মিজানুর রহমান
প্রেমিকদের মন ও চেতনা একই। যতই আমরা কাল বা কাঁটাতারের ব্যবধানে প্রেমিকদের মাঝে ব্যবধানের চেষ্টা করি না কেনো তারা এসব ডিঙিয়ে একত্র হবেন। বিশ্বপ্রেমের কবি মাওলানা জালালুদ্দিন রুমি (১২০৭-১২৭৩) সেই ত্রয়োদশ শতকে যে প্রেম-প্রজ্ঞা আর আধ্যাত্মিকতার বাণী পারস্য থেকে গোটা বিশ্বে ছড়িয়েছেন তা এখনও অনুরণিত হচ্ছে। বিশ শতকের বাংলার বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামও (১৮৯৯-১৯৭৬) সেই প্রেম আর আধ্যাত্মিকতার বাহক ও প্রচারক। নজরুল তাঁর কবিতায় আধ্যাত্মিকতার প্রস্ফুটন ঘটিয়েছেন। বিশেষ করে ইসলামি গান ও গজলে আধ্যাত্মিকতার জয়জয়কার ঘটিয়েছেন। নজরুলের মধ্যে বৃটিশদের বিরুদ্ধে দ্রোহ, বিক্ষোভ থাকলেও আল্লাহ্, রাসুল, পরকাল ও ইসলামি অনুষঙ্গের বিষয়ে তিনি ছিলেন অত্যন্ত কোমল ও মোলায়েম। এই কোমল ও মোলায়েম দিকটি আমরা রুমির প্রায় সকল কবিতায় দেখতে পাই। আল্লাহ্ প্রেমে মশগুল হয়ে তিনি কীরূপ দুনিয়া বিমুখ হয়ে স্রষ্টা, সৃষ্টিসহ নানা বিষয়ে কালোত্তীর্ণ কাব্য বুনেছেন। অনুরূপ আমাদের বাংলা ইসলামি গানের প্রবক্তা নজরুলও এমন ইসলামি সংগীত রচনা করেছেন যেগুলোর ভাব, ভাষা আর আধ্যাত্মিক চেতনাকে আজও কোনো ইসলামি সংগীত রচয়িতা অতিক্রম করতে পারেননি। এটি ইরানি কবিদের উত্তরাধিকার। নজরুল প্রথমে যে ফারসি কবিতা অনুবাদ করেছেন সেটি হচ্ছে রুমির মসনভির শুরুর অংশটি। সেখানে কী আধ্যাত্মিক আবহে রুমের ভাষ্যকার বনে গেছেন নজরুল, “শোন দেখি মন বাঁশের বাঁশির বুক ব্যেপে কী উঠছে সুর/সুর তো নয় ও, কাঁদছে যে রে বাঁশরি বিচ্ছেদ-বিধুর॥/কোন অসীমের মায়াতে/সসীম তার এই কায়াতে/এই যে আমার দেহ-বাঁশি, কান্না সুরে গুমরে তায়/হায়রে, সে যে সুদুর আমার/অচিন-প্রিয়ার চুমতে চায়। প্রিয়ার পাবার ইচ্ছে যে/উড়ছে সুরের বিচ্ছেদে! খোদার সাথে বিলীন হওয়া, রাসুলের শানে না’ত লেখা, ইসলামি বিষয়াবলির নান্দনিক উপস্থাপনা, জীবনদর্শন, মদিনা ও কাবা প্রীতিসহ উভয়ের কাব্য ও সংগীত জগৎ আধ্যাত্মিকতায় ঠাসা।