প্রাণের মদীনা

প্রাণের মদীনা

সুহাইল আহমদ: মদীনা। নবিজির শহর। প্রিয়নবি (সা.)-এর জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়গুলো পার করেছেন এ শহরে। এখান থেকে রাজ্য পরিচালনা করেছেন। রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন। সৃষ্টি জগতের জন্য শান্তি মুক্তি ও কল্যাণের বার্তা ঘোষণা করেছেন। ইসলামের পরিপূর্ণ বাণী বিশ্ববাসীর কাছে পৌঁছে দিয়ে এখানেই তিনি শায়িত হয়েছেন। তার কবরকে রওজা মোবারক বলা হয়। মদীনার সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ স্থান নবিজির রওজা শরিফ। এটি বর্তমানে মসজিদে নববির অন্তর্গত। হাদিস শরিফে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমার ওফাতের পর আমার রওজা মোবারক জিয়ারত করল, সে যেন আমাকে জীবদ্দশায় দর্শন করল।’ (বায়হাকি)। মদীনা মুমিনের প্রেমের তীর্থভূমি। মদীনা নবিজির স্মৃতির শহর। রাসুলে করিম (সা.) বলেন, ‘যে আমার রওজা জিয়ারত করল, তার জন্য আমার শাফায়াত ওয়াজিব হয়ে গেল।’ (আসান ফিকহ, পৃষ্ঠা ২৫০)। তিনি আরও বলেন, ‘যে হজ করল, কিন্তু আমার রওজা জিয়ারত করল না, সে আমার প্রতি জুলুম করল।’ (তিরমিজি)। রওজার পাশে দাঁড়িয়ে সালাম প্রদানে প্রিয়নবি সরাসরি সালাম প্রদানকারীর সালামের উত্তর দেন। খাঁটি মুমিন বান্দা ও আশেকে রাসুল তাদের অন্তর দিয়ে সালাম আদান-প্রদানের বিষয়টি উপলব্ধি করেন।

আরবি ভাষায় মদীনা বলা হয় শহরকে। মদীনার পূর্ব নাম ছিল ইয়াসরিব। রাসুলে করিম (সা.)-এর হিজরতের পর এ ইয়াসরিবের নাম পরিবর্তন করে নতুন নামকরণ করা হয় ‘মদীনাতুন নবি’ বা ‘নবির শহর’। সংক্ষেপে বলা হয় মদীনা। আরবিতে বলা হয় ‘মদীনা মুনাওয়ারা’ তথা ‘আলোক শহর’ বা আলোকিত নগরী।
নবিজি (সা.) মদীনায় যে প্রধান মসজিদটি নির্মাণ করেন, এর নাম ‘মসজিদে নববি’, যা মদীনা শরীফ নামেই পরিচিত। এ মসজিদে একাধিক্রমে ৪০ ওয়াক্ত নামাজ জামাতের সঙ্গে পড়ার ফজিলত সম্পর্কে নবি করিম (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমার মসজিদে চল্লিশ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেছে আর কোনো নামাজ কাজা করেনি, সে নিফাক (মুনাফেকি) আর দোজখের আজাব থেকে নাজাত পাবে।’ (মুসনাদে আহমদ, আত-তারগিব ওয়াত-তারহিব)। মসজিদে নববির পশ্চিম পাশের প্রবেশ পথকে বাবুস সালাম বলা হয়। এ দরজা দিয়ে মসজিদে নববিতে প্রবেশ করতে হয়। মসজিদে নববির পূর্ব পাশের বহির্গমন দরজাকে বাবে জিবরাইল বলা হয়। এখানে হজরত জিবরাইল (আ.) ওহি নিয়ে এসে প্রায়ই অপেক্ষা করতেন। রওজা শরীফ এবং এর থেকে পশ্চিম দিকে রাসুলে করিম (সা.)-এর মিম্বার পর্যন্ত স্থানকে রিয়াজুল জান্নাত বা বেহেশতের বাগিচা বলা হয়। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘আমার ঘর ও মিম্বারের মাঝখানে জান্নাতের একটি বাগান আছে। আর আমার মিম্বার আমার হাউজের ওপর অবস্থিত।’ (বুখারি ও মুসলিম)।

শাইখুল ইসলাম হযরত মাওলানা সাইয়্যিদ হুসাইন আহমদ মাদানি নিজের এক লেখার মধ্যে বর্ণনা করেন রওজা মোবারকে উপস্থিতির সময় রাসুল (সা.)-এর রুহের ওপর (সালাত ও সালাম) হাদিয়া পাঠাবে এবং এ কথা অন্তরের মধ্যে রাখবে যে, তিনি সবকিছু শুনছেন এবং আমি দুনিয়ার বাদশাহের দরবারে দাঁড়িয়ে আছি। অত্যন্ত আদবের সঙ্গে থাকবে। অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা ও অপ্রয়োজনীয় মজলিস থেকে বেঁচে থাকবে। সব সময় দরুদ শরিফ, জিকির, আসকার, কুরআন তেলাওয়াত এবং নফল নামাজে মশগুল থাকবে।

editor

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *