলো কিনে নেন মজুদকারী ব্যবসায়ীরা। হাজার হাজার টন আলু কিনে হিমাগারে রেখে দেন। মৌসুমের আলু কমে এলে হিমাগার থেকে আলু বাজারে আসে।
তখনই মজুদকারীদের সিন্ডিকেট দাম বাড়িয়ে দেয়। সাম্প্রতিক আলু সংকটেরও কারণ এটি। সরকার হিমাগারগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে পাইকারি দাম নির্ধারণ করে কেজিপ্রতি ২৭ টাকা এবং খুচরায় ৩৫-৩৬ টাকা। আলুর কেনা দাম, হিমাগারে রাখার খরচ ও মুনাফা ধরেই এই দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু সেই দামে আলু বিক্রি করতে চাননি ব্যবসায়ীরা। খুচরায় আলুর দাম ৮০ টাকায় উঠে যায়। অথচ আমদানির পর তা আবার নি¤œমুখী হতে থাকে। বাজার স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত ডিম ও আলু আমদানি অব্যাহত রাখার পরামর্শ দিয়েছেন অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের বাজার পর্যালোচনায় গঠিত জাতীয় কমিটির সদস্যরা। গত মঙ্গলবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে কমিটির এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে আমদানির প্রভাব নিয়েও আলোচনা হয়। সাধারণত ফাল্গুন-চৈত্র মাসে নতুন আলু তোলা হয়। আর আগাম জাতের কিছু নতুন আলু এরই মধ্যে সামান্য পরিমাণে বাজারে আসতে শুরু করেছে। অতিরিক্ত পরিমাণে আমদানি হলে এবং তা বাজারে থেকে গেলে আলুর দাম খুব বেশি কমে যেতে পারে। এতে কৃষকরা বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন। কৃষকদের স্বার্থে সেই দিকটিও বিবেচনায় রাখতে হবে। এসব বিবেচনায় জাতীয় কমিটি যেসব সুপারিশ করেছে তার মধ্যে আছে কৃষিপণ্যের আমদানি একেবারে বন্ধ না রেখে মৌসুমভিত্তিক শুল্কব্যবস্থা চালু করতে হবে। কৃষিপণ্যের উৎপাদন সময়, সংগ্রহকাল ও খরা মৌসুম বিবেচনায় নিয়ে একটি পঞ্জিকা তৈরি করা এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। এছাড়া ফসল উত্তোলনের সময় মজুদ বা সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো প্রস্তুত করার ওপরও গুরুত্ব দিতে হবে।
আমরা মনে করি, নিত্যপণ্যের বাজার স্থিতিশীল রাখার জন্য আরো পরিকল্পিত উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। জাতীয় কমিটির সুপারিশগুলো বিবেচনায় নিতে হবে। আমদানি অব্যাহত রাখতে হবে। পাশাপাশি টিসিবিকে আরো গতিশীল করতে হবে।

editor

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *