চুয়াডাঙ্গা সংবাদদাতা: নারীদের মাথা আঁচড়ানোর পর ফেলে দেওয়া চুল রপ্তানি হচ্ছে চীনে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, চুয়াডাঙ্গা থেকে প্রতিদিন ১ টন চুল রপ্তানির উদ্দেশ্যে ঢাকায় পাঠানো হয়। বছরে ৪ শতাধিক কোটি টাকার চুল ওই জেলা থেকে সরবরাহ করা হয়। এলাকাবাসী জানায়, চুলের ব্যবসায় সাফল্যের পর জেলার সীমান্তবর্তী এসব গ্রামে কমে এসেছে চোরাচালান।
ব্যবসায়ীরা আরও বলছেন, চীনের বাজারে এসব চুলের চাহিদা রয়েছে। হকাররা বাড়ি বাড়ি ঘুরে চুল সংগ্রহ করেন। তারা তা বিক্রি করেন পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে। তারপর প্রক্রিয়াকরণ শেষে এসব চুল পাঠানো হয় ঢাকায়।
জেলার দামুড়হুদা উপজেলা ঘুরে দেখা যায়, কুতুবপুর, কার্পাসডাঙ্গা, মুন্সিপুর, মুক্তারপুর, দর্শনা, চন্দ্রবাস, পীরপুরকুল্লা, ঠাকুরপুরসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রামে চুল প্রক্রিয়াকরণে ৪ শতাধিক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পৃক্ত ২৫-৩০ হাজার মানুষ। এ শিল্পে ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে স্থানীয়দের। পরিবারের কাজ করেও চুলের গুছি ছাড়িয়ে বাড়তি আয় করছেন এসব এলাকার নারীরা। চুল ব্যবসা করে অনেক বেকার যুবক হয়েছেন স্বাবলম্বী।
চুল ব্যবসায়ীরা জানান, ২০০৯ সালে চুয়াডাঙ্গার কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে শুরু হয় নারীদের মাথার ফেলে দেওয়া চুল কেনাবেচা। হকারদের মাধ্যমে চুল কিনে ক্রেতারা নিয়ে যেতেন ঢাকায়। প্রথম দিকে ছিল নানা প্রতিবন্ধকতা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ‘ভারত থেকে পাচার হয়ে আসা’ কিংবা ‘ভারতে পাচারের উদ্দেশ্যে সংগ্রহ করা’ সন্দেহে আটক করত এসব চুলের চালান। এখন তা অনেকটা কমে এসেছে। চুল ব্যবসায়ী আহসান হাবীব বলেন, সীমান্ত এলাকার এসব গ্রামে চুল বাণিজ্যের প্রসারের ফলে কমে এসেছে চোরাচালান। বন্ধ হয়েছে মাদকের বেচাকেনা। প্রশাসনও এসব ব্যবসায়ীকে করছে সহযোগিতা। ব্যবসায়ী মোহাম্মদ শাহজামাল বলেন, চুয়াডাঙ্গা জেলা থেকে প্রতিদিন ১ টন চুল রপ্তানির উদ্দেশ্যে ঢাকায় পাঠানো হয়; যার দাম কমপক্ষে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা। এসব চুল ঢাকায় চীনা ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করা হয়। স্থানীয় একতা চুল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সহিদ বিশ্বাস বলেন, ক্রেতারা চুল কিনে নিয়ে যান চীনে। সেখানে তৈরি হয় মেয়েদের উন্নতমানের পরচুলা, টুপি। ব্যবসায়ীরা ফেলে দেওয়া চুল বিক্রি করে নিয়ে আসছেন বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এ ব্যবসার আরও প্রসার ঘটতে পারে।