অর্থনৈতিক প্রতিবেদক: দেশের ব্যবসার পরিবেশ উন্নয়নের পাশাপাশি বিনিয়োগ বাড়াতে সরকারের নানা পদক্ষেপ কাজে দিচ্ছে। চলতি অর্থবছরের এপ্রিল-জুন তিন মাসে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে ৩৪০২১৮.৬৩৯ মিলিয়ন বা ৩৪ হাজার ২১ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে।
বিডায় নিবন্ধিত শিল্পের ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এপ্রিল থেকে জুন- এই তিন মাসে বিডায় ২৫৯টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান নিবন্ধিত হয়েছে।
তার মধ্যে ২২৮টি শিল্প ইউনিট স্থানীয়, ২০টি শতভাগ বিদেশি এবং ১১টিতে যৌথ বিনিয়োগের প্রস্তাব রয়েছে। প্রস্তাবিত এই বিনিয়োগের মধ্যে ২,৮৫,৬৪২.৪৪১ মিলিয়ন টাকা স্থানীয় এবং ৫৪,৫৭৬.১৯৮ মিলিয়ন টাকা বিদেশি বিনিয়োগ হয়েছে। বিগত এপ্রিল-জুন ২০২২ সময়ে বিনিয়োগের মোট প্রস্তাব ছিল ২,৪৮,২১৫.৯৪৯ মিলিয়ন টাকা। সেই অনুযায়ী এ বছর মোট বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেয়েছে ৩৭.০৬ শতাংশ।
ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, গত তিন মাসে বৈদেশিক বিনিয়োগে ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প খাতে সর্বাধিক বিনিয়োগ প্রস্তাব পাওয়া গেছে। এছাড়া সার্ভিস শিল্প খাত, প্রিন্টিং অ্যান্ড পাবলিশিং শিল্প খাত, ফুড অ্যান্ড অ্যালাইড শিল্প খাত এবং বিবিধ শিল্প খাতেও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বিনিয়োগ প্রস্তাব রয়েছে। আলোচ্য তিন মাসে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষে (স্থানীয় ও বৈদেশিক) নিবন্ধিত সর্বমোট ২৫৯টি শিল্পে নতুন করে মোট ৫৭,১৪৫ জনের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়।
এদিকে ২০২২ সালে দেশে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) প্রবাহ ২০ শতাংশ বেড়ে ৩৪৮ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে।
এটি ১৯৯০ সালের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এফডিআই। এর আগে ২০১৮ সালে সর্বোচ্চ ৩৬১ কোটি ডলারের এফডিআই এসেছিল।
২০২২ সালে সারা বিশ্বে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ কমলেও বাংলাদেশে বেড়েছে। জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন বিষয়ক সংস্থা আংকটাডের সর্বশেষ বিশ্ব বিনিয়োগ প্রতিবেদন ২০২৩-এ এই তথ্য উঠে এসেছে। স্বল্পোন্নত দেশগুলোর মধ্যে এফডিআই পাওয়ার দিক থেকে বাংলাদেশ এগিয়ে।
সামগ্রিকভাবে গত বছর এলডিসিভুক্ত দেশগুলোতে যেখানে এফডিআই প্রবাহ ১৬ শতাংশ কমেছে, সেখানে বাংলাদেশে বেড়েছে ২০ শতাংশ। তবে এফডিআই বাড়লেও সামগ্রিক এফডিআই স্টক বা মোট বিনিয়োগের স্থিতি কমেছে।
এ সময় বিনিয়োগের স্থিতি কমে দুই হাজার ১১৫ কোটি ডলারে নেমে এসেছে, যা ২০২১ সালে ছিল দুই হাজার ১৫৮ কোটি ডলার।
আংকটাডের প্রতিবেদন মতে, উন্নত দেশগুলোতেই এফডিআই প্রবাহ সবচেয়ে কমেছে। এই দেশগুলোয় এফডিআই প্রবাহ ৩৭ শতাংশ কমে ৩৭ হাজার ৮০০ কোটি ডলার হয়েছে। তবে উন্নয়নশীল দেশগুলোয় এফডিআই বেড়েছে ৪ শতাংশ।
আংকটাড বলছে, গ্রিনফিল্ড বা নতুন প্রকল্পে বিনিয়োগের ঘোষণা ১৫ শতাংশ বেড়েছে। বিশ্বের প্রায় সব অঞ্চলেই তা বেড়েছে। ইলেকট্রনিকস, সেমিকন্ডাক্টর, অটোমোবাইলসহ যেসব খাত সরবরাহব্যবস্থার জটিলতার কারণে ভুগছিল, সেগুলোতেই সবচেয়ে বেশি গ্রিনফিল্ড বা নতুন বিনিয়োগের ঘোষণা এসেছে।
বিশ্বে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ বাড়ছে। তবে সৌর ও বায়ু বিদ্যুৎ খাতে বিনিয়োগ বাড়লেও গতি কমেছে। যেমন ২০২১ সালে যেখানে এই দুই খাতে বিনিয়োগ বেড়েছিল ৫০ শতাংশ হারে, যা গত বছর কমে ৮ শতাংশে নেমেছে।