দেওয়ানবাগ ডেস্ক: প্রধান কিছু ফসল উৎপাদনে বাংলাদেশের অগ্রগতি বেশ ভালো।
আলু: দুই দশক আগে আলু উৎপাদনে বাংলাদেশ ছিল ২০তম দেশ। এরপর কানাডা, তুরস্ক, পোল্যান্ডের মতো ১৩টি দেশকে একে একে পেছনে ফেলে ৭ নম্বরে উঠে এসেছে বাংলাদেশ। এফএওর তথ্য বলছে, ২০২১ সালে বাংলাদেশে আলু উৎপাদিত হয়েছে ৯৮ লাখ টন।
মরিচ (শুকনা) উৎপাদনে ভারতের পরই বাংলাদেশের অবস্থান। এক দশকে চীন ও থাইল্যান্ডকে পেছনে ফেলে মরিচ উৎপাদনে দ্বিতীয় অবস্থানে উঠেছে বাংলাদেশ।
চাল: চাল বাংলাদেশের মানুষের প্রধান খাদ্য। চার দশকের বেশি সময় ধরে চাল উৎপাদনে বাংলাদেশ ছিল চতুর্থ অবস্থানে। ২০২০ সালে ইন্দোনেশিয়াকে পেছনে ফেলে তৃতীয় অবস্থানে ওঠে বাংলাদেশ। শীর্ষে রয়েছে চীন ও ভারত।
মসুর ডাল: স্বাধীনতার পর মসুর ডালের উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বের শীর্ষ দশে ছিল। পরে বাংলাদেশ পিছিয়ে যায়। অবশ্য এখন যুক্তরাষ্ট্র, ইথিওপিয়া, রাশিয়া ও চীনকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশ ষষ্ঠ অবস্থানে উঠেছে।
ভৌগোলিক অবস্থান, আবহাওয়া ও ভূমির ধরনের কারণে আমাদের দেশে বেশির ভাগ ফসলের উৎপাদন বাড়ছে। সরকারও কৃষিতে ভর্তুকি দিচ্ছে।
উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেক পণ্য আমদানিতে বাংলাদেশের ব্যয় কমেছে। এ ক্ষেত্রে পেঁয়াজের উদাহরণ দেওয়া যায়। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে, ২০২১-২২ অর্থবছরে মসলাজাতীয় এই পণ্যের উৎপাদন ২৫ লাখ টন ছাড়িয়েছে, যা ছয় অর্থবছর আগের তুলনায় ৪৫ শতাংশ বেশি। পেঁয়াজ ও সমজাতীয় পণ্য উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে সপ্তম। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) হিসাবে, ২০১৮ সালে দেশে প্রায় ১২ লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি হয়। তবে উৎপাদন বাড়তে থাকায় আমদানি কমেছে। এখন বছরে সাত লাখ টনের মতো পেঁয়াজ আমদানি হয়।
পেঁয়াজ আমদানি কমায় বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হচ্ছে। বিপরীতে সয়াবিন বীজ, আখ ও তুলার মতো পণ্য উৎপাদন কম হওয়ায় আমদানিতে বিপুল ব্যয় করতে হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরে শুধু ভোজ্যতেল ও চিনি আমদানিতেই বাংলাদেশকে ৪১৭ কোটি ডলার ব্যয় করতে হয়েছে। তুলা আমদানিতে ব্যয় হয়েছে ৪৪৪ কোটি ডলার। ডলার-সংকটের কারণে এখন কিছু পণ্যের আমদানি ব্যাহতও হচ্ছে।
কৃষি ও প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্য রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ও করছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হিসাবে, ২০২১-২২ অর্থবছরে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানিতে আয় হয়েছে প্রায় ১১৩ কোটি মার্কিন ডলার। সবজি, শুকনা খাবার, মসলা, সুগন্ধি চাল ইত্যাদি কৃষি ও প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্য রপ্তানি করে আয় হয়েছে ১১৬ কোটি ডলারের বেশি।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি ব্যবসা ও বিপণন বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘বাংলাদেশে সামগ্রিক অর্থনীতির মতো কৃষিতেও রূপান্তর ঘটছে। অল্প জায়গা নিয়ে উৎপাদনে বিশ্বের শীর্ষ দশে অনেকগুলো ফসল স্থান পাওয়া ভালো খবর। তবে এই খবরে বেশি আত্মতুষ্টিতে ভোগার সুযোগ নেই। মাথাপিছু ভোগের হিসাবে চাল ও আলু ছাড়া অন্যান্য ফসলে আমরা বেশ পিছিয়ে আছি।’
জাহাঙ্গীর আলম আরও বলেন, ‘সরকার পাঁচ বছর মেয়াদি যে উদ্যোগ (আমদানিনির্ভরতা কমাতে বড় প্রকল্প) নিয়েছে, তা গুরুত্বের সঙ্গে বাস্তবায়ন করতে হবে। এই উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে আরও অনেক ফসলে মাথাপিছু ভোগের হিসাবেও শীর্ষ দশে যেতে পারব আমরা। সে জন্য চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।’