কোরবানির মাংস দিয়ে ঢাকার লোকেরা কী কী খাবার রান্না করতেন, সে সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায় এশিয়াটিক সোসাইটি প্রকাশিত ঢাকাই খাবার বইতে। বটি কাবাব, কলিজি কাবাব, তিল্লিভুনা, গুরদা ভুনা, কিমা, মগজভুনা, নেহারি, কোফতা, চাপ, খাসির কল্লা রান্না, শিক কাবাব, গরুর কুঁজের মাংসের কাবাব-এসব হামেশাই রান্না হতো।
ঢাকাই খাবার ও খাদ্য সংস্কৃতি বইয়ে পুরান ঢাকার বনেদি পরিবারের সন্তান সাদ উর রহমান লিখেছেন, কোরবানির মাংস দিয়ে কালিয়া, রেজালা, কোরমাসহ সব পদের খাবারই রান্না হতো, যা খাওয়া হতো রুটি বা পোলাওসহযোগে। কথাপ্রসঙ্গে তিনি আরও লেখেন, এখনো এ রীতির খুব বেশি রকমফের ঘটেনি। ঈদে পুরান ঢাকায় আরেকটি বিশেষ খাবার তৈরি হয়, তা হলো বাকরখানি রুটির ঝুরা মাংস।
কোরবানিসহ বিভিন্ন উৎসবের সময় কোপ্তা বা কোফতা তৈরি হয় হরেক রকম। হাকিম হাবিবুর রহমান তাঁর ঢাকা: পঞ্চাশ বছর আগে গ্রন্থে লিখেছেন, ‘ঢাকায় যেভাবে কোফতা তৈরি হয়, তা অন্য কোনোখানে খুব কমই দেখা গেছে। কাঁচা গোশতের কোফতা, সিদ্ধ গোশতের কোফতা, কাঁচা-সিদ্ধ গোশতের মিশ্রিত কোফতা, খাস্তা কোফতা, কোফতার কালিয়া, কোফতার কোরমা-বুন্দিয়া অর্থাৎ মটরদানা পরিমাণ থেকে শুরু করে দুই সেরি পযন্ত কোফতাও তৈরি হয়।
ঢাকা: পঞ্চাশ বছর আগে নামের এই বই প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৪৯ সালে। এই বইয়ে উনিশ শতকের শেষার্ধ ও বিশ শতকের প্রথমার্ধের ঢাকার সাংস্কৃতিক ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে।
ঈদের তৃতীয় দিন রাতে অনেক পরিবারে বানানো হতো শিক কাবাব। পরিবারের কর্তারাই এক রাতের জন্য বাবুর্চিগিরি করতে গিয়ে যাঁর যেভাবে খুশি মসলা মাখিয়ে সেঁকতেন, শিকে ঠিকমতো গাঁথতে না পেরে কিছু মাংস ফেলে দিতেন আগুনে। কারও কাবাব থাকত কাঁচা আবার কারওটা পোড়া। এসব নিয়ে হইচই, ঠাট্টা-তামাশাও কম হতো না। গরম গরম পরোটা দিয়ে শিক কাবাব খেয়ে অনাবিল আনন্দে ঈদের সময়টা ফুরাত। এখনো অনেক পরিবারে এ রকম আনন্দ-আয়োজন আছে।