বিজ্ঞান ডেস্ক: করোনা-ডেঙ্গুসহ সব ধরনের টিকা তৈরির সক্ষমতা অর্জন করতে চায় বাংলাদেশ। এতে ঋণ সহায়তা দিচ্ছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। এ লক্ষ্য অর্জনে দুটি পৃথক প্রকল্প হতে নিতে যাচ্ছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এগুলো বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে ৩৭৩৭ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ৪৯৬ কোটি ৯০ লাখ এবং বৈদেশিক ঋণ থেকে ৩২৪০ কোটি ৯৪ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। ২০৩০ সালের মধ্যে প্রকল্প দুটি বাস্তবায়ন করা হবে। মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) প্রকল্প দুটি অনুমোদন দিয়েছে। ফলে শিগগিরই ঋণচুক্তি স্বাক্ষর হবে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) সঙ্গে।
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, করোনা, ডেঙ্গুসহ আরও নানাধরনের রোগের টিকা তৈরি করবে সরকার। আগামী দিনে আরও নানাধরনের ভাইরাস আসতে পারে। এ কারণে এখন থেকে প্রস্তুতি প্রয়োজন। এজন্য একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। সেখানে আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে এডিবি। এর মধ্যে অর্ধেক স্বল্পসুদে এবং অর্ধেক বাজারদরের কাছাকাছি সুদ থাকবে। এটি ভালো উদ্যোগ। এডিবি আমাদের ভালো বন্ধু।
সূত্র জানায়, ‘এস্টাবলিশমেন্ট অব এসেনসিয়াল বায়োটেক অ্যান্ড রিসার্স সেন্টার ইন গোপালগঞ্জ’ নামের প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৩১২৪ কোটি ৪০ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ৪২০ কোটি ৭৩ লাখ, এডিবির ঋণ থেকে ২৬৭৫ কোটি এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থার তহবিল থেকে ২৮ কোটি ৬৭ লাখ টাকা ব্যয় হবে। প্রকল্পটি চলতি বছর থেকে শুরু হয়ে ২০৩০ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়ন করবে এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড (ইউসিএল)। এটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে পূর্ণমাত্রায় টিকা উৎপাদন প্ল্যান্ট স্থাপন এবং ভ্যাকসিন, থেরাপিউটিক্স অ্যান্ড ডায়াগনেস্টিকস (ভিটিডি) ইউনিট স্থাপন করা হবে। এছাড়া টিকা বিষয়ে গবেষণা, উন্নয়ন ও উদ্ভাবনমূলক কার্যক্রমের জন্য একটি গবেষণাকেন্দ্র স্থাপন করা হবে। সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন শুধু দেশের মানুষের জন্যই টিকা উৎপাদন করা হবে না। এখান থেকে উৎপাদিত টিকা রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রাও আয় করা যাবে।
প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনা মহামারির সময় পুরো বিশ্ব ভ্যাকসিন ও বায়োলজিকস উৎপাদনের ক্ষেত্রে সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীতা অনুভব করেছে। এই অতিমারি মোকাবিলায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ভ্যাকসিনের চাহিদা পূরণের উদ্যোগ নেয়। বর্তমানে দুটি প্রতিষ্ঠান টিকা উৎপাদন করে, যা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। তাই সরকার ভবিষ্যৎ মহামারি ও অতিমারি মোকাবিলার পূর্বপ্রস্তুতির অংশ হিসাবে গোপালগঞ্জে ভ্যাকসিন প্ল্যান্টসহ আনুষঙ্গিক অন্যান্য বিষয়ে গবেষণাকেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে। এরই অংশ হিসাবে এডিবির মহামারি প্রস্তুতি ও প্রতিক্রিয়া তহবিল থেকে ২৫ কোটি ডলার ঋণ এবং ১০ লাখ ২৫ হাজার ডলার অনুদান হিসাবে পাওয়া যাবে। প্রকল্পের আওতায় অন্যান্য ব্যয়ের মধ্যে পরামর্শক খাতে ধরা হয়েছে ৫টি ফার্ম ও ৪ জন ব্যক্তির জন্য ১৭৯ কোটি ৬২ লাখ টাকা। এছাড়া ৫টি দেশীয় ও ৬টি বৈদেশিক প্রশিক্ষণ মিলে ধরা হয়েছে ১০ কোটি ৩৭ লাখ টাকা।
এর আগে এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর এডিমন গিন্টিং বলেছিলেন, এলডিসি উত্তরণের পরবর্তী পর্যায়ে ২০২৬ সালের পর বাংলাদেশ আর স্বল্পমূল্যে টিকা কিনতে পারবে না। তখন আন্তর্জাতিক বাজারদর অনুযায়ীই টিকা কিনতে হবে। ফলে অনেক টাকার প্রয়োজন পড়বে। এখন থেকে দেশেই যাতে বাংলাদেশ টিকা তৈরি করতে পারে, সেজন্য সক্ষমতা বাড়ানো দরকার। সেজন্যই ঋণ দিচ্ছে এডিবি।
পরিকল্পনা কমিশন জানায়, ‘স্ট্রেংদেনিং রেগুলেটরি সিস্টেম ফর ভ্যাকসিনেস, ডায়াগনেসিস অ্যান্ড থোরিপিকিউটিক্স’ নামের অপর প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬১৩ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ৪৭ কোটি ৪৯ লাখ টাকা এবং এডিবির ঋণ থেকে ৫৬৫ কোটি ৯৪ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। চলতি বছর থেকে শুরু হয়ে ২০২৮ সালের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করবে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। প্রকল্পের আওতায় সব ধরনের পরীবিক্ষণ সুবিধাসহ একটি আন্তর্জাতিক মানের ল্যাবরেটরি কমপ্লেক্স স্থাপন করা হবে। এছাড়া ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য জনবলকে দক্ষ ও উন্নত মানবসম্পদে পরিণত করতে ট্রেনিং সেন্টার তৈরি হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রকল্পটি প্রস্তাব পাওয়ার পর ২৯ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা। কিন্তু স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ সময় স্বল্পতা এবং এডিবির সঙ্গে দ্রুত ঋণচুক্তির বাধ্যবাধকতা থাকায় পিইসি সভার সব সুপারিশ প্রতিপালন করতে পারেনি। ফলে ৩১ অক্টোবর একনেক অনুমোদন দিলেও এখন সেসব সুপারিশ প্রতিপালন করে ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) পুনর্গঠন করা হবে।