দেওয়ানবাগ ডেস্ক: এ বছর মর্যাদাপূর্ণ ‘গ্যালিলিও গ্যালিলেই মেডেল অ্যাওয়ার্ড ২০২৩’ পেয়েছেন মাহদী রহমান চৌধুরী। আন্তর্জাতিক এই পুরস্কার পাওয়া প্রথম বাংলাদেশি বিজ্ঞানী তিনি। ১৯৯৪ সাল থেকে পুরস্কারটি দিয়ে আসছে ইতালিভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল কমিশন ফর অপটিক্স (আইসিও)। প্রতিকূল পরিস্থিতিতে অপটিক্যাল বিষয়ে অসামান্য গবেষণাকর্মের স্বীকৃতি হিসেবে প্রতিবছর বিশ্বের একজন বিজ্ঞানীকে পুরস্কারটি দেওয়া হয়।
এ বছর অপটিক্যাল এবং কোয়ান্টাম মেকানিক্যাল ম্যানিপুলেশন বিষয়ে গবেষণায় বিশেষ অবদানের জন্য মাহদী এই পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন। পুরস্কার হিসেবে বিজ্ঞানী গ্যালিলিও গ্যালিলির পোর্টেটসংবলিত পদক এবং এক হাজার মার্কিন ডলার পাবেন তিনি। এরই মধ্যে ইন্টারন্যাশনাল কমিশন ফর অপটিক্সের গোল্ডেন বুকে তাঁর নাম উঠেছে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র ছিলেন মাহদী। বুয়েটে অধ্যয়নকালে গবেষণায় মনোনিবেশ করেছিলেন। তখন মেটা ম্যাটেরিয়াল দিয়ে তৈরি প্যাঁচ অ্যান্টেনার সাইজ ছোট করার ওপর তাঁর কিছু গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছিল আইইটি মাইক্রোওয়েব অ্যান্ড অ্যান্টেনা জার্নাল, প্রগ্রেস ইন ইলেকট্রনিকসের মতো বৈজ্ঞানিক জার্নালে। ফলে মাস্টার্স ডিগ্রি ছাড়াই সরাসরি পিএইচডি করার সুযোগ পেয়েছেন ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুরের তড়িৎ ও কম্পিউটার কৌশল বিভাগে। তাঁর পিএইচডির বিষয় ছিল অপটিক্স অ্যান্ড ফনোটিক্স।
আলো এবং আলো ফেলে বস্তুর নতুন সব চরিত্র ও তাদের নিয়ন্ত্রণের ওপর গবেষণা শুরু করেছিলেন তিনি। পিএইচডির পর ২০১৭ সালে যোগ দিয়েছেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে। এখন তিনি বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক।
পিএইচডির সময় থেকে আলোর সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বৈশিষ্ট্য কাজে লাগিয়ে একের পর এক তাক লাগানো সব গবেষণা করে যাচ্ছেন তিনি। এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক জার্নালে তাঁর ৪৭টি গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।
নেচার পাবলিশিং গ্রুপের লাইট : সায়েন্স অ্যান্ড অ্যাপ্লিকেশনস এবং এসিএস ন্যানো এই দুই আন্তর্জাতিক জার্নালে ২০১৫ ও ২০১৭ সালে প্রকাশিত তিনটি গবেষণা নিবন্ধের অন্যতম লেখক তিনি। এখন তিনি গবেষণা করছেন অপটিকস অ্যান্ড ফটোনিকস, কোয়ান্টাম মেকানিক্স, কোয়ান্টাম কম্পিউিটিং, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এই চারটি ভিন্ন বিষয় নিয়ে। আন্তর্জাতিক জার্নালে তাঁর ৪৭টি গবেষণা নিবন্ধ ছাড়াও এসব বিষয়ে রয়েছে তাঁর ১০টি রেফারড কনফারেন্স আর্টিকল। এ ছাড়া ‘আল্ট্রাওয়াইডব্যান্ড অ্যান্ড শর্ট ইলেকট্রোম্যাগনেটিক পালস’ বইয়ে তাঁর লেখা একটি চ্যাপ্টারও রয়েছে। যেটি প্রকাশিত হয়েছে স্প্রিঞ্জার পাবলিকেশনস থেকে। গুগল স্কলারে মাহদীর প্রকাশনাগুলো উদ্ধৃত হয়েছে ১৬৩২-বার। ‘আলো ও তড়িৎ চুম্বক’ নামে যৌথভাবে লেখা একটি বইও আছে তাঁর।
মাহদী রহমান বললেন, ‘কোয়ান্টাম মেকানিক্যাল মেটারওয়েব দিয়ে ক্ষুদ্র অণু-পরমাণুর গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ এখন আমার গবেষণার অন্যতম ক্ষেত্র।’
গবেষণাকর্মের জন্য এর আগেও স্বীকৃতি পেয়েছেন মাহদী। পেয়েছেন আন্তর্জাতিক গবেষণা অনুদানও। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, ইতালির ‘দ্য ওয়ার্ল্ড একাডেমি অব সায়েন্স (টিডাব্লিউএএস) ইন্টারন্যাশনাল গ্র্যান্ট ২০১৯।’ নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও রিসার্চ গ্র্যান্ট পেয়েছেন। ২০১৮ সালে ইউজিসি গোল্ড মেডেল ছাড়াও দুবার এনএসইউ রিসার্চ এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন।
২০১৮ সালে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি অপটিক্স ল্যাব প্রতিষ্ঠান করেন। অপটিকস অ্যান্ড ফটোনিকস, কোয়ান্টাম মেকানিক্স, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং, আটিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স নামে গবেষকদের নিয়ে রিসার্চ গ্র¤œপও গঠন করেন। পাশাপাশি বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়েও গবেষণাপত্র প্রকাশ করছেন নিয়মিত। তিনি বললেন, গবেষণার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে চাই।’